গাজীপুর থেকে: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর দলীয় প্রধানের নির্দেশে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
আগামী ১৫ মে ভোটকে সামনে রেখে যখন ঢাকা লাগোয়া জনপদটি প্রচারে জমজমাট তখন রবিবার উচ্চ আদালতের এক আদেশে স্থগিত হয়ে যায় ভোট।
যার আবেদনে এই কাজটি হয়েছে, সেই এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ এই জেলারই বাসিন্দা নন। তিনি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এই আওয়ামী লীগ নেতার আপত্তি তার ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হয়েছে। অথচ এই মৌজার ভোটাররা তার ইউনিয়নেরও ভোটার।
গত সাড়ে চার বছর ধরেই এই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করে আসছিলেন সুরুজ। গত ১০ এপ্রিলও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদকে আইনজীবী নিয়োগ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। তবে সেদিন রিটটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়।
এরপর আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানকে আইনজীবী নিয়োগ করে ৬ মে তিনি আবার আদালতে যান এবং এরপর তিন মাসের জন্য নির্বাচনে স্থগিতাদেশ আসে।
জনাব সুরুজ জানিয়েছেন, তিনি গাজীপুরে ভোট স্থগিত চাননি। তিনি চেয়েছিলেন তার ছয় মৌজায় যেন ভোট না হয়।
সুরুজ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। তার এই কর্মকাণ্ডে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়েছেন গাজীপুরে দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।
সুরুজ সম্পর্কে গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খানের বেয়াই হন। জাহাঙ্গীরের ধারণা, এই আত্মীয়তার সম্পর্কও এই রিটে আবেদনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। কারণ, আজমত নির্বাচনের শুরু থেকে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন বলে তথ্য ছিল আওয়ামী লীগে।
সুরুজ অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, আজমতের সঙ্গে আত্মীয়তার সঙ্গে এই রিটের সম্পর্ক নেই। আজমতই বরং নানা সময় আদালতে তার আবেদন নাচক হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন।
রবিবার উচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ার পর ভোটের প্রচার স্থগিত করে জাহাঙ্গীর ছুটে যান ঢাকায়। বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সন্ধ্যায় তিনি গণভবনে যান দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি নেত্রীকে সব জানালাম। নির্বাচন নিয়ে কথা বললাম। তিনি আমাকে আইনের মাধ্যমে মোকাবেলা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’
সোমবার সকালে জাহাঙ্গীর প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভায় যোগ দিতে টঙ্গীর হায়দরাবাদ যান। সেখান থেকে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে ঢাকায় যান জাহাঙ্গীর।
১৪ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে আজকের দিনে টঙ্গীতে এক শ্রমিক সমাবেশে প্রকাশ্যে গুলি করে আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভাই নুরুল ইসলাম সরকার এই হত্যার হোতা বলে আদালতে প্রমাণ হয়েছে। হাসান সরকারের ভাইসহ ছয় জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে এই মামলায়।
জাহাঙ্গীর আলমের মিডিয়া সেলের প্রধান মোহাম্মদ আলম জানান, সকালে আহসান উল্লাহ মাস্টারের কবর জিয়ারত শেষে ঢাকায় গিয়ে দলীয় শীর্ষ নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন স্থগিতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন জাহাঙ্গীর আলম।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে গাজীপুরে ভোট হওয়ার কথা ছিল। ভোটের নয় দিন আগে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজের রিট আবেদনে ভোট তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘটনায় সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ভোটে জাহাঙ্গীরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার এরই মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করেছেন। হাসান সরকার জানিয়েছেন, দলের শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তেই এই আবেদন করেছেন তিনি।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি