বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৪:৫৩

অন্যের দোষ খোঁজা ব্যক্তিরা হুঁশিয়ার

অন্যের দোষ খোঁজা ব্যক্তিরা হুঁশিয়ার

ইসলাম ডেস্ক: আমাদের সমাজে কিছু ব্যক্তিদের দেখা যায় তারা নিজেদের কাজ ফেলে অন্যের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত থাকেন। পরবর্তিতে ওই শ্রেণীর মানুষগুলো অন্যের বিরুদ্ধে দোষারোপ করা ছাড়াও বিভিন্ন কুৎসা রটনা করে থাকেন। এমন মানুষদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আ্ল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না’। (সূরা আল-হুজুরাত,আয়াত-১২)

এছাড়াও গীবতকারী এই রূপ ব্যক্তি সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যেও সামনে তুলে ধরা ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহ। যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য ইসলামে ধবংসের দুঃসংবাদ রয়েছে। (মুসলিম)

গীবতের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে আর তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছো। (মুসলিম)

অনেকে ভাবতে পারেন আমিতো গীবত করি না। অন্যে বলে আমি শুধু শুনি। না, তাদেরও রক্ষা নেই। কারণ তারা গীবতকারীকে সাহায্য করছে এই পাপ কাজ করতে। গীবতকারী গীবত করার জন্য যদি কাউকে না পায় তাহলে সে আর গীবত করতে পারবে না। আর তাই গীবত শ্রবণকারীদের জন্যও রয়েছে আল্লাহর হুকুম। ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত করা যেমন নিষেধ, তেমনি গীবত শোনাও নিষেধ। যে গীবত শোনে সেও গীবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিস শরিফে আছে, যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গীবত করে তখন তাকে থামতে বলুন, আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনোভাবেই গীবত শোনা যাবে না।

গীবতকারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি তামার নখ বিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা নখগুলো দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিব্রাইল! এরা কারা? জিব্রাইল(আ.) বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করতো এবং তাদের মান-সম্মান নষ্ট করতো। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত ও চোগলখোরী করতো। (আবু দাউদ)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে অর্থাৎ গীবত করবে, কিয়ামতের দিন গীবতকারীর সামনে গীবতকৃত ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উপস্থিত করা হবে এবং বলা হবে তুমি মৃত অবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ কর যেমনভাবে জীবতাবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ করতে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে। (বুখারী)
৩০ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে