ফেনী থেকে : ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার মুক্তি চেয়ে করা একটি মিছিল ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা।
বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশে এ রকম বুকের পাটা দেখে অনেকেই হতভম্ব। আবার অনেকেই বলছেন বাংলাদেশ বলেই এটা সম্ভব। নানা জল্পনা-কল্পনার মাঝে এখন প্রশ্ন উঠেছে- কে এই অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা? কি তার পরিচয়? তিনি কি অনেক প্রভাবশালী নাকি ক্ষমতাবান? তার রাজনৈতিক পরিচয়ই বা কী?
এছাড়া নানা মহলে প্রশ্ন ওঠেছে, অধ্যক্ষের পক্ষে এই মিছিলের আয়োজক ছিল কারা এবং মিছিলে অংশ নিয়েছিল কারা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষের পক্ষে-বিপক্ষে এই কর্মসূচির নেপথ্যে ছিলেন বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে সহায়তাদানকারী দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
এছাড়া মিছিলের বিষয়ে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এরপর তার মা মামলা দায়ের করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ২৭ মার্চ সিরাজউদ্দৌলা গ্রেফতার হওয়ার পরদিন ২৮ মার্চ তার মুক্তি চেয়ে মিছিল করেছিল মাদ্রাসার সুবিধাপ্রাপ্ত বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। আর তাদেরকে উৎসাহিত করেছে পরিচালনা কমিটি ও কলেজের কিছু ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’।
এদের মধ্যে অন্যতম হলেন পৗর কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম মাকসুদ, যিনি নুসরাত হত্যাচেষ্টা মামলায় বর্তমানে পলাতক। পরে ওই মিছিলের ছবিই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এছাড়া একই সময়ে গ্রেফতার অধ্যক্ষের বিচার চেয়ে অন্য বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছিল।
মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ২৮ মার্চ দুটি মিছিল হয়েছে, সেটি আমি ফেসবুকে দেখেছি। সেখানে অধ্যক্ষের পক্ষে ও বিপক্ষে দুজন কাউন্সিলর ছিল। তাদের মধ্যে একজন মাদ্রাসার আগের কমিটির সদস্য শেখ মামুন অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অধ্যক্ষের ফাঁসি চেয়ে জিরো পয়েন্টে মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
এর বিপরীতে অধ্যক্ষের পক্ষে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ওই জিরো পয়েন্টেই মিছিল নিয়ে যায়। পরিস্থিতি দেখে আমি কাউন্সিলর মাকসুদকে ফোন দিই। সেও তখন জিরো পয়েন্টেই ছিল। এরপর সবাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যস্ত হয়ে যান উল্লেখ করে রুহুল আমিন বলেন, পরে সেদিন (৬ এপ্রিল) পরীক্ষা চলাকালীন আগুনের ঘটনাটি ঘটলো।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯ টায় না ফেরার দেশে চলে যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি (১৮)। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো গেল না। টানা ১০৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মানেন এই ছাত্রী।