গাজীপুর: ছাত্রকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য গাজীপুরের এক গৃহশিক্ষক ছয়মাস ধরে পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রকে অপহরণও করে, তবে মুক্তিপণ না পেয়ে ছাত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে ওই শিক্ষক। এই গৃহশিক্ষকের নাম পারভেজ শিকদার (১৮) ও নিহত শিশুটির নাম ইকবাল রাকিন (১০)।একটি মোবাইল রিচার্জের দোকানের ময়লার ঝুড়িতে পড়ে থাকা চিরকুটের সূত্র ধরে ওই শিক্ষক ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সহযোগীর নাম ফয়সাল আহম্মেদ (১৫)।
ছয় মাস আগ থেকে করা পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশু রাকিনকে অপহরণ করে তারা। এরপর দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা না পেয়ে দুজনে মিলে শিশুটির বুকের উপর উঠে গলা চেপে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর র্যাব তদন্ত করে জানতে পেরেছে তার গৃহশিক্ষক পারভেজ শিকদারই এক সহযোগীসহ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
গত ৫ ডিসেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ফাউগান গ্রামে ইকবাল রাকিন (১০) নামে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশুকে হত্যা করা হয়। এবছর শিশুটি পিইসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
যেভাবে গ্রেফতার হল খুনিঃ
অপহরণের পর ৬ মাস আগে চুরি করে আনা রাকিনের মায়ের মোবাইল ফোনটি দিয়ে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু ফয়সাল দেখে মোবাইলে টাকা নেই। এরপর দুজন মিলে ফাউগান বাজারের রনি নামে এক ব্যক্তির ফার্মেসিতে যায়, এই ফার্মেসিতে মোবাইল ফোনেও রিচার্জ করা হয়। তবে তারা রিচার্জের জন্য মোবাইল নম্বর লেখা খাতায় নম্বর না লিখে একটি ছোট্ট চিরকুটে নম্বর লিখে দিয়ে ২০ টাকা রিচার্জ করে দ্রুত সেখান থেকে চলে আসে। এরপর রাকিনের বাবার মোবাইলে ফোন দিয়ে ফয়সাল দশলাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়।
র্যাব অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘মুক্তিপণ চাওয়ার পর ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে দেয়। আমরা কললিস্ট তুললাম, কিন্তু গত ছয়মাসে এই মোবাইল নম্বর ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু ওই ফোন নম্বরটিতে একটি নম্বর থেকে ২০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করা হয়েছে। আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। এরপর সেই নম্বরটি চিহ্নিত করলাম।
সেটি ফাউগান বাজারের একটি ফার্মেসি। আমরা দোকানে গেলাম। রিচার্জের জন্য নম্বর লেখা খাতাটির আমরা প্রতি পাতা দেখলাম, কোথাও ওই নম্বরটি নেই। এরপর ফার্মেসির মালিককে প্রশ্ন করলাম, কী কী প্রক্রিয়ায় রিচার্জ করা হয়, সে বলল, খাতায় লিখে, চিরকুটের মাধ্যমে এবং মুখেও অনেকে নম্বর বলে। এরপর তাকে বললাম, চিরকুট কী করেন, তিনি জানালেন, ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেন। এরপর আমরা ঝুড়িটি তল্লাশি করলাম সেখান থেকে চিরকুটটি পেলাম। এরপর আমরা রাকিনের স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতদের সবার সঙ্গে হাতের লেখা মেলাতে লাগলাম।
চিরকুটের লেখার নম্বরটি তাদের আত্মীয় স্বজনের কারও সঙ্গে সেভাবে মিললো না, এরপর আমরা একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করি। তাদের ডেকে ডেকে নম্বরটি লিখতে দেওয়া হয়, তখন ফয়সালের সঙ্গে মিলে যায়। তার বাড়িতে থাকা খাতার লেখার সঙ্গেও চিরকুটের সঙ্গে মিলে যায়। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পারভেজকেও গ্রেফতার করে র্যাব।’