এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বালুমহল ইজারার দরপত্র বাণিজ্যের (নিকো) টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ।
আজ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি মাহমুদুল হাসান। এর আগে বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাত সোয়া ১০টার দিকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আহতরা হলেন- বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা (৩২) ও মা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী রিয়াজ মৃধা (৪৭)। তারা গুরুতর আহত হয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় ১৪৩২ সালের ১ বছরের জন্য ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত ঘোষপুর ইউনিয়নের মধুমতি নদীর লঙ্কারচর বালুমহল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়।
এ ইজারায় ১৫টি দরপত্র বিক্রয় হলেও দরপত্রদাতাদের মাঝে সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্রদাতাদের মাঝে টাকা ভাগাভাগির কথা থাকলেও নিকো-বোর্ড দরপত্র দাতা জুয়েল বিশ্বাসকে পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে বলে।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে ‘মা ফার্মেসি মার্কেট’ চত্বরে এক শালিস বৈঠক বসে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন আলম চান, সাবেক পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা। শালিস বৈঠক শুনানির সময় আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে সেখানে থাকা লোকজন।
এ সময় তার কাছে থাকা দেশীয় অস্ত্রটি কেড়ে নিতে শালিসে বসা বিএনপির লোকজনের ধস্তাধস্তি হয়। কিছুক্ষণ পরেই জামায়াত কর্মী জুয়েলের ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মা ফার্মেসি চত্বরে আক্রমণ করেন।
এ সময় বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা ও মা ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারী রিয়াজ মৃধা মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনার কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পৌর বাজারের লোকজন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে কাঠের বাটাম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায় বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে ‘মা ফার্মেসি মার্কেট’ চত্বরে বালু মহলের দরপত্র নিয়ে চলা এক শালিস বৈঠকে।
এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া বিএনপি নেতা রাসেল আহমেদের ছোট ভাই কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার মাথা ফেটে যায় এবং আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন মা ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারী রিয়াজ মৃধা (৪৭)।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দরপত্রদাতা পৌর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জুয়েল বিশ্বাস বলেন, ‘বালুমহলের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সে টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মাসিতে ডেকে নেয় রাসেল। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে আমার ওপর আক্রমণ করে। খবর পেয়ে আমার গ্রামের ভাই-ব্রাদার আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেলের ভাই রবিনকে পেয়ে তারা (সংঘবদ্ধ দল) তাকে মারধর করে।’
জুয়েল বিশ্বাস জামায়াত কর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা নিয়ামুল হাসান।
পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার জুয়েল বিশ্বাস আমার নিকট চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে সে পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশে লোকজন প্রস্তুত রেখে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসে। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালায়। জীবন রক্ষার্থে আমি পালিয়ে গেলেও আমার ছোট ভাই মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নিলে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে তারা।’
বোয়ালমারী পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ মৃধা বলেন, ‘রাসেলের সঙ্গে জুয়েল বিশ্বাসের দেনা পাওনা নিয়ে ফোনে কথা কাটাকাটি হলে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মাসিতে আসে জুয়েল বিশ্বাস। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারালো অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এ সময় পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর জুয়েল ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল নিয়ে আমাদের ফার্মেসিতে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমার বড় ভাই ও ছাত্রদলের কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা মারাত্মক আহত হয়।’
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় হামলায় আহতরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’