 
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                                                                    
পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চলমান মাস্টার্স পরীক্ষা ২০১৬ তে পরীক্ষায় প্রসব বেদনা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা দিয়েছেন আজমেরী আক্তার নামের এক পরীক্ষার্থী। আজ বুধবার তিনি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সে বসেই পরীক্ষায় অংশ নেন।
জানা যায়, আজমেরী আক্তার পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে হিসেববিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। স্বামীর বাড়ি জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামে। স্বামী নূরনবী ইসলাম পেশায় সেনাবাহিনীর সদস্য। তিন বছর আগে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে অন্তস্বত্ত্বা অবস্থায়ও তিনি পড়াশুনা বাদ দেননি। সম্প্রতি চিকিৎসকরা তার ডেলিভারির তারিখ দেন ১২। কিন্তু গত মঙ্গলবার বিকেলেই তার প্রসব বেদনা উঠে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে রাতে পঞ্চগড় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করেন। পরদিন সকালে তার মাস্টার্স চূড়ান্ত পর্বের শেষ পরীক্ষা। বিষয় ছিলো কর্পোরেট ট্যাক্স প্ল্যানিং।
অদম্য মনোবল নিয়ে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে বসেই পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষও তার পরীক্ষার নেওয়ার ব্যবস্থা করে। এ সময় তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য পঞ্চগড় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অধীনে একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একজন প্রত্যবেক্ষক নিযুক্ত করা হয়। দুপুর ১টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়। প্রশ্নপত্র পেয়ে প্রসব বেদনা নিয়েই পরীক্ষা দিয়ে চলেন আজমেরী। মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিয়ে নেন। প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক দিলরুবা আক্তার, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ছিলেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম। ওই প্রসূতি মায়ের পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হাসনুর রশিদ বাবু। টানা তিন ঘন্টা পরীক্ষা দেয়ার পর প্রসব বেদনা বাড়লে আর লিখতে পারেনি আজমেরী। পরে তাকে পুনরায় পঞ্চগড় মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে সন্তান প্রসবের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তার অস্ত্রপচার হওয়ার কথা রয়েছে।
আজমেরীর মা হাসিনা খাতুন জানান, আমার মেয়েটি অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থায় সবগুলো পরীক্ষা দিয়েছে। আর বাকি ছিলো মাত্র ১টি পরীক্ষা। এর মধ্যেই তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। আমরা পরীক্ষা দিতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও পরীক্ষা দেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করার কথা বলে। সবার সাথে পরামর্শ করে আমরা পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করি। পরীক্ষা শেষ করেছে। এখন যেন সুস্থভাবে তার সন্তান প্রসব হয় এটাই কামনা করি।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও প্রত্যবেক্ষক দিলরুবা আক্তার জানান, মেয়েটির লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তার হাতের লেখাও ভালো। প্রসব বেদনা নিয়ে সে যে কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছিল তা প্রকাশ করার মতো নয়। আশা করি ও ভালো করবে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হাসনুর রশিদ বাবু জানান, মেয়েটি প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে তারপরও সে পরীক্ষা দিয়েই যাচ্ছে। এর আগে নবজাতক সন্তান নিয়ে পরীক্ষা দিতে দেখেছি। কিন্তু প্রসব বেদনা নিয়ে পরীক্ষা দেয়া এই প্রথম দেখলাম। মেয়েটির মানসিক শক্তি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব প্রফেসর কানাই লাল কুণ্ডু জানান, মেয়েটির পরিবার থেকে আমাদেরকে তার অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি জানানো হলে আমরা তার পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।