এনামুল হক : সৌদি আরব থেকে চম্পা ফোনে বলেন, ‘ভাইয়া আমাকে বাঁচান’। এ কথা বলার পরই লাইনটি কেটে যায়। এরপর থেকে চম্পার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। আমরা একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য দুইটা ডাল-ভাতের টাকা উপার্জন করতে আমার মেয়েকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। এখন তারা আমার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। মেয়ের কোনো সন্ধান দিচ্ছে না।
তারা আমার মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে। বিদেশ পাঠিয়ে মেয়ে চম্পা বেগমের খোঁজ না পেয়ে মা রোকেয়া বেগম সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন। নিখোঁজ মেয়ে চম্পা বেগমের (২৫) বাবা বৃদ্ধ আবদুল মালেক শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্তের নাম মোবারক হোসেন (৪৫)। সে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ডোয়াইনগর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। সে একই গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের জামাতা। বর্তমানে সে তার শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করছে।
রোকেয়া বেগম বলেন, তারা আমার মেয়েকে বিদেশ না পাঠিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন মেয়ের খবর জানতে চাইলে সপরিবারে মিথ্যা মামলার হুমকি দেয়। গত ১৮ই নভেম্বর স্ত্রী, শাশুড়িসহ আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছে। চম্পা বেগমের অশীতিপর বাবা আবদুল মালেক বলেন, তার মেয়ে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। কুলফু (৫) নামে চম্পা বেগমের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। গত বছর তিনেক আগে চম্পার স্বামী আবদুল মালেক তাকে ফেলে চলে গেছে।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত মোবারক হোসেন ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের লোভ দেখায়। আমার মেয়েকে সৌদি আরবে অধিক বেতনে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়। এজন্য তার কাছে ৭০ হাজার টাকা খরচ বাবদ দাবি করে। এজন্য আমার মেয়ের পাসপোর্ট করে মোবারক হোসেনের কাছে ৪০ হাজার টাকা তুলে দিই। বাকি টাকা সৌদি আরবে চাকরি করে পরিশোধের মৌখিক চুক্তি হয়। পরে মোবারক ২৯শে সেপ্টেম্বর বিদেশ পাঠানোর কথা বলে চম্পা বেগমকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এসময় চম্পার বড় ভাই নবী হোসেনও তাদের সঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। সেখানে তারা চম্পার বড় ভাই নবী হোসেনের কাছ থেকে অলিখিত সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। সৌদি আরবে কাজের জন্য এ স্ট্যাম্প লাগবে বলে তাদের জানায়।
চম্পা বেগমের আরেক ভাই রিকশাচালক আল আমীন জানায়, বাড়ি থেকে নেয়ার সপ্তাহ দুই পর্যন্ত চম্পার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবারকের কাছে ফোন নাম্বার চাইলে নানারকম হুমকি প্রদর্শন করে। ভবিষ্যতে আমার বোনের কথা জানার চেষ্টা করলে আমাদের সপরিবারে মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং হত্যার হুমকি দেয়। অনেক কান্নাকাটির কয়েকদিন পর মোবারক হোসেন একটি ভুয়া ফোন নাম্বার দেয়। এরও কিছুদিন পর আরেকটি নাম্বার দেয়। ওই নাম্বারে ফোন করলে চম্পা শুধু একবার বলে ‘ভাইয়া আমাকে বাঁচান’। এরপর লাইন কেটে যায় এবং মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ২২শে অক্টোবর রাতে অভিযুক্ত মোবারক তার ব্যক্তিগত মোবাইল (০১৭৯০-৯৮৮৮৮১) থেকে ০১৮৬২-২৪৫১১০ নাম্বারে ফোন করে আড়াই লাখ টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিলে আমার বোনকে এনে দেবে বলে জানায়।
এ ব্যাপারে ২০শে নভেম্বর অভিযুক্ত মোবারক হোসেনের শ্বশুর বাড়িতে গেলে ওই বাড়ির কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে মোবারকের মোবাইল ফোনে (০১৭৯০-৯৮৮৮৮১) বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তা রিসিভ হয়নি। একপর্যায়ে ফোনটি সুইচ্ড অফ পাওয়া যায়।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান জানান, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য কয়েকবার অভিযানও চালিয়েছি, এখনো চেষ্টা চলছে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি তদন্তাধীন। মামলা রুজু হয়নি। মানবজমিন
১ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি