শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:০৪:৩৬

ব্রিটেনের রানির মৃত্যুতে শোক বইছে গাজীপুরের এই গ্রামে

ব্রিটেনের রানির মৃত্যুতে শোক বইছে গাজীপুরের এই গ্রামে

গাজীপুর : ১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর। দিনটি গাজীপুরের শ্রীপুরবাসীর কাছে চিরস্মরণীয়। বাংলাদেশ সফরকালে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেদথ স্বনির্ভর ও আদর্শ গ্রাম দেখতে ওইদিন এসেছিলেন শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীর চালায়। দিনটি যেন ঈদের আনন্দ নিয়ে এসেছিল গ্রামবাসীর জন্য।

গ্রামবাসী এখনো বিশেষভাবে দিনটি মনে রেখেছে।

গ্রামবাসী জানিয়েছে, রানি প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেন। সেই সময় তারা নিজেদের 'ঘরের মানুষ' হিসেবে আপন করে নিয়েছিলেন।   তাই 'গ্রামের প্রতিটি ঘরের দরজা রানির জন্য সব সময় উন্মুক্ত' ঘোষণা দিয়ে রানিকে একটি প্রতিকীরূপে রুপার চাবি উপহার দিয়েছিলেন তারা। ফলে রানির প্রয়ানে শোক বইছে গ্রামটিতে।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালে মাত্র একবার সফরে এসেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ওই সময়ই স্বনির্ভর ও আদর্শ গ্রাম দেখতে বৈরাগীরচালায় এসেছিলেন রানি। তখন রানির সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান, জেলা প্রশাসক বদিউর রহমানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে চড়ে এসেছিলেন রানি। শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনে নেমে ২০০ থেকে ৩০০ ফুট পথ পায়ে হেঁটে পরে গাড়িতে চড়ে বৈরাগীর চালা চৌরাস্তা মোড়ে নেমেছিলেন। সেখান থেকে ফের পায়ে হেঁটে বৈরাগীর চালা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে একটি  কাঁঠাল গাছ তলায় গিয়ে  বসেছিলেন। সেখানে তখন একটি কুঁড়েঘরও ছিল। সেখানেই গ্রামের নারীদের সঙ্গে রানি কথা বলেন। শোনেন গ্রামের নারীদের স্বনির্ভরতার গল্প।

সেই দিনের স্মৃতি চারণ করে শাখাওয়াত হোসেন খান জানান, গ্রামের নারীদের গল্প শোনার পর গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মৃত মোকাররম হোসেন মোল্লার স্ত্রী হাকিমুন নেছা রানিকে রূপার ওই চাবি উপহার দেন।  

তিনি জানান, এই চাবিটি ছিল প্রতিকী রূপে; চাবিটি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, 'আপনার জন্য গ্রামের প্রতিটি ঘরের দরজা সব সময়ই খোলা'।  

পরে রানি হেঁটে কাছেই তাঁদের একটি পুকুর পারে যান। পুকুর পারে যাওয়ার পথে তাঁত ও কাপড় বুনন দেখে মুগ্ধ হন রানি।

শাখাওয়াত হোসেন খান আরো জানান, পুকুরে জাল ফেলে জেলেরা। রানি পুকুরের দক্ষিণ পারে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন। হঠাৎই একটি মাছ জাল থেকে লাফ দিয়ে রানির পায়ের কাছে পড়ে লাফাচ্ছিল। রানি বেশ উপভোগ করেন এটি। তিনি জানান, পরে রানি নারীদের হাঁস-মুরগি ও গরুর খামার ঘুরে দেখেন।

সেই সময় ঘরে মুড়ি ভাজছিলেন আয়মন নেছা (৭৮)। মুড়ি ভাজা দেখে রানির চোখেমুখে ছিল খুশির ঝিলিক। আয়মন নেছা জানান, রানিকে দেখে মনে অইছিলো আসমানতে পরি নাইম্যা আইছে। কী সুন্দর রানি!

রানি আর নেই-এই খবরে আয়মন নেছা কষ্ট পেয়েছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, 'রানি বলছিলেন এই গ্রামে আবার আইবেন, আর আওয়া অইলো না। '

আছিয়া খাতুন নামে এক নারী জানান, খুব কাছ থেকে রানিকে দেখেছিলেন তিনি। কথা শুনেছিলেন। রানির মৃত্যুর খবর শুনে খারাপ লাগছে তাঁদের। যেন মনে হচ্ছে তাঁদের আপনজনই কেউ মারা গেছেন।  

বৃদ্ধ আলতাফ হোসেন জানান, রানির আসার দিনটি ঈদের মতোই আনন্দের ছিল তাঁদের। রানির চির বিদায়ে কষ্ট পেয়েছেন তিনিও। তিনি জানান, রানির মৃত্যুতে তাঁদের গ্রামেও শোক বইছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে