এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : প্রতিরাতের মতো বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়েছিল দুই ভাই। হঠাৎ রাতে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ঘুমন্ত দুই শিশু। চোখের সামনে এভাবে দুই সন্তানকে পুড়তে দেখে শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি অসহায় বাবা-মা।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিরিঞ্চি এলাকার রনি ও পলি দম্পতির দুই ছেলে মাইদুল ইসলাম শাহাদাত (১৩) এবং রাহাদুল ইসলাম গোলাপ (৬) বসতঘরে আগুন লেগে মারা যায়। বুধবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে জানাজা শেষে দুই ভাইকে পাশাপাশি কবরে শায়িত করা হয়েছে। দৃর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি পরিবার ও স্থানীয়দের।
এখন চোখের সামনেই সন্তানদের পুড়ে ছাই হতে দেখে পাগলপ্রায় অবস্থা মৃত দুই শিশুর বাবা-মায়ের। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা কামরুল নাহার পলি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা রনি বলেন, আমার দুইটা ছেলে আনি (এনে) দেন। আর কিছু লাগবেনারে ভাই। আমার ছেলেদের হত্যার বিচার চাই।
বিলাপ করতে করতে মা কামরুল নাহার পলি বলেন, আমার ছেলেরা তখন 'ও আম্মু বাঁচাও' বলে কয়েকবার চিৎকার করে। পরে আগুনে পুড়তে পুড়তে চুপ হয়ে যায়। আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রনির বাড়িতে আগুন লাগে। ঘরের দরজা দুই দিক থেকে বন্ধ থাকায় কেউই ঘর থেকে বের হতে পারেনি। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে রনির বড় ছেলে মাইদুলের দগ্ধ মরদেহ খাটের ওপরে পাওয়া যায়। আর ছোট ছেলে রাহাদুলকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সেও মারা যায়। এ ঘটনায় মা পলিও দগ্ধ হয়েছেন।
মৃত দুই শিশুর চাচা কামরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর ফকির বাড়ির হোনা মিঞা মারা যান। পারিবারিক কবরস্থানে অনুমতি ছাড়া প্রতিবেশী জনি ও আনোয়ার তাদের স্বজনের মরদেহ দাফন করতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। তখন তার পরিবারের আনোয়ার, বাদল, রমজান ও জনি আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এই বিরোধের জেরেই পেট্রোল ঢেলে ঘরে আগুন লাগিয়ে দুই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।
আগুন নেভাতে অংশ নেওয়া স্থানীয়রা জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে তারা দেখেছেন ঘরের মূল গেইট বাইরে থেকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, যাতে কেউ বের হতে না পারে। এ থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা।
তবে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী। ওসি বলেন, গতকাল ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ওই দুই শিশুর ময়নাতদন্ত শেষে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনা কি পরিকল্পিত, না দুর্ঘটনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রতিবেশী মো. নুরুল ইসলাম রাহাত বলেন, চিৎকার শুনে আমরা দৌঁড়ে আসি। তাদের বাড়ির ফটক ভেতর থেকে লাগানো ছিল। এজন্য সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঢুকতে পারিনি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফেনী পুলিশ সুপার জাকির হাসান। পুলিশ সুপার জানান, এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। তবে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, না দুর্ঘটনা তা যাচাই করার জন্য পিবিআই’র একটি দল কাজ করছে। এছাড়া সিআইডি এবং পুলিশের বেশ কয়েকটি দল তদন্ত করছে। ঘটনাটিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।