এমটিনিউজ ডেস্ক : বিশ্ব মানবতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। মানুষের বিপদে-আপদে মানুষই তো এগিয়ে আসবে। এবার প্রায় সকলে অন্ধ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে এমন নজির দেখালেন এক ব্যবসায়ী।
গাজীপুর শ্রীপুর পৌরসভার উজিলাব গ্রামের হলাডিরচালা এলাকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জাকির হোসেনের মেয়ে জোনাকির বয়স ১০ বছর। তার নাম জোনাকি হলেও জন্মের পর থেকেই চোখের দীপ্তি নিভে গেছে তার। কিন্তু অদম্য মেধাবী জোনাকি স্থানীয় মক্তবের ইমামের মুখে শুনে শুনে কোরআন পড়া শিখছে। পাশাপাশি প্রাথমিকে শিক্ষার জ্ঞানও নিচ্ছে শিক্ষক-সহপাঠীদের মুখে শুনে শুনে।
শুধু জোনাকিই নয়, তার বাবাও চোখে কম দেখেন। এ ছাড়া জাকিরের বড় ভাই আমির হোসেন (৪০), বোন হাসিনা (৩০) এবং নাসরিনও (২৫) চোখে দেখেন না। আমিরের স্ত্রী শিউলী আক্তারও একচোখে একেবারেই দেখতে পান না। তবে অপর চোখে অল্প দেখতে পান। হাসিনার দেড় বছরের ছেলে মারুফ ও মেয়ে রূপাও (১৩) জন্মান্ধ।
পরিবারটির এমন অসহায়ত্বের কথা শুনে ছোট্ট জোনাকির চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেন ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন অনন্ত। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) জোনাকির ডান চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চোখের ব্যান্ডেজ খুললে জোনাকি ডান চোখে দেখার কথা জানায়।
জাকিরের মা রাশিদা জানান, তার স্বামী হোসেন আলীরও মধ্য বয়সে একবার জ্বর হওয়ার পর তার এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়। স্বামী জীবিত থাকতে তার সীমিত উপার্জনে কোনোমতে পরিবারের সদস্যদের দুমোঠো অন্ন জুটলেও তিনি মারা যাওয়ার পর অন্ধ সন্তানদের নিয়ে রাশিদা হতাশায় হাবুডুবু খান। স্বামীর নির্মাণ করা দুই কক্ষের একটি টিনশেড ও এক কক্ষের একটি মাটির ঘর থাকলেও অবস্থা জরাজীর্ণ। জীর্ণ ঘরের টিনের চাল-জানালা ভাঙা। বৃষ্টি-কুয়াশা হলে চাল গড়িয়ে পানি পড়ে ভেতরে।
তবে আমির, জাকির ও তাদের স্ত্রী-সন্তানকে ভরণপোষণ করতে হচ্ছে রাশিদাকেই। বিভিন্ন বাড়িতে কাজকর্ম করে যা পান, তা দিয়ে কোনোমতো খাবারের ব্যবস্থা হলেও তাদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার টাকা তার কাছে নেই। তিন মাস পরপর সমাজসেবা কার্যালয় থেকে যে ভাতা পান, তা তাদের এক সপ্তাহও চলে না। আমির হাটবাজারে পথে পথে ঢোল বাজিয়ে ও গান গেয়ে কিছু অর্থ উপার্জন করলেও করোনা মহামারির শুরুর পর থেকে তিনিও বেকার।
এত কষ্ট আর অভাব-অনটনের মধ্যে তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে পারে না। মাঝেমধ্যে দুচোখে সরষে ফুল দেখেন, চিন্তা করতে করতে তারও দুচোখ যেন ঝাপসা হয়ে যায়। অনেক কষ্টে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকাপয়সা সাহায্য নিয়ে সংসারের হাল ধরে চলেছেন। এ অবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংসারের অনটন দূর করতে এবং স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।