গোপালগঞ্জ : দীর্ঘ ১৯ বছর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া মেয়েটি স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন। নাম-পরিচয় ও ঠিকানাবিহীন মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছে সরকার।
গত শুক্রবার আফরিদা খাতুন নামে মেয়েটিকে বিয়ে দেয়া হয় সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম সরদারের ছেলে মুদি দোকানি নাফিউর আসাদ রুবেলের সঙ্গে।
জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে কাবিন লেখা হয়। মেয়ের উকিল পিতা হন পুনর্বাসন কেন্দ্রের হাউজ প্যারেন্ট মো. কামরুজামান ঠাকুর।
বিয়ে পড়ান মওলানা আব্দুর কাইয়ুম। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার সামগ্রীর কমতি রাখেনি প্রশাসন। রঙিন টিভি, ফ্রিজ, ডিনারসেট, সেলাই মেশিন, মুদি দোকানের মালামালসহ অন্যান্য গৃহস্থালি পণ্য।
আফরিদা খাতুনের বিয়ের অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রঙিন পতাকা ও লাল-নীল-বেগুনি রংয়ের কাগজের নিশান টাঙিয়ে সাজানো হয়।
বৃহস্পতিবার ছিল আফরিদার গায়েহলুদ। শুক্রবার দিনভর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয় অনুষ্ঠানিকতা। পুনর্বাসন কেন্দ্রটির ৩০০ নিবাসী আনন্দে মেতে ছিল। সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাস করে তারা। বিকেলে নতুন দম্পতিকে স্থানীয় রীতিতে দুধ-ভাত খাইয়ে সব অনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিদায় জানানো হয়।
আফরিদার ১৯টি বছর কেটেছে বিভিন্ন বেবি হোম, শিশু সদন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। একবছর বয়সে তার ঠাঁই হয়েছিল রাজশাহীর বেবি হোমে। ছয় বছর বয়সে তাকে পাঠানো হয় নওগাঁ শিশু পরিবারে।
সেখান থেকে যশোর শিশু পরিবার হয়ে টুঙ্গিপাড়া শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠাঁই হয় তার। মেয়েটি নিজের বাবা বা-মায়ের নাম জানেন না।
তাকে সঠিক ঠিকানায় পুনর্বাসনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার অন্য দশটি বিয়ের মতো সব অনুষ্ঠানিকতা করেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০০ লোককে খাওয়ানো হয়। খাদ্যতালিকায় ছিল কাচ্চি বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, ডিম ভোনা, দই, মিষ্টি ও কোমল পানীয়।
অনুষ্ঠানে ছিলেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোমিনুর রহমান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল্লাহ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সমীর মল্লিক, ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ফারহানা নাসরিনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দ্বিপংকর সরকার, বরের চাচা আব্দুস সালাম সরদারসহ ৮০ জন বরযাত্রী।
আফরিদা তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন হোমে বড় হয়েছি। আমার বাবা-মা নেই- তা কখনো বুঝতে পারিনি। সব সময় হোমের বোনদের সঙ্গে লেখাপড়া ও খেলাধুলা করে বড় হয়েছি। শিক্ষকরা ছিলেন আমার বাবা-মায়ের মত।
তিনি বলেন, আজ আমাকে যেভাবে স্বামীর বাড়িতে পাঠালেন তা আমার জন্য বিরাট পাওয়া। কারণ ধনী লোকের মেয়ে বা ছেলের বিয়েতে এমন আয়োজন হয় না। আমি দাম্পত্য জীবনে সবার দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করি। আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মায়ের আসনে বসিয়ে আগের অভাব পূরণ করতে পারি।
আফরিদার স্বামী নাফিউর আসাদ রুবেল জানান, স্ত্রীকে নিয়ে আগামীদিনে একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখছি। আমি মা-বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা প্রবাসে। মেয়েটিরকষ্টের কথা ভেবে মা-বাবাকে রাজি করিয়ে বিয়ে করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমার কারণে আফরিদার একটি নতুন ঠিকানা হলো, আমি তাকে সুখে রাখবো। সুন্দর জীবনের জন্য দোয়া করবেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর মেয়েটির একটি নতুন ঠিকানা দিতে পেরে গর্বিত। তারা যাতে সুখে থাকতে পারে সে জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এমএস