শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৬:২৩:০৭

‘কত রাত কেঁদেছি তোর জন্য’

‘কত রাত কেঁদেছি তোর জন্য’

ফেনী : দীর্ঘ ৩৭ বছর পর বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে দেখা হলো ছেলের।  তাদের দেখা হয় জেলার ছাগলনাইয়া সীমান্তহাটে।  বৃদ্ধা সৌর বালা ২ ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের কাজীরদিঘি গ্রামে বাস করতেন তিনি।

১৯৭৯ সালে তার বড় ছেলে কাজের সন্ধানে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সমরগঞ্জে যান।  এরপর সেখানেই বিয়ে করেন তিনি।  সেখানেই থেকে যান তিনি।  ছেলেকে দেখতে বৃদ্ধার স্বামী হরিনাথ সূত্রধর ভারতে গিয়ে মারা যান।

স্বামী মারা যাওয়ার খবর শুনে স্বামী ও ছেলেকে দেখতে সৌর বালা সমরগঞ্জে যান।  সেখান থেকে আর বাংলাদেশে ফেরা হয়নি।  প্রথমে কয়েক বছর জন্মভূমি বাংলাদেশের কথা তার খুব মনে পড়তো।  

বাংলাদেশে থাকা তার অপর ছেলে জগদীশ সূত্রধরের জন্য কান্নাকাটি করতেন।  বড় ভাইকে বাংলাদেশে পাঠাতে বলতেন।  কয়েক বছর দুই ভাইয়ের মধ্যে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ হত।

এ অবস্থায় ১০-১২ বছর পর বৃদ্ধাকে জানানো হয়েছিল বাংলাদেশে তার ছেলে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছে।  কিন্তু ছোট ছেলের কথা কিছুতেই ভুলতে পারেননি বৃদ্ধা মা।  এরপরও বাংলাদেশে আসার সুযোগ হয়নি বৃদ্ধার।

ছাগলনাইয়ার মোকামিয়া ও ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তহাট চালুর কথা লোকমুখে শুনেছেন।  অনেক বাংলাদেশি এবং ভারতীয়রা কাঁটাতারের বেড়ায় বিছিন্ন হয়ে থাকলেও সীমান্তহাট চালুর পর দু’দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এসে স্বজনদের সঙ্গে সহজে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।  

এমন খবর শুনে ছেলে জগদীশকে দেখার জন্য মন ছটফট করতে থাকে বৃদ্ধা সৌর বালার।  ছেলের আর্থিক অনটনের কারণে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে ভারতে যেতে না পারলেও তার মা ও ভাই এখনো ভারতের সমরগঞ্জেই আছেন শুনেছেন।  সীমান্তহাট চালুর পর কয়েক দফা হাটে এসে স্থানীয় লোকজনের কাছে মায়ের খোঁজ নিতে থাকেন।

অবশেষে কিছুদিন আগে বৃদ্ধার এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে মাকে সীমান্তহাটে আসার জন্য খবর দেন জগদীশ।  খবর পেয়ে হাটের দিন গুনতে থাকেন সৌর বালা।  গত ৯ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ ৩৭ বছর মা ও ছেলের মিলন হয় সীমান্তহাটে।

মায়ের চলার সঙ্গী এখন লাঠি।  মাকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ছেলে।  ছেলেকে কাছে পেয়ে বৃদ্ধা মা চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘ওরে জগদীশ এতদিন কোথায় ছিলি বাবা।  কত রাত কেঁদেছি তোর জন্য।’

এতদিন পর মাকে পেয়ে ছেলে জগদীশ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মরার আগে তোকে একবার দেখার বড় আশা ছিল যে মা।
১৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে