গাজীপুর থেকে : সফল রাজনীতিবিদ, একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৮০ দশকের সামরিক এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্ববায়ক, ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামানের ৬৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৫৩ সালের ২৩ জানুয়ারি গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় দক্ষিণ সোম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম (মৃত) আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম (মৃত) লিলি বিবি।
আখতারউজ্জামান চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৯-১৯৯০ সাল পর্যন্ত লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধীনে স্কুল অফ আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজে (এসওএএস) ‘দক্ষিণ এশীয় আধুনিক রাজনীতি’ বিষয়ে লেখাপড়া করে এম.এস.এস. ডিগ্রি অর্জন করেন।
একাত্তর সালের নয়টি মাসে অজস্র ত্যাগ আর রক্তঝরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আখতারউজ্জামান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর ট্রেনিং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং রণাঙ্গনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মণি’র ছোটভাই শেখ মারুফ তার অধীনেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন।
আজকের সফল জননেতা আখতারউজ্জামানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় স্কুলছাত্র অবস্থাতেই। তিনি ১৯৬৮-৬৯ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ এবং ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পরপর দুইবার জিএস নির্বাচিত হন।
১৯৮৩ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একশ বছরের ইতিহাসে আখতারউজ্জামানই একমাত্র ছাত্রনেতা, যিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুইবার জিএস এবং একবার ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। আর মাত্র এক বছর বাদেই ২০২১ সালে উদযাপিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ। আর সেই সাথে ইতিহাস হয়ে যাবেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি আখতারউজ্জামান।
আখতারউজ্জামান ১৯৭৯-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সংগ্রাম করে উঠে আসা কিংবদন্তি এই ছাত্রনেতা আশির দশকের উত্তাল সংগ্রামমুখর দিনগুলোতে সময়ের প্রয়োজনেই ছাত্রসমাজকে পথ দেখিয়েছেন। সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে তিনি এরশাদ পতনের একদফা দাবিতে পুরো ছাত্রসমাজকে নেতৃত্ব দেন।
তার নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকারের গদি যখন টালমাটাল, তখন তাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেন সামরিক শাসক এরশাদ। সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি। দুঃসময়ে দলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা এই নেতা ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০০৮ থেকে ২০১২ সাল, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে একই পদে পুনর্নিবাচিত হয়ে দলের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছেন তিনি। বিগত ২৬ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন, স্বাধীন দেশে তিনি হয়েছেন গণমানুষের সেবক। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ৭ম জাতীয় সংসদে গাজীপুর কালিগঞ্জ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। একই সময়ে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত গাজীপুর জেলা পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৬ সালে আবারও একই পদে পুনর্নিবাচিত চেয়ারম্যান হয়ে জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি। শুভ জন্মদিন উপলক্ষে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জনগণের সেবক আখতারউজ্জামানকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিবাদন।
এমটিনিউজ/এসএস