আমিনুল হাসান শাহীন, গোপালগঞ্জ থেকে : একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গোপালগঞ্জের তিনটি সংসদীয় (২১৫, ২১৬ ও ২১৭) আসনে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ভোটের প্রচারণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমিতে বরাবরই শক্তিশালী অবস্থানে আওয়ামী লীগ।
বর্তমানে দলের হাল ধরা বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে গোপালগঞ্জের নেতা-কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান খুবই নাজুক। তাই প্রচারণায়ও তারা অনেকটা পিছিয়ে।
এ এলাকায় জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো দলের কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। কার্যত গোপালগঞ্জে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগে। তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ পর্যায়ের পাশাপাশি কেন্দ্রেও জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। এখন কদর বেড়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঝুলছে ডিজিটাল ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ড।
কেউ কেউ এলাকায় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন অনেকে। সেখানে বরাদ্দও দিচ্ছেন কেউ কেউ। গোপালগঞ্জ-১ আসন কাশিয়ানী উপজেলার ৭ ইউনিয়ন এবং মুকসুদপুর উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত। গোপালগঞ্জ-২ আসন সদর উপজেলার ২১ ইউনিয়ন এবং ১ পৌরসভা ও কাশিয়ানী উপজেলার ৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। গোপালগঞ্জ-৩ আসন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৫ ইউনিয়ন এবং ১ পৌরসভা ও কোটালীপাড়া উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত।
গোপালগঞ্জ-১ (কাশিয়ানী-মুকসুদপুর) আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনিও আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এ আসনে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মুকুল বোসের কথাও নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক কে এম মাসুদুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের এমপি উম্মে রাজিয়া কাজল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক আরিফা রহমান রুমা, ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দীপুও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি নিয়মিত এলাকায় নেতা-কর্মীদের পাশে রয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের এই প্রার্থীর প্রতি তরুণদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। এ ছাড়া এ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুও সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে তিনি আবার গোপালগঞ্জ-২ আসনেও প্রার্থী হতে চান।
জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাশিয়ানী উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল মান্নান শেখ মুন্নু ও দীপা মজুমদারের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া মুকসুদপুর উপজেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি আজম শরীফ ও ইসলামী আন্দোলনের অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমানের নামও নিজ দলীয় ফোরামে শোনা যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ-২ (সদর-কাশিয়ানী) আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী অনেকটাই নিশ্চিত দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি ৩৭ বছর ধরে এ আসনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছেন। তার নেতৃত্বে এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।
অন্যদিকে বিএনপির জেলা সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজও দলীয় প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মুনসুর আলী, সাবেক এমপি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষক পার্টির সভাপতি সাহিদুর রহমান টেপা এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আলমগীর হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। জাসদ (ইনু) থেকে গোপালগঞ্জ জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ মাসুদুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) এলাকাটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর জন্মস্থান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশোর কেটেছে এই স্মৃতিঘেরা টুঙ্গিপাড়ায়। এ আসনে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যার নামটি উচ্চারিত হয় তিনি হলেন শেখ হাসিনা। এ আসনটি বলা চলে শেখ হাসিনার জন্যই নির্ধারিত। এখানে আওয়ামী লীগের অন্য কোনো প্রার্থী নেই।
এ আসনে বিএনপি থেকে শেখ হাসিনার বিপরীতে লড়তে প্রস্তুত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এস এম জিলানী। তরুণ এই ছাত্রনেতা ২০০৮ সালেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে টুঙ্গিপাড়ার শিক্ষক এস এম আফজাল হোসেন কোটালীপাড়া উপজেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি অরুণ চন্দ্র সাহার নাম শোনা যাচ্ছে। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি