বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ০৫:১৬:৫৫

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটি, পশুর লোমে ভরে যাচ্ছে তাসফিয়ার শরীর

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটি, পশুর লোমে ভরে যাচ্ছে তাসফিয়ার শরীর

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : বিরল রোগে আক্রান্ত তাসফিয়া। জন্মের পর থেকে পিঠে দেখা দেয় টিউমার। আস্তে আস্তে তা বড় হতে থাকে। সেই সঙ্গে গজিয়েছে পশুর মতো লোম। পুরো শরীরজুড়ে এর বিস্তৃতি ঘটেছে।

চার বছরের ছোট শিশুটি অসহ্য যন্ত্রণায় কাটছে প্রতিটি রাত। কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য হয়ে সে রাতেও কয়েকবার গোসল করে চেষ্টা করে যন্ত্রণা নির্বারণের। বিরল এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এর চিকিৎসা পদ্ধতিও জানা নেই চিকিৎসকদের। রোগ মুক্তির আশায় পরিবারটির শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ।

চিকিৎসকরা বলছেন, এটি একটি বিরল রোগ। এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও এমন রোগীর সন্ধান মেলেনি। তাদের মতে, রোগটির নাম দৈত্যাকৃতি জন্মগত লোমশ মোল (Gaint Congential Melanocytic Nevus) ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌর এলাকার গোডাউনপাড়ার নির্মাণ শ্রমিক মাসুদুজ্জামান মামুনের চার বছরের শিশুকন্যা তাসফিয়া জাহান মুনিরা। দিনমজুর বাবার সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসার পরও মেলেনি রোগ মুক্তি, ক্রমেই এ রোগ শিশুটিকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে।

নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সুলতানা পাপিয়া জানান, রোগটি আসলে বিরল, আমরা কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে চিকিৎসা করছি। ধারণার ওপরই চলেছে চিকিৎসা প্রক্রিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হয়তো বলা যাবে।

বিষেশজ্ঞ চিকিৎকরা টিম গঠন করে তাসফিয়ার চিকিৎসা করতে হবে। আমরা সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি। তাসফিয়ার মা তানজিলা খাতুন জানান, জন্মের পর থেকে এ রোগ। দিন দিন বাড়ছে, আমাদের সাধ্যমতো আমরা চিকিৎসা করেছি; কিন্তু কোনোভাবেই অসুখটি কমেছে না; বরং বাড়ছে।

রাতে তার শরীরে টিউমারের অংশটি আগুনের মতো গরম হয়ে যায়। আর তখন তার শরীরের যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। তার শরীরে লোমের জন্য কেউ তার সঙ্গে মিশে না। তাকে নিয়ে খেলতে সংকোচ বোধ করে, এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।

বাবা মাসুদুজ্জামান মামুন জানান, চিকিৎসকরা বলছেন- এ রোগের চিকিৎসা তাদের জানা নেই। আমি দিনমজুর তার পরও বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন এ ধরনের বিষয়ে তিনি অনেক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমার মেয়ে চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার জন্য তার কাছে বিনীত আবেদন করছি।

স্থানীয় সমাজকর্মী ও সাংবাদিক সাকিল রেজাসহ কয়েকজন জানান, রাজশাহীর ডাক্তারা বলেছেন- এখানে তাসফিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। কারণ তারা রোগটি সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারছেন না। এর জন্য বিশেষজ্ঞ টিমের প্রয়োজন কিংবা দেশের বাইরে নিয়ে তাকে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, বুধবার আমরা টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও রোগটি চিহ্নিত করতে পারছেন না। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে