এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। দলটির হাইকমান্ডের ডাকে সাড়া দিতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে সোহেল তাজ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
এখন দেশের রাজনীতিতে একটা গুণগত পারিবর্তন আনার সময় এসেছে। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করা প্রয়োজন।
আর এই কাজ কেবল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই সম্ভব। দলের ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীদের একান্ত করে এই কাজ এখনই শুরু করা উচিত। ’
সোহেল তাজ রাজনীতিতে ফিরছেন এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একটি জাতীয় গণমাধ্যমকে সোহেল তাজ বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের সময় এসেছে। যে সুযোগ আওয়ামী লীগ নিতে পারে। ’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় কোনো এক অভিমান থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
এরপর দলীয় রাজনীতির কর্মকাণ্ড থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।
রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অন্তর্ধানে গেলেও সোহেল তাজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উত্তরসূরি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল অস্থার প্রমাণ রেখেছেন। দুই পরিবারের পারিবারিক বন্ধন ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক এখনো সুদৃঢ় রয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদ পরিবার ও দলীয় একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া আগামী বছরের শেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতর জন্য অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে বলে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন।
বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলা, দলীয় সম্মেলন ও নির্বাচন নিয়ে যখন নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় হঠাৎ করেই আলোচনায় আসে সোহেল তাজের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে সোহেল তাজের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন তার ছোট বোন মাহজাবিন আহমদ মিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের অনেকে নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্খী।
গণমাধ্যমটির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান সোহেল তাজ বলেন, ‘আমার পরিবারের একটা রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশের জন্য শ্রম ত্যাগ, এমনকি জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক। আর আমি কখনো আওয়ামী লীগের বাইরে ছিলাম না, নাই; থাকবও না।
আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি, ছিলাম; থাকব এবং বর্তমানেও আছি। কথা হচ্ছে, আমি বরাবরই বলে এসেছি, আওয়ামী লীগের যদি প্রয়োজন হয়, দেশের প্রয়োজন হলে আমাকে ডাক দিলে আমি সব সময় প্রস্তুত আছি। আমার সাধ্যমতো কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমি এই অবস্থানে আগেও ছিলাম, এখনো আছি। ’
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সবারই কর্তব্য বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ওপর এই কর্তব্য বর্তায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করা।
যাতে আগামী এক দুই তিন জেনারেশন যেন এই চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তার মানে আমাদের মানবিক পরিবর্তন দরকার, গুণগত মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করা প্রয়োজন। এটা সম্ভব হবে। '
সোহেল তাজ আরো বলেন, ‘যেই সমাজের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সেই সমাজ যেখানে, ন্যায়বিচার থাকবে, দুর্নীতি থাকবে না, অব্যবস্থাপনা থাকবে না। আওয়ামী লীগের পবিত্র দায়িত্ব সেই কাজগুলো করা।
আমার বিশ্বাস সেই কাজটা একমাত্র আওয়ামী লীগই করতে পারে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এই দেশটাকে আনেক ভালোবাসে। আমরা সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারলে সেই লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো।
আমি বিশ্বাস করি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একই জিনিস চান। আমাদের দলের ভালো মানুষ, ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। সেটার অংশ হিসেবে আমিও প্রস্তুত আছি। যদি প্রয়াজন হয় তবে আমিও একাত্ম হবো। ’
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, প্রতিটি দলের ক্ষমতার আসল উৎস হচ্ছে সেই দেশের জনগণ।
তিনি বলেন, যদি ‘মাঠ পর্যায় থেকে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতৃত্বকে ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারি, আমাদের নিবেদিনপ্রাণ মাঠকর্মীদের সম্পৃক্ত করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারি, নির্বাচন কোনো ব্যাপার হবে না। জনগণ তাহলে এমনিতেই ভোট দেবে। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের শক্ত অবস্থান, অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান; ভোটাধিকারের পক্ষে শক্ত অবস্থান; অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অবস্থান, ন্যায়বিচারের পক্ষের অবস্থানের কথা। এটা একমাত্র সম্ভব হবে তৃণমূল পর্যায়ে দল সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ থাকলে। সেই দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। ’
রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন প্রসঙ্গে সোহেল তাজ বলেন, ‘পরিবর্তনের সময় এসেছে। এই সুযোগটা আওয়ামী লীগ নিতে পারে। এটা আমাদের সুযোগ। দলকে শক্তিশালী করে এই দুর্নীতি-অনিয়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।
যেটা এখন থেকে নয়, দুর্নীতির এই সংস্কৃতি সেই চারদলীয় জোট, এরশাদ ও জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই শুরু হয়েছে। ছাত্ররাজনীতিতে দুর্নীতি সেই সময় থেকেই শুরু হয়েছে। এই বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে। ’
কবে রাজনীতির মাঠে সক্রিয়ভাবে দেখা যাবে- জানতে চাইলে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমি সচেতন নাগরিক হিসেবে মাঠে আছি, রাজনীতির বাইরে, ঠিক সেটা বলা যায় না। একজন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি রাজনীতির ভেতরেই আছি। আমি সর্বদাই প্রস্তুত আছি। ’