জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর প্রতিনিধি: বাৎসরিক ছুটির টাকা, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বিনা অপরাধে শ্রমিক ছাটাই বন্ধের দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিন্স লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় ৩য় দিনের মতো বুধবার শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃপক্ষ শ্রমিক আন্দোলনের মুখে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করেছেন। কারখানা এলাকায় বিপুল পরিমান পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিল্প পুলিশ গাজীপুর-২ এর সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, কারখানা কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে বার্ষিক ছুটির টাকার পরিশোধ করে আসলেও তিন বছর তা অনিয়মিত করতে থাকে। সম্প্রতি ওই টাকা পরিশোধের জন্য আন্দোলন করলে ২ বছরের টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু এক বছরের টাকা বাকী থাকে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বকেয়া ২০১৫ সালের বাৎসরিক এক বছরের ছুটির টাকা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিনও কারখানা কর্তৃপক্ষ টাকা না দিয়ে উল্টো শ্রমিকদের নানা ভাবে হয়রানি করতে থাকে। এবং শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে কর্তৃপক্ষ। এরই জের ধরে রোববার রাতে ওই কারখানার সুইং অপারেটর জাহাঙ্গীর ও শাহাদাৎ নামের দুই শ্রমিককে বাসা থেকে পুলিশ দিয়ে ধরে নেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সোমবার সকালে কারখানার অন্যান্য শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা কাজ বন্ধ করে দিয়ে কারখানার ভেতর শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করতে থাকে। কিন্তু কারখানার লোকজন শ্রমিকদের মাঝ থেকে সুইং সেকশনের হাবীব, দেলোয়ার, রোমানা, রোজিনাসহ ৩০/২৫ জন শ্রমিককে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে চাকুরী থেকে স্ব-ইচ্ছায় ইস্তফা দিতে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে তারা ইস্তফা করবে না মর্মে জানালে কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদেরকে মারধর করে। এসময় শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেড়িয়ে এসে বিক্ষোভ মিছিল করতে করতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে মহাসড়ক থেকে সড়িয়ে দেয়। ঘটনায় কারখানাটি একদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে পরিস্থিতি ওই দিনের জন্য শান্ত হয়।
মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা নিয়মমতো কাজে যোগদান করে। কিন্তু কারখানায় যোগদান করার পর কাজ শুরু হলে প্রত্যেক ফ্লোরে পুলিশ মোতায়েন করে রাখে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করলে কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে কর্তৃপক্ষ পুলিশ সড়িয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানালে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যায় এবং গত রোববার আটক হওয়া দুই শ্রমিক শাহাদাৎ ও জাহাঙ্গীরকে এনে দেয়ার এবং ছুটির টাকা দেয়ার দাবি তোলে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। একপর্যায়ে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এতে শ্রমিকরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে সকল শ্রমিক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এসময় বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ পিছু হটে। পরে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সড়িয়ে নেয় এবং বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা কারখানার সামনের মাঠে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ সোমবার দুপুরে দ্বিতীয় দিনের মতো কারখানায় ছুটি ঘোষনা করলে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বুধবার সকালে কর্র্তৃপক্ষ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে। শ্রমিকরা সকালে যথারীতি কাজে আসলে কাউকে কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি। এঘটনায় কারখানা এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারখানায় গেইটে এবং আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমান পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর ওসি মোঃ আব্দুল খালেক জানান, ৩য় দিনেও কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃপক্ষ কারখানা অনির্দিষ্ট কালের বন্ধ ঘোষনা করেছেন। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
২ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস