এস এম আজাদ, রেজোয়ান বিশ্বাস ও শেখ আব্দুল হান্নান, সোনাগাজী (ফেনী) থেকে : অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলার শাস্তি নিশ্চিত করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার করেছিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেল সে। ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী রাফি গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সে লাইফ সাপোর্টে ছিল।
রাফির মৃত্যুর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন।
এর আগে গতকাল দুপুরের দিকে বার্ন ইউনিটের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে রাফির শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান সামন্ত লাল সেন। আগের দিন মঙ্গলবার তার ফুসফুস সক্রিয় করতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায়ই অস্ত্রোপচার করা হয়।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার এ ছাত্রী মাদরাসার অধ্যক্ষ (বর্তমানে বরখাস্ত) সিরাজের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে অভিযোগ করে তার মা গত ২৭ মার্চ থানায় মামলা করছিলেন। এরপর পুলিশ সিরাজকে গ্রেপ্তার করে। এরপর দুই দিন তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ হয়েছে। অধ্যক্ষের সহযোগীরা মামলা তুলে নিতে রাফির পরিবারকে হুমকিও দিয়ে আসছিল।
গত ৬ এপ্রিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার আরবি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে যায় রাফি। পরীক্ষা শুরুর আগে হল থেকে তাকে কৌশলে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা চারজন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। সে রাজি না হওয়ায় কেরোসিন জাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে তার শরীরে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় ওই চারজন। মারাত্মক দ্গ্ধ অবস্থায় রাফিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার কারণে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে সেখানে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ঘটনার আগের রাতে মাদরাসার ‘অবৈধ ছাত্রাবাসে’ গোপন বৈঠক করেছিল অভিযুক্ত অধ্যক্ষ (বর্তমানে বরখাস্ত) সিরাজের সহযোগীরা। মামলার আসামিসহ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ওই রাতে ছাত্রাবাস থেকে বের হতে দেখেছে স্থানীয় লোকজন।
এদিকে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে অভিযুক্ত সিরাজের আরো কুকীর্তির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাঁর অপকর্মের বিষয়ে এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে।
লেখার খাতায় লড়ার অঙ্গীকার রাফির
তকাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন সোনাগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাফির বাসায় মঙ্গলবার তল্লাশি চালিয়ে তার পড়ার টেবিলের একটি খাতার দুই পাতায় সিরাজের অপকর্ম নিয়ে লেখা পান। তিনি সেগুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেন।’ রাফির চাচাতো ভাই মো. ফয়েজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লেখাটি রাফির নিজের হাতে লেখা। আমাদের সামনে পুলিশ অন্য খাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে খাতাগুলোও নিয়ে গেছে।’
ওই খাতার লেখা পাতার দুটি ছবি কালের কণ্ঠ’র হাতে এসেছে। তার একটি পাতায় লেখা আছে, ‘আমি লড়বো শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানেই তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেব যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেব যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেব ইনশাআল্লাহ।’
আরেকটি পাতায় রাফি লিখেছে, ‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিল, আমরা খারাপ মেয়ে। বোন, প্রেম করলে কি সে খারাপ??? তোরা সিরাজ উদ দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কিভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস। তোরা জানিস না, ওই দিন রুমে কি হইছে? ওনি আমার কোন জায়গায় হাত দিয়েছে এবং আরো কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে—নুসরাত ডং করিস না। তুই প্রেম করিস না। ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভাল লাগে। ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোরে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেব। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন, এ জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলের...’
ঘটনার আগের রাতে গোপন বৈঠক
মাদরাসার পুরনো ভবনের তৃতীয় তলায় হেফজখানার পাশে দুটি কক্ষে কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন বা হিসাব-নিকাশ ছাড়াই অবৈধভাবে ওই ছাত্রাবাস গড়ে তুলেছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজ। সেখানে পরীক্ষার্থীদের নাম করে তাঁর ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা থাকত।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, মাদরাসা কমপ্লেক্সের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য টয়লেট আছে সাইক্লোন শেল্টার ভবনের চার তলায়, ছাদে। ওই ছাদেই রাফি যাওয়ার পর তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। গোপনে কেউ রাফিকে বান্ধবী নিশাতের ‘বিপদের’ তথ্য দেয়। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, ছাদে বোরকা পরা আক্রমণকারীদের মধ্যে কথিত শম্পাসহ (যে নাম রাফি শুনেছে) এক বা একাধিক নারী ছিল। তবে গতকাল পর্যন্ত আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্তকারীরা। সংশ্লিষ্ট কেউ এ ব্যাপারে এখনো কোনো সূত্র খুঁজে পায়নি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসার এক শিক্ষক কালের কণ্ঠকে বলেন, শনিবার সকালে রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ফাজিলের ছাত্র নূর উদ্দিন এবং আলিম পরীক্ষার্থী নাসির উদ্দিনকে মাদরাসার ছাত্রাবাস থেকে বের হতে দেখেন। সেখানে মামলার আরেক গ্রেপ্তারকৃত আসামি আরিফুর রহমান অবস্থান করছিল বলে জানা যায়। পরীক্ষার আগে এত রাতে জ্যেষ্ঠ একজনের সঙ্গে নাসিরকে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। নূর উদ্দিন মামলা দায়েরের পর সিরাজের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামনের সারিতে ছিল।
মাদরাসার কাছের এক দোকানি বলেন, শনিবার সকালে রাফি অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সময়ই তিনি নূর উদ্দিনকে দ্রুত চলে যেতে দেখেন। তখন তিনি ডাকালেও নূর দাঁড়ানো যাবে না বলে জানায়।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রবিবার থেকে মাদরাসার পুরনো ভবনের তৃতীয় তলায় হেফজখানা ও ছাত্রাবাস বন্ধ আছে।
মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘এখানে একটি হেফজখানা আছে। তবে হোস্টেল কিভাবে চলে তা এখনো আমি জানি না।’
মাদরাসার অফিস সহকারী (যিনি সব হিসাবের কাজ করেন) সিরাজুল হক বলেন, ‘এখানে অফিশিয়ালি কোনো ছাত্রাবাস নেই। অধ্যক্ষ দুটি রুমে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এ ব্যাপারে আমি জানি না। তবে হেফজখানায় ১২ ছাত্র এবং একজন শিক্ষক আছেন। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।’
মাদরাসার একাধিক সূত্র জানায়, দুটি কক্ষে প্রতিবছরই নেতা শ্রেণির কিছু ছাত্রকে বিনে খরচে থাকার ব্যবস্থা করে দেন সিরাজ। এ ফলে তারা অনুগত হয়। এরা বিভিন্ন সময় তাঁর পক্ষ নিয়ে বিবাদে জড়ায়। শিবির ক্যাডার নূর উদ্দিন, স্বঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন শামীমসহ কয়েকজন এই সুবিধা পেয়েছে। এখনো আরিফুরসহ কয়েকজন ওই কক্ষে থাকছিল। হেফজখানার শিক্ষক আব্দুল কাদের সিরাজের তথ্যদাতা ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাবার কমিয়ে দিয়ে সিরাজের ক্যাডারদের ফাও খাবার দিতেন এবং অবৈধভাবে থাকার ব্যবস্থা করতেন। হাফেজ আব্দুল কাদের রাফি হত্যাচেষ্টা মামলার পলাতক আসামি। গতকাল তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, মাদরাসার নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা রাতে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠ’র কাছে দাবি করেন, গত শুক্রবার তিনি ১০টার দিকে গেটে তালা লাগিয়ে চলে যান। আরিফের (গ্রেপ্তারকৃত আসামি) কাছে গেটের চাবি আছে। নূর উদ্দিন, শামীমসহ কয়েকজন ছাত্রাবাসে নিয়মিত আসত বলেও জানান তিনি।
ছাত্রীদের টয়লেট শুধু ছাদেই
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব নূরুল আফছার ফারুকী ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আমিন জানান, কেন্দ্রে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কমপ্লেক্সের ভেতরে মোট পাঁচটি টয়লেট আছে। এর মধ্যে ছেলেদের টয়লেট তিনটি নিচে এবং মেয়েদের দুটি টয়লেট তিন তলার ছাদে (যার সামনে রাফির শরীরে আগুন দেওয়া হয়)। তাঁরা জানান, শনিবার সকালে কেন্দ্রে যে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন রাফি দগ্ধ হওয়ার কিছু সময় আগে তাঁরা দায়িত্বে যোগ দেন। কারণ তাঁরাই পাহারা দিয়ে প্রশ্নপত্র নিয়ে আসেন। মাদরাসায় সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ক্লাস চলছিল। ১১টি কক্ষে পরীক্ষা হলেও সাইক্লোন শেল্টারের ভবনে কোনো পরীক্ষা হয়নি। সেখানে টয়লেটের প্রয়োজনে মেয়ে পরীক্ষার্থীরা যেতে পারে।
একটি সূত্র জানায়, রাফির বক্তব্য অনুযায়ী কেউ তাকে বান্ধবী নিশাতের বিপদের কথা বলেছিল। ফলে রাফি বান্ধবীকে খুঁজতে টয়লেট যেখানে সেখানে গিয়ে থাকতে পারে। ওই ভবনে হামলাকারীদের লুকিয়ে থেকে সটকে পড়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল।
পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গতকাল মাদরাসায় দায়িত্ব পালন করছিলেন অফিস সহায়ক নূরুল আমিন ও নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ মোস্তফা। ঘটনার পর পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। তাঁরা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাইক্লোন শেল্টার ভবনের তিনতলাটি ঘটনার সময় খোলা ছিল। ভবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার তিনটি পথ আছে জানানোর পাশাপাশি দেখিয়েও দেন তাঁরা।
‘মা তুই যান না, ফিরে আয়’
আদরের মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শোনার পরপরই গতকাল বার্ন ইউনিটের সামনে বৃদ্ধ বাবা কাউসার মোহাম্মদ মুসা বুকফাটা আর্তনাদ করতে থাকেন, ‘আমার মা কই গেল রে, মা তুই যান না, ফিরে আয়।’ মা শিরিনা আক্তার বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছিলেন। জ্ঞান হারান ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। তাঁদের পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন নুসরাতের মামা সৈয়দ সেলিম। ভাগ্নের কাঁধে সান্ত্বনার হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মামা সৈয়দ সেলিম বলেন, ‘নুসরাত আমার বড় আদরের ভাগ্নি ছিল। এমন একটি মেয়েকেও যৌন হয়রানি করল অধ্যক্ষ। তারপর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। নুসরাত বড় হয়ে বাবার মতো শিক্ষক হতে চেয়েছিল। তার এই স্বপ্নকে যারা জ্বালিয়ে দিয়েছে, তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না।’
এ সময় বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ অন্য চিকিৎসকরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আশপাশের অন্যান্য রোগীর স্বজন, আনসার সদস্য, নার্স, গণমাধ্যমকর্মীরাও এ সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। গত ছয় দিন ধরে পরিবারের সঙ্গে তাঁরাও মেয়েটির সুস্থতা কামনা করে অপেক্ষায় ছিলেন।
রাফির মৃত্যুর খবর শুনে গত রাতে সোনাগাজী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের মধ্যেও কান্নার রোল পড়ে যায়। রাফিদের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তার বৃদ্ধ দাদা মোশারফ হোসেন নাতিনের জন্য কেঁদে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করছেন রাফির ছোট ফুফু রহিমা খাতুন। পাশে রাফির চাচাদের ঘরেও চলছে কান্নার রোল। বাড়িতে গতকাল রাতেও পুলিশ মোতায়েন ছিল।
যে কারণে বাঁচানো গেল না নুসরাতকে
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নুসরাতের শরীরের ৭৫ ভাগ মেজর বার্ন ছিল। এর মধ্যে ৬০ ভাগ গভীর পোড়া। তার শ্বাসতন্ত্র পোড়া ছিল। কেরোসিন নিজেই টক্সিক। এটা ফুসফুস ও ব্রেনের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। আর এই চারটিই তার মৃত্যুর প্রধান কারণ।’
রাফির চিকিৎসায় গঠন করা বোর্ডের প্রধান ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকাল থেকে মেয়েটির অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর মধ্যে একাধিকবার তার হার্ট অ্যাটাক করেছিল, তার পরও সে সার্ভাইভ করছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে সে মারা যায়। মেয়েটিকে বাঁচাতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল।’ চিকিৎসকরা জানান, নুসরাতের মৃতদেহ মর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে। পরে সকালে পরিবারের কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হবে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ