 
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                                                                    
মাগুরা থেকে : অবশেষে বিনা টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললেন তপতী চক্রবর্তী। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে হিসেবে চাকরিটা তার কাছে পৃথিবী হাতের মুঠোই পাওয়ার মতো ঘটনা।
এদিকে জেলা পুলিশ লাইনসে এ চাকরি চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেন এসপি খান মোহাম্মদ রেজওয়ান। এছাড়া তপতীর শারীরিক ফিটনেসের জন্য মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ছয় হাজার টাকা দিয়েও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন এসপি।
 
এদিকে কনস্টেবল পদে বাছাইপর্ব ও লিখিত পরীক্ষার পর শনিবার মাগুরা পুলিশ লাইনসে ২৬ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়।
জানা যায়, বুনাগাতী গ্রামের খাস জমিতে খুপড়ি ঘরে তপতীদের বসবাস। বাবা তপন চক্রবর্তী একটি বেসরকারি কোম্পনির বিপনন কর্মী ছিলেন। ২০১৪ সালের ১৪ মে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। সেই থেকে তপতী তার মা ও ছোট বোন নিয়ে চরম দারিদ্রতার মাঝে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম জীবনযাপন করেছেন।
তাছাড়া একমাত্র মামা ফরিদপুরে একটি পেট্রল পাম্পের কর্মচারী হিসেবে আছেন। প্রতি মাসে তার পাঠানো সামান্য টাকায় তাদের সংসার চলে।
এদিকে শালিখার বুনাগাতি কলেজে এবার বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। একমাত্র সাহায্যকারী মামার বিয়ের কথা চলছে, বিয়ে হলে সংসারের চাপে ইচ্ছে থাকলেও তিনি তাদের জন্য আর খরচের টাকা দিতে পারবেন না।
আর এরই মাঝে কোনো টাকা ছাড়াই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে নিয়োগের খবর জানতে পারেন তিনি। খবরটি শুনে মনের মধ্যে স্বপ্ন বোনেন তপতী। এই চাকরিটা পেলে নিজের স্বপ্ন পূরণসহ ছোট বোনের লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের প্রয়োজনও মেটাতে পারবেন তিনি।
অসহায় মাকে আর দারিদ্র্যতার কষ্টে চোখের জ্বলে ভাসতে হবে না। আর এর প্রেক্ষিতেই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শনিবার মৌখিক পরীক্ষায়ও চূড়ান্তভাবে মনোনিত হন তপতী।
এ চাকরির জন্য ব্যাংক ড্রাফট করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র একশ টাকা। কিন্তু পরদিন রোববার মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ছয় হাজার টাকার প্রয়োজন। যার কোনো জোগান নেই তপতী ও তার মায়ের।
ছয় হাজারতো দূরের কথা পরদিন বাড়ি থেকে মাগুরায় আসা-যাওয়ার ভাড়ার টাকাও জোগাড় করতে হবে ধার করেই। আর সে কারণেই চাকরি পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেললেও চোখে মুখে দুঃচিন্তার ছাপ ফুটে উঠে তার।
এরপর জানতে পেরে মেডিকেলের চেকআপের ৬ হাজার টাকার দায়িত্বও নেন এসপি মোহাম্মদ রেজোয়ান। এ ব্যাপারে তপতীর মা চন্দনা চক্রবর্তী বলেন, ‘বিনা টাকায় মেয়ে পুলিশের চাকরি পাওয়ায় অনেক খুশি। এ প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের দুঃখের দিন এবার শেষ হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।’
এ বিষয়ে এসপি রেজোওয়ান বলেন, ‘পুলিশের চাকরির সঙ্গে মানবিক সেবার সম্পর্ক জরুরি। এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব। আমি সেই দায়িত্বটি পালন করেছি।’