গাজীপুর থেকে : টঙ্গীর বনমালা সড়ক ধরে এগোলে ৫-৭ মিনিটের পথ ঝর্ণা ইসলামের বাড়ি। গতকাল বুধবার বনমালা সড়ক ও ওই বাড়ির চিত্র ছিল পুরোপুরি অন্যরকম। বাড়ি ঘিরে সাজসাজ রব, চারদিকে উৎসুক জনতা।
প্রধান সড়ক থেকে বাড়ির আশপাশ সর্বত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শক্ত অবস্থান। ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৪টা। কঠোর নিরাপত্তায় চকচকে একটি গাড়িতে চড়ে ঝর্ণা ইসলামের বাড়ির সামনে আসেন নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা। ফুলের তোড়া হাতে গাড়ির দিকে এগিয়ে যান ঝর্ণা।
এর আগেই গাড়ি থেকে নেমে ঝর্ণাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন রানি। উচ্ছ্বসিত ঝর্ণা কুশল বিনিময় শেষে রানিকে নিয়ে যান নিজ নামে বাড়িতে গড়া ‘ঝর্ণা ফেব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশন হাউসে’। প্রায় ১৫ মিনিট অবস্থানকালে ঝর্ণার কারখানা ও সফলতা দেখে মুগ্ধ হন রানি। একটি ফ্লোর নিয়ে কাপড় তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
চার বছর আগেও বাংলাদেশে এসে ঝর্ণা ইসলামের এই ফ্যাশন হাউস পরিদর্শনে আসেন রানি ম্যাক্সিমা। যাওয়ার আগে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন আবারও আসবেন। গতকাল তিনি নিজের সেই প্রতিশ্রুতি রাখলেন।
ঝর্ণা ইসলাম, গাজীপুরের টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার সফল এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার নাম। ১৯৯৮ সালে ব্যাংকের পাঁচ হাজার টাকায় একটি মেশিন কিনে বুটিকের কাজ শুরু করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘ঝর্ণা ফেব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশন হাউস’। কঠোর পরিশ্রমে কয়েক বছরেই সফলতা পান তিনি।
গতকাল অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে ঝর্ণা ইসলাম বলেন, ‘রানি কারখানার পরিবেশ ও আমার সাফল্যকে সাধুবাদ জানান।’ নিজের পথচলার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৪ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। স্বামী ছিলেন বেকার। তবে অভাব না থাকলেও স্বপ্ন ছিল বসে না থেকে একটা কিছু করার।
ওই স্বপ্ন থেকেই একটি মেশিন কিনে আশপাশের নারীদের জামায় সুতার কাজ শুরু করেন। চাহিদা বাড়তে থাকায় ১৯৯৮ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি মেশিন কিনে সুতার কাজের পাশাপাশি বুটিকের কাজ শুরু করেন।
এদিকে ২০১৫ সালে ব্র্যাক ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে টঙ্গীতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। ঝর্ণার সাফল্যের গল্প শুনে তিনি তার ফ্যাশন হাউস পরিদর্শন করেন। মুগ্ধ হয়ে ফ্যাশন হাউসের ভিডিও এবং একটি স্কার্ট কিনে রানি ম্যাক্সিমার জন্য নেদারল্যান্ডসে পাঠান রাষ্ট্রদূত।
ভিডিও ও স্কার্ট দেখে রানি ঝর্ণার ফ্যাশন হাউস দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে ঝর্ণার ফ্যাশন হাউস পরিদর্শন করে মুগ্ধ হন রানি। দেশে ফিরে ঝর্ণার জন্য তিনটি মেশিন পাঠান রানি। বর্তমানে তার হাউসে মেশিনসংখ্যা ৯টি। এসব মেশিন ও অন্য ইউনিটে কাজ করেন ১৬ জন নারী।
গতকাল রানির এই পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন, পুলিশের ডিসি শরীফ, ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং টঙ্গী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আহসানুল হক।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, রানির আগমন উপলক্ষে পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দায়িত্বরত ছিলেন বিভিন্ন বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য।