গাজীপুর : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, কর্মীরা নেতার সঙ্গে কথা বলতে পারেন, নেতারা কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন। আমি যদি একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হই- সব ষড়যন্ত্রের মধ্যে থেকেও আমি চেয়েছিলাম সত্যটা প্রতিষ্ঠিত হোক। সেই পথ তৈরি করে রাখা হয়নি। শুধু আমার বিরুদ্ধে নালিশই গিয়েছে। দীর্ঘ ১৮ মাস আমি চোখের পানি ফেলেছি। আজকে আর চোখের পানি ফেলব না।
সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের পর মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাসায় এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আজকে গাজীপুরে এসে দেখেন, লাখ লাখ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি একসঙ্গে হয়ে গাজীপুরে ভোট করতে আসছেন। এসবের কোনো দরকারই ছিল না। আমি, আমার মা এবং আওয়ামী লীগ যদি একসঙ্গে হয়ে কাজ করতাম তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাদের গাজীপুরে আসতে হতো না; বাসায় বাসায় যেতে হতো না।
প্রশাসনের লোক যারা টেবিল ঘড়ির নির্বাচন করছেন তাদের বাসায় যাচ্ছেন। হুমকি দিচ্ছেন, এতে কি আপনারা আপনাদের সন্তানের মুখে বিষ ঢেলে দিচ্ছেন না? আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আপনারা নেত্রীকে সত্যটা জানান, উনি সত্যটা জানুক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর হয়রানি করা হচ্ছে, অবিচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার মা এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরূপ এখানে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। সন্তান হিসেবে আমি আমার মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার মা বলেছেন, তুমি যদি অন্যায় কিছু করো এর বিচার এই শহরের মানুষ আগামী ২৫ তারিখ ভোটের মাধ্যমে করবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে আমার ভালোবাসার জায়গা, নৌকা হচ্ছে আমার একটা শ্রদ্ধার জায়গা। প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন আমার একটা শ্রদ্ধার জায়গা; কিন্তু এখানে আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এই আজমত উল্লাই আমার সব ক্ষতি করার মূল পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। আজমত উল্লা আমার বাসায় এসে খেয়েছেন। এই বাসায় বসে আমার ক্ষতিগুলো করেছেন। তাই আমার মা বলেছেন- তুমি আজমত উল্লার ভোটে যাইবা না, তুমি আমার ভোটে থাক। এখন আপনারাই বলেন, আমি কি আজমত উল্লার সঙ্গে থাকব? নাকি আমার মায়ের পাশে থাকব?
কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক এই মেয়র বলেন, আপনারা গাজীপুরে আসেন দাওয়াত খেয়ে যান, কর্মীদের হুমকি দিয়েন না, হয়রানি করবেন না। নির্বাচন কমিশন চাচ্ছে এখানে একটি সুষ্ঠু সুন্দর ভোট করতে, সরকারও চাচ্ছে সুন্দর ভোট হোক। কিন্তু ভোট দিতে গিয়ে যদি এক ভাইয়ের সঙ্গে আরেক ভাইয়ের মারামারি করান, পেশিশক্তি ব্যবহার করেন, তাহলে নির্বাচন না করে সরাসরি ডিক্লিয়ার করে নিয়ে যান।
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, আমার আওয়ামী লীগে কোনো পদ নেই। আমার সদস্য পদও আওয়ামী লীগে নাই। আমি আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সমর্থক। একজন সাধারণ সমর্থককে বহিষ্কার করতে আপনাদের কেন কেন্দ্রীয় কমিটি লাগবে। তিনি পার্টির কাছে আবেদন করেন, আমাকে পার্টির সমর্থক হিসেবে থাকতে দেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও গাজীপুর জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ওই বছরের ১৯ নভেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদ জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করে। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে শর্তসাপেক্ষে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজে ও তার মাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করা হয়। জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা ঋণখেলাপির কারণে বাতিল হলেও তার মায়ের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে জাহাঙ্গীর আলম তার মায়ের টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলে ফেরার প্রায় ৫ মাস পর দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মায়ের পক্ষে প্রচারণায় নামার অভিযোগে আবারো জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।