শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৪৭:৫১

এক মাসের হতভাগ্য এক কন্যা শিশুকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মা, পরম স্নেহে কোলে তুলে নিলেন ডিসি

এক মাসের হতভাগ্য এক কন্যা শিশুকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মা, পরম স্নেহে কোলে তুলে নিলেন ডিসি

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে এক মাস বয়সী হতভাগ্য এক কন্যা শিশুকে রাস্তায় ফেলে রেখে তার মা পালিয়ে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শহরের কামাতপাড়া মহল্লার একটি গলি থেকে উদ্ধার করে ফুটফুটে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।শিশুটি বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ্য রয়েছে বলে চিকিৎকরা জানিয়েছেন।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান। এ সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবিনা ইয়াসমিন শিশুটিকে পরম স্নেহে কোলে তুলে নেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ শিশুটিকে কোলে করে রাখেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পঞ্চগড় উপজেলা সদরের অমরখানার ভিতরগর এলাকার গৃহবধূ রিমু আক্তার দুই বছর আগে পরকীয়ার জের ধরে দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকার এক ট্রাক চালকের হাত ধরে উধাও হন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূ তার নানাবাড়ি জেলা শহরের কামাতপাড়া এলাকায় এসে পেয়ারা বেগম নামে আরেক গৃহবধূকে তার একমাস বয়সী কন্যা শিশুটিকে দত্তক নিতে বলেন। এতে পেয়ারা বেগম অস্বীকৃতি জানালে পেয়ার বেগমের প্রতিবেশী অশোক চন্দ্র মদকের বাড়ির একটি গলিতে শিশুটিকে রেখে পালিয়ে যান মা রিমু আক্তার। রাতে পরিত্যক্ত অবস্থায় শিশুটিকে পরে থাকতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন।

রাতেই জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান। পরে তারা কামাতপাাড়া মহল্লার পেয়ারা বেগমসহ শিশুটির নানাবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শিশুটির মায়ের খোঁজ করেন। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত শিশুটির মায়ের কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ। পরিত্যক্ত অবস্থায় শিশু উদ্ধারের খবরে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে ভিড় করেন হাসপাতালে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সিরাজউদ্দোলা পলিন বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালের বিশেষ শিশু পরিচর্চা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শিশুটি শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে। একজন প্রসূতি মাকে দিয়ে শিশুটির খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিশুটির মা রিমু আক্তারের মামা মো. মুক্তা বলেন, প্রায় দুই বছর আগে স্বামী-সংসার রেখে দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকার এক ট্রাকচালকের হাত ধরে পালিয়ে যায় রিমু আক্তার। এরপর আমরা আর তার কোনো খোঁজ করিনি। শুনেছি বৃহস্পতিবার সে তার একটি শিশুসহ আমাদের বাসায় এসেছিল। আমি সে সময় বাসায় ছিলাম না। পরে শুনছি কোলের শিশুটিকে রেখে সে নাকি পালিয়ে গেছে। আমরাও তাকে খোঁজ করছি। কিন্তু বর্তমানে সে কোথায় আছে আমরা জানি না।

কামাতপাড়া এলাকার গৃহবধু পেয়ারা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় রিমু আক্তার শিশুটিকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন এবং শিশুটিকে দত্তক নিতে বলেন। আমি বাসায় মেহমান আছে বলে শিশুটিকে নিতে অস্বীকৃতি জানাই। এরপর কি হয়েছে জানি না। পরে শুনলাম শিশুটি রেখে সে পালিয়ে গেছে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জহির হোসেন বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ের প্রায় ১০ বছর হয়ে গেছে। এখনো কোনো সন্তান হয়নি। এজন্য সে শিশুটির সব রকম দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। শিশুটিকে আমাদের পরিবারকে দেয়া হলে তাকে নিজের সন্তানের মতই লালনপালন করবো। তার ভবিষ্যতের জন্য যা করা দরকার তাই করতে রাজি আছি আমরা।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, শিশুটিকে বর্তমানে হাসপাতালেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সেখানে দুইজন নারী পুলিশও রয়েছেন। আগে আমরা শিশুটির পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন থানায় এই তথ্য পাঠাবো। শিশুটির মা বা প্রকৃত অভিভাবক যদি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে তাদের হাতে শিশুটিকে তুলে দেয়া হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে