ফরিদপুর : ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় অপহৃত কিশোর ভ্যানচালক কামরুল হাসানের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে সদরপুরের ভাষানচর ইউনিয়নের শৈলডুবি গ্রামের মজুমদারের বাজারের পাশে একটি সরিষা ক্ষেত থেকে মরদেহ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারী গ্রামের মৃত ইছহাক তালুকদারের ছেলে কামরুলকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার সরেজমিনে মরদেহ উদ্ধারের সময় দেখা যায়, নৃশংসভাবে খুন করে কামরুলের মরদেহ ফেলে রাখা হয়। তার দুই চোখ উপড়ে ফেলেছে খুনিরা। মাথা ও মুখের অধিকাংশ স্থানের চামড়া নির্মমভাবে তুলে ফেলেছে। বাম কাঁধ থেকে হাত কেটে ফেলা হয়েছে। বাম পা কেটে শরীরের পেছনে বেঁধে রাখা ছিল। বাম পায়ের কোমড় থেকে হাঁটু পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। পুরুষাঙ্গ কেটে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। নিহত কামরুলের গলিত মরদেহের বিভৎস চিত্র দেখে উপস্থিত জনতা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে।
সরিষা ক্ষেত থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের পর ঠেঙ্গামারী গ্রামে কামরুলদের জরাজীর্ণ বাড়িতে গেলে দেখা যায়, পরিবারের উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে কামরুলের মা বারবার মূচ্ছা যাচ্ছেন। পুরো বাড়িতে মানুষজন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মাত্র ১৩ বছরের এই কিশোরকে এমন নির্মমভাবে খুন করা হতে পারে এটি গ্রামবাসী কিছুতেই ভাবতে পারছেন না। ঠেঙ্গামারী গ্রামে একটি পাটখড়ির ঘরে মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে বাস করতো কামরুল। ৬ বছর আগে বাবা ইছহাক তালুকদার মারা যাওয়ার পরে এই কামরুলই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ভ্যান চালানোর পেশা বেছে নেয়। বাবার মৃত্যুর পর সংসারে চরম অভাব অনটনের কারণে তৃতীয় শ্রেণির পর আর পড়াশোনা হয়নি তার। ছয় মাস আগে ধারদেনা করে কামরুলের মা ৪০ হাজার টাকা খরচ করে তাকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনে দেন। ওই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো কামরুল। বড় ভাই কামরুলের এমন নৃশংসভাবে খুন হওয়ার বিষয়টি অবশ্য তার ৭ বছরের ছোট ভাই ইমরান সেভাবে বুঝে উঠতে পারছে না। মায়ের পাশে তাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়।
সদরপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সুব্রত গোলদার জানান, কামরুলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুরের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অপহরণের পর খুন করে মৃতদেহটি ফেলে রাখা হয়। হত্যা রহস্যের অনেকটাই উম্মোচিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খুব দ্রুত মামলার তদন্ত শেষ করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, কামরুলকে অপহরণের পরপরই তার (কামরুলের) ভ্যানটি নিয়ে বিক্রির জন্য যাওয়ার পথে গ্রামবাসী হান্নান মাতুব্বরকে (২৮) আটক করে। ওই রাতেই হান্নান মাতুব্বরসহ জাকির খাঁ (৩৫) ও নগরকান্দা উপজেলার বিল গোবিন্দপুর গ্রামের মো. বাবলুকে (৩২) আসামি করে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন কামরুলের মা আছমা বেগম। পরে হান্নানের দেয়া তথ্য মতে পুলিশ নিজগ্রামের জাকির খাঁকে (৩৫) আটক করে। মামলার অপর আসামি বাবুল পলাতক রয়েছেন।
কামরুল হাসান অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামরুজ্জামান জানান, অপহৃতের মরদেহ উদ্ধারের পর এখন অপহরণ মামলাটিই হত্যা মামলা হিসেবে পরিণত হবে। এ মামলায় এজাহারভুক্ত তিনজন আসামির মধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে।
এস আই কামরুজ্জামান আরও জানান, আটক হান্নান অপহরণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। আটক জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে জেলা সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পাঠানো হয়েছে।-জাগো নিউজ