স্পোর্টস ডেস্ক: প্রিয় খেলোয়াড়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে কত কিছুই না করেন ভক্তরা। কিন্তু তাই বলে ভালোবাসার প্রতিদানস্বরূপ কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের অনুরূপ আটটি মাঠ বানিয়ে ৩২টি দলের ফুটবলের আসর বসিয়ে প্রিয় খেলোয়াড়ের নামে ফুটবল আসরের আয়োজন চাট্টিখানা কথা নয়।
প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে এমন এক আয়োজন করে এখন রীতিমতো নিজেই আলোচনায় চলে এসেছেন ফরিদপুরের কাতার প্রবাসী যুবক মাসুদুর রহমান মাসুদ। প্রায় ৮ বছর ধরে তিনি প্রিয় খেলোয়াড়ের জন্য কিছু করার ধারণা থেকে এবারের কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেটি বাস্তবায়ন করে খুবই উৎফুল্ল। আর কাতারে স্টেডিয়ামের শ্রমিক হিসেবে পাওয়া সব টাকাই তিনি খরচ করছেন এই আয়োজনে।
শহরের বর্ধিত পৌর এলাকার ৮নং ভাজনডাঙ্গা এলাকায় টিবি হাসপাতাল মাঠের সামনের দেয়াল জুড়ে বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণকারী ৩২টি দলের পতাকা স্থাপন করেছেন তিনি।
বিশ্বকাপের মাঠের আদলে ছোট ছোট আটটি মাঠ তৈরি করা হয়েছে। এই মাঠ তৈরির কাজের জন্য প্রয়োজনীয় হাতুড়ি, কাটারসহ বিভিন্ন উপকরণও তিনি নিয়ে এসেছেন কাতার থেকে।
মাসুদের এই মাঠ দেখতে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন নানা নবয়সী নারীপুরুষ। তাদের জন্য নানান আয়োজনও করছেন তিনি। সেখানে উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ মাঠের আমেজে খেলা দেখার আয়োজন করা হয়েছে। খেলা দেখতে আসা দর্শকদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ফরিদপুর শহরের ২৬নং ওয়ার্ডের ভাজনডাঙ্গা এলাকার টিবি হাসপাতাল এলাকার মো. আবদুর রব মাস্টারের ছেলে মাসুদ। মাস্টার্স শেষ করে কম্পিউটারের ওপর তিনমাসের ডিপ্লোমা করে দেশে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে আইটি সেক্টরে চাকরি নেন।
এরপর ২০০৮ সালে ভাগ্যের অন্বেষণে শ্রমিক হিসেবে যান কাতারে। এর মাঝে অবশ্য চার বছর তিনি দেশে ছিলেন। এবারের কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণে তিনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। তখনই তার মনের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়। এরপর গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে এসে তিনি শুরু করেন তার এই বিশ্বকাপ মাঠ তৈরির কাজ।
মাসুদ বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনা এবং মেসির ডাইহার্ট ফ্যান। ছোটবেলা থেকেই তার জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। এবার যখন কাতারে বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামের শ্রমিকের কাজ করি তখনই এই চিন্তা মাথায় আসে। তারপর সবগুলো স্টেডিয়াম ঘুরে সেগুলোর ছবি এনে দেশে এসে এলাকার মাঠে সেই আদলে তৈরি করেছি এসব স্টেডিয়াম।’
তিনি বলেন, ‘মেসি বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় এতে কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বা যে কারণেই হোক বিশ্বকাপে মেসি ব্যর্থ। যদি এবারের ২০২২ বিশ্বকাপেও সে ব্যর্থ হয় তাহলেও আমাদের ভালবাসার কোন কমতি হবে না।
আমরা তার জন্য এখানে আলাদা করে একটি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরের আয়োজন করবো। এর জন্যই আমরা এই আসরের নাম দিয়েছি মেসি স্পেশাল ওয়ার্ল্ড কাপ। আমরা চেষ্টা করবো ৩২টি দলের অংশগ্রহণে এই খেলার আয়োজন করতে। আর এই কাপটি স্পেশালি নির্ধারিত থাকবে মেসির জন্য।’
ইতোমধ্যে সেখানে উৎসবমুখর আমেজও তৈরি হয়েছে। শুধু খেলা দেখাই নয় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনারও ইচ্ছে রয়েছে আয়োজকদের।
মাসুদ জানান, সবাই আমাকে সহায়তা করেছেন। এলাকার ভাবিরা বলেছেন কেউ যদি দূর থেকে আসে তাকে একবেলা তারা খাওয়াতে পারবেন। তিনি জানান, প্রথমদিকে অনেকে নানা কথা বললেও এখন অনেকেই তার এই কাজের প্রশংসা করছেন।
মেসিকে উপলক্ষ করে আমার এই উদ্যোগ। এটি আমার কাছে একধরনের যুদ্ধ। আমি এর মাধ্যমে এলাকার সকলকে এক সুতোর বাঁধনে এনে সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার সকল বয়সীদের মাঝে এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। শুধু খেলা দেখায় নয় এই উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে সবক্ষেত্রে এমনটিই বলছেন তারা। স্থানীয়রা জানান, মাসুদের এই উদ্যোগ খেলাধুলার প্রসারের পাশাপাশি যুবকদের মাদক ও মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখতে পারবে।