গোপালগঞ্জ থেকে:‘মা আমি নির্দোষ। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।’ বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মা রাবেয়া বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এসব কথা বলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান। রাত ১০টায় তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
মায়ের সঙ্গে মুফতির হান্নানের শেষ কথোপকথনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুফতি হান্নানের বড় ভাই মুন্সি আলীউজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার ভাই হান্নান আমাদের মোবাইলে ফোন করে। পরে সে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার হিরন গ্রামে আমাদের বাড়িতে আমার বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে ৩/৪ মিনিট কথা বলে। এ সময় সে সবার কুশল জিজ্ঞাসা করে। এছাড়া তার স্ত্রী, সন্তানসহ সবাই দেখে রাখার অনুরোধ করে।’
তিনি আরও জানান, ‘মঙ্গলবার কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি হাতে পাওয়ার পর আমরা হান্নানের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেই। মা বৃদ্ধ ও অসুস্থ। তাই তিনি কারাগারে যেতে পারেননি। তাই হান্নানের সঙ্গে মোবাইলে মায়ের কথা বলার ইচ্ছার কথা ওই দিন পুলিশকে জানাই।’ এছাড়া হান্নানও মায়ের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহটি কারা কর্তৃপক্ষকে বলে। এ কারণে কারা কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়ে ফোনে মায়ের সঙ্গে হান্নানের কথা বলিয়ে দেন।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে মুফতি হান্নানের সঙ্গে দেখা করেন তার বড় ভাই আলীউজ্জামান, মুফতি হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভিন রুমা, বড় মেয়ে নিশি খানম ও ছোট মেয়ে নাজরিন খানম। বুধবার দুপুরে মুফতি হান্নানের সঙ্গে দেখা করে তার কারাবন্দি দুই ভাই।
উল্লেখ্য সিলেটের হযরত শাহজালালের (রা.) মাজারে ২০০৪ সালের ২১ মে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন। ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মুফতি হান্নানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখেন।
এরপর তিন আসামিই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি আবেদন খারিজ করে দেন। বুধবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে মুফতি হান্নান ও বিপুলের এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রিপনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
১৩ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস