ফেনী: খালি বাড়ির একটি কক্ষে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে ওই বাড়ির পাহারাদার। ঘটনাচেক্র বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর স্থানীয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ মাতবররা সালিশে মেয়েটিকেই দোষী সাব্যস্ত করে। ‘পাপমুক্ত’ করতে তাকে তওবা পড়ানোর পাশাপাশি দোররা মেরে নাকে খত দেওয়ানো হয়। ধর্ষিতা হয়ে সে ‘অপরাধ করেছে’ মর্মে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়। মধ্যযুগীয় এ ঘটনা ঘটেছে ফেনীর ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও পুলিশ বলছে, তারা কিছুই জানে না।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ সালিশে উপস্থিত একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সালিশকারীরা মেয়েটিকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
গ্রামবাসী জানান, ওই কিশোরীকে গ্রামের জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বাড়ির পাহারাদার পাশের গ্রামের শফিক ওরফে কোকিল (৪০) প্রায় এক মাস আটকে রেখে নির্যাতন করে। জাহাঙ্গীর চৌধুরী সপরিবারে ঢাকায় থাকায় খালি বাড়িতে শুধু শফিক থাকত। এ সুযোগে ওই কিশোরীকে বাড়ির একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে শফিক। এ সময়ে কিশোরীর পরিবার তাকে নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে। শফিক দীর্ঘদিন বাড়ি না যাওয়ায় গত শুক্রবার তার স্ত্রী চৌধুরীবাড়িতে উপস্থিত হয়। স্ত্রীকে দেখে শফিক পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী নির্যাতিত মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
প্রথমে মেয়ের পরিবার বিষয়টি গোপন রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকাবাসী ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে চৌধুরীবাড়ি ঘেরাও করে। একপর্যায়ে ওই দিন এলাকার মসজিদ কমিটির সভাপতি কাশেম চৌধুরী, বাবুল চৌধুরী, সেলিম চৌধুরী, পশ্চিম দেবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুল হক ও প্রভাষক ফয়েজ আহাম্মদ বিষয়টি নিয়ে সালিশে বসেন। এতে নির্যাতিতার বাবাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মেয়েকে অপরাধ স্বীকার করিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ধর্ষিতা হওয়ার ‘অপরাধে’ তাকে নাকে খত দেওয়ানো হয়। খত দেওয়া অবস্থায় তাকে ২১ দোররা মেরে তওবা করানো হয়।
এ ব্যাপারে মেয়ের বাবা বলেন, মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হুজুর ডেকে মেয়েকে তওবা করিয়েছি। নির্যাতিত মেয়ের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পরপরই তাকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি কাশেম চৌধুরী জানান, বিষয়টি আমরা জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে জানিয়েছি। তিনি বাড়ি এলে পলাতক পাহাদারকে ডেকে বিচার করবেন বলে জানিয়েছেন।
অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুল হক বলেন, অপরাধ অনুযায়ী মেয়েকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসার প্রভাষক ফয়েজ বলেন, মেয়েটি লিখিতভাবে অপরাধ স্বীকার করায় তাকে লঘু শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য ওবায়েদ জানান, মেয়ের পরিবারকে বকাঝকা করায় তাকে বৈঠকে ডাকা হয়নি। অভিযোগের ব্যাপারে ছাগলনাইয়া থানার ওসি রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, তিনি অভিযোগটি শোনেননি।-যুগান্তর