সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০১:১৮:১৫

২০ লাখ টাকা ঋণে নিউজিল্যান্ড যান মোজাম্মেল

২০ লাখ টাকা ঋণে নিউজিল্যান্ড যান মোজাম্মেল

নিউজ ডেস্ক : ‘‘মা তুমি কেমন আছ? খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করছো তো? আগামী রমজানে আমি দেশে আসব, মা।’ গত মঙ্গলবার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে এ কথাগুলো বলেছিলেন নিউজিল্যান্ড প্রবাসী চাঁদপুরের মোজাম্মেল হক সেলিম।

কিন্তু মায়ের মুখ আর দেখা হলো না মোজাম্মেলের।

গত শুক্রবার নিউজল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নৃশংসভাবে খুন হন তিনি।

এদিকে মোজাম্মেলের মৃত্যুর সংবাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীদের মাঝে। দুই বোন আর তিন ভাইয়ের মধ্যে মুজাম্মেল ছিলেন সবার ছোট। আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে অনেকটাই বাকরুদ্ধ সবাই। অপরদিকে সেলিমের না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়াকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা জামিলা খাতুন।

নিহত মোজাম্মেল চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের হুর মাইশা গ্রামের মৃত হাবিব উল্লাহ মিয়াজীর ছেলে।

মোজাম্মেল ঢাকা মার্কস ডেন্টাল মেডিকেল হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্যে স্টুডেন্ট ভিসায় ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ড পাড়ি জমান। সেখানে স্থানীয় একটি মেডিকেল কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ করতেন তিনি।

মোজাম্মেলের মা জামিলা খাতুন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আমার ছেলে ফোন দিয়ে আমার খোঁজ-খবর নেয়। আমাকে খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করতে বলে। কিন্তু শুক্রবারের পর থেকে তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই। তার নম্বরে ফোন করেও তাকে পাচ্ছি না।’ কথাগুলো বলছিলেন আর বিলাপ করছিলেন তিনি। এ সময় তিনি আহাজারি করে তার ছেলেকে তার বুকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে মিনতি করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার লাশটা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’

মোজাম্মেলের বড় ভাই আবদুল মালেক বলেন, ‘মসজিদে হামলার পর থেকে আমার ভাই নিখোঁজ ছিল। শনিবার রাতে কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার নিউজিল্যান্ড প্রবাসী মোজাম্মেলের বন্ধু মজিবুর রহমান ফোন করে জানান আমার ভাই আর বেচেঁ নেই। ওই জায়গার একটি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বলে জানান তিনি।’

আবদুল মালেক আরও বলেন, ‘আমার বাবা ২০০১ সালে মারা যান। আমরা অনেক কষ্ট করে আমার ভাইকে মেডিকেলে পড়িয়েছি। ২০১৫ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মতলব নারায়ণপুর শাখা থেকে ২০ লাখ ঋণ করে তাকে পড়াশুনার জন্যে নিউজিল্যান্ডে পাঠাই। কিন্তু আমার ভাই পড়াশুনা শেষ করে আর আমাদের মাঝে ফিরে আসলো না। এত বড় ঋণের বোঝা কীভাবে শোধ দেব?’ তিনি ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর হোসেন রিপন মীর বলেন, ‘মোজাম্মেলকে অনেক কষ্ট করে, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মানুষ করেছে তার ভাই-বোনেরা। তাদের আর্থিক অবস্থা ততোটা ভালো না। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই তাদের পরিবারকে যেন আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি মোজাম্মেলের মহদেহটা যেন দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।’

সূত্র- দৈনিক আমাদের সময়

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে