ফেনী : ফেনীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামিরা আদালতে বাদীকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নুসরাতের ভাই। একই সঙ্গে নুসরাতের ভাই ও মামলার আইনজীবীকে গালি দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির জন্য চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামিসহ এ মামলায় গ্রেফতার ২১ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই নোমান ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সময় আদালতে নুসরাতের ভাই ও আইনজীবীকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন আসামিরা। বিষয়টি নিয়ে আদালতপাড়ায় উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার দিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। ওই সময় আদালতের কাঠগড়া থেকে মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই নোমান এবং বাদী পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন আসামিরা। সেই সঙ্গে তাদের হুমকি দেন তারা।
মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান জাগো নিউজকে বলেন, মামলার আসামি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা আদালতে পিবিআই ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে আমাকে, আমার পরিবার ও আমার আইনজীবীকে হুমকি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমাদের গালি দিয়েছেন তারা। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার পরিবারকে আক্রমণ করে হুমকি দিয়েছে আসামিরা।
এ বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা জানতে চাইলে নোমান বলেন, আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হবে।
বাদীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন একই অভিযোগ করে বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে আসামিরা সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনও আমাদের হুমকি দিয়েছেন। মামলার বাদী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।
একই দিন দুপুরে মামলার ২১ আসামিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে নুসরাত হত্যা মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন আদালত।
নুসরাত হত্যা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তারা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, আফসার উদ্দিন, জোবায়ের আহম্মেদ, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, জাবেদ হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহীম শরিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার উদ্দিন রানা, মহিউদ্দিন শাকিল। যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তারা হলেন- আরিফুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, কেফায়েত উল্লাহ, নুর হোসেন, আলাউদ্দিন।
নুসরাত হত্যা মামলায় মোট সাক্ষী ৯২ জন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিস্টের সাক্ষী। মামলায় সাতজন সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। এবং নুসরাত হত্যার ঘটনার ধারাবাহিক ডিজিটাল স্কেচ ম্যাপও আদালতে জমা দেয়া হয়।
নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে কারাগার থেকেই তিনি মামলা তুলে নেয়ার জন্য নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। তাতে নুসরাত ও তার পরিবার রাজি না হলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন অধ্যক্ষ।
গত ৬ এপ্রিল নুসরাত তার মাদরাসায় পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। সেখানে তার শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিন রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নুসরাতের চিকিৎসা চলে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত।-জাগো নিউজ