মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ১১:২৩:০১

পাঁচ বছর বয়সেই কুরআনের হাফেজ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিশু

পাঁচ বছর বয়সেই কুরআনের হাফেজ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিশু

ইসলাম ডেস্ক: মিয়ানমারের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু হুসাইন মোহাম্মাদ তাহের আরবি ভাষা না জানা সত্ত্বেও পবিত্র কুরআনের সকল সূরা মুখস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন। হুসাইন বর্তমানে সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে তার পিতা-মাতার সাথে বসবাস করছেন।

জেদ্দায় বসবাস করা সত্ত্বেও তিনি আরবি ভাষা বলতে পারেন না। তবে সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ করতে সক্ষম হয়েছেন। মসজিদুন নবী (সা.) যায়েরগণ(জিয়ারতকারীগণ) এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর কুরআন তিলাওয়াত শুনে প্রশংসা করেছেন।

এ ব্যাপারে হুসাইনের পিতা বলেন, জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিবার ছেড়ে আমি অনেক দুরে থাকি। আর এ কারণে আমার সন্তানের দুর্দান্ত প্রতিভার খবর কিছু দিন পূর্বে জানতে পারি। হুসাইনের সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ, কিছু হাদিস ও দোয়া মুখস্থ করার জন্য রেডিও কুরআনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

সন্তানের জন্মগ্রহণের ব্যাপারে বলেন তিনি বলেন, ৫ বছর পূর্বেও আমি জেদ্দায় জীবন যাপন করতাম, তখন আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তবে তার জন্মগ্রহণের পর ডাক্তার আমাকে বলেন, আমার সন্তানের একটি হাতের আঙ্গুলের সংখ্যা কম। তিনি ভেবেছিলেন এই খবর শুনে আমি অসন্তুষ্ট হব। তবে আমি তখন বললাম, এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার এবং মহান আল্লাহ যে উপহার দান করেছেন, আমি তা ফিরিয়ে দিতে পারব না।

হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর দৌহিত্রের নামে হুসাইনের নামকরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, হযরত মোহাম্মাদ (সা.)এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্রের নামে আমার ছেলের নাম রাখি। তার জন্মের তিন মাস পর বুঝতে পরি, তার সামনের বস্তুসমূহের ব্যাপারে তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। ব্যাপারটি বুঝতে পের ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। ডাক্তার বলে, আমাদের সন্তান অন্ধ। এখানেও আমি আল্লাহ নির্দেশের ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট থাকি এবং আমি নিজেকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করি। আমি আমার পূর্বের কথাটি আবারও বলি: এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উপহার এবং মহান আল্লাহ যে উপহার দান করেছেন, আমি তা ফিরিয়ে দিতে পারব না।

হুসাইনের বাবা আরও বলেন, আমি সর্বদা চাইতাম যে, আমার এমন একটি সন্তান হোক, যে সম্পূর্ণ কুরআনের হাফেজ হবে এবং ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করবে। আর এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নেই শিশুকাল থেকেই হুসাইনকে এভাবেই লালন পালন করব। এরপর তার জন্য একটি রেডিও ক্রয় করি এবং হুসাইনের শোনার জন্য সেটিকে কুরআন রেডিও তরঙ্গ সেট করি।

তিনি বলেন, এরপর জীবনের কষ্ট আমাকে বাধ্য করে এবং আমি কাজের জন্য জেদ্দা থেকে মদিনায় যায়। তখন হুসাইনের সাড়ে তিন বছর বয়স। চলতি বছরের শাওয়াল মাসের শেষে দিকে হুসাইনের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। আমি তাকে মসজিদুন নবী (সা.) যিয়ারত করার জন্য তাকে নিয়ে যেতে চাই। অতঃপর তাকে আমি বললাম, তুমি যদি একটি আয়াত তিলাওয়াত কর, তাহলে আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করব।

তিনি আরও বলেন, আমাকে আশ্চর্য করে হুসাইন যখন সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করল। অতঃপর সূরা বাকারা তিলাওয়াত করল এবং এভাবেই পবিত্র কুরআনের দুই পারা তিলাওয়াত করে। যা শুনেছি এবং দেখেছি, তা বিশ্বাস করতে পারি নি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য, হুসাইনকে কুরআনের অন্য স্থানে থেকে তিলাওয়াত করতে বললাম, তখন হুসাইন নির্ভুল ভাবে সেই আয়াতও তিলাওয়াত করল এবং সূরার নামও বলল। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নেয় যে, তার পরের দিন আমার বন্ধু যিনি মসজিদুন নবী (সা.)এর কুরআন শিক্ষক তার নিকটে নিয়ে যাব এবং সকল ঘটনা তাকে খুলে বলব।

পরের দিন মসজিদুন নবীতে (সা.) হুসাইনকে নিয়ে যায় এবং বন্ধুকে সকল ঘটনা খুলে বলি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য হুসাইনের নিকট থেকে কুরআন হেফজের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তার নিকট আহ্বান জানায়। অতি আগ্রহের সাথে দেখলাম কুরআনের যে স্থানে তাকে তিলাওয়াত করার কথা বলা হচ্ছে, সেই স্থানে থেকে সে নির্ভুল ভাবে তিলাওয়াত করছে। দৃষ্টিশক্তি ছাড়াই হুসাইন শুধুমাত্র শুনে নির্ভুল ভাবে কুরআন হেফজ করেছে।

হুসাইনের বাবা সর্বশেষে বলেন, কুরআনের এই শিক্ষক তাকে সহযোগিতা করার জন্য অন্য এক শিক্ষককে তলব করলেন। তিনি এসেও হুসাইনের নিকট থেকে পরীক্ষা নিলেন। এভাবে মোট তিন জন শিক্ষক হুসাইনের নিকট থেকে পরীক্ষা নিলেন এবং তারা সকলেই নিঃসন্দেহে স্বীকার করলেন, হুসাইন অলৌকিক ভাবে কুরআন হেফজ করেছেন এবং এটি আল্লাহ পক্ষ থেকে উপহার।

হুসাইনকে মসজিদুন নবীতে (সা.) থাকার জন্য তারা আমান নিকট অনুরোধ করলেন। কারণ, মসজিদুন নবীতে (সা.) দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য নিয়মিত কুরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং এর মাধ্যমে হুসাইন আরও শক্তিশালী ভাবে কুরআন হেফজ করতে পারবে এবং তার নিয়মিত চর্চা হবে ও আরবি ভাষার সাথেও পরিচিত হবে।-ইকনা
১৬ আগস্ট ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমকেএইচ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে