শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০১:৩৯:৩১

মুমিনের ভরসা আল্লাহ

মুমিনের ভরসা আল্লাহ

ফিরোজ আহমদ, ঢাকা: তাওয়াক্কুল এর বাংলা অর্থ ভরসা করা, নির্ভর করা, আস্থা রাখা ইত্যাদি। এ সর্ম্পকে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট।’ (সূরা তালাক : ৩)। ‘আপনি (হে নবী) কোনো সঙ্কল্প করলে আল্লাহর উপর ভরসা করবেন।’ (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)। ‘যারা আপনার বিরুদ্ধে শলাপরামর্শ করে আপনি তাদের উপো করুন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করুন।’ (সূরা আন নিসা : ৮১)। ‘আপনি ভরসা করুন তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই।’ (সূরা ফুরকান : ৫৮)। ‘আর তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা করো যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।’ (সূরা মায়েদা : ২৩)। ‘আর ঈমানদারদের আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিত।’ (সূরা ইব্রাহিম : ২১)। ‘আর যদি তোমরা মুসলিম হও এবং আল্লাহর উপর ঈমান এনে থাকো, তবে তাঁর উপর ভরসা করো।’ (সূরা ইউনূস : ৮৪)। আমার পে আল্লাহই যথেষ্ট; নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে। (সূরা যুমার : ৩৮)। ‘আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। কার্য নির্বাহীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা আহযাব : ৩)। পবিত্র কুরআনুল কারীমে বর্ণিত এসব আয়াতের ফজিলত, গুরুত্ব ও আয়াতের প্রোপট আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরি।

কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা মুমিন হও। তবে আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ হযরত ইব্রাহিম আ: আল্লাহর রহমতের প্রতি নিরাশ হননি। ঈমানের অগ্নিপরীক্ষায় বিজয়লাভ করেছেন। ফলে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা হজরত ইব্রাহিম আ.-কে খলিলুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
দুনিয়াতে বসবাস করতে গেলে বিপদ আসবে। ঝড়-ঝাঁপটা আসবে। পেরেশানি বাড়বে-কমবে। আবার কল্যাণও আসবে। মঙ্গল আসবে। সুসংবাদ আসবে। আবার বিপদ আসবে। এগুলো ঈমান দৃঢ় করার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। যার মর্যাদা যত বড়, তার জন্য ঈমানের পরীক্ষা তত বড়। বিপদ আপদ মাখলুকের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। বিপদ আত্মার উন্নতির জন্য একটি সোপান। বলতে পারেন, কামালিয়াত অর্জনের একটি সিঁড়ি। আল্লাহ কালামুল্লাহ শরিফে বলেন, বিভিন্ন দুঃখ, দুর্দশা দিয়ে আমি বান্দার তাওয়াক্কুলের পরীক্ষা নেবো।

আল্লাহ দেখতে চান বান্দাদের মধ্যে কে বা কারা সব ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্যের উপর নির্ভর করে। সব অভাব অভিযোগ বান্দারা কোথায় পেশ করেন? কুরআনে সূরা ইউসূফের মধ্যে হজরত ইয়াকুব আ.-এর তাওয়াক্কুলের কথা ইরশাদ হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইউসূফ আ.-কে কূয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে তাঁর দশ ভাই একটি রক্তমাখা জামা নিয়ে এসে হজরত ইউসূফ আ.-এর পিতা হযরত ইয়াকূব আ: কাছে হাজির হয়েছিলেন এবং বলছিলেন, ‘হে আমাদের পিতা! আপনি আমাদের বিশ্বাস করবেন না। যদিও আমরা সত্যবাদী। আমরা যখন মাঠে খেলাধুলা করছিলাম।

একটি নেকড়ে বাঘ এসে ইউসূফকে খেয়ে ফেলেছিল।’ হজরত ইউসূফ আ: দশ ভাইয়ের কথা শুনে হজরত ইয়াকুব আ: বললেন, ‘আমার মন বলছে তোমারা এগুলো সাজিয়ে বলছো। আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলাম।’ অবশেষে হজরত ইয়াকুব আ: তাঁর আদরের ছেলে হজরত ইউসূফ আ:-এর সন্ধান পেয়েছিলেন। হজরত ইয়াকুব আ: দীর্ঘ বছর ধৈর্যধারণ করেছেন। এক মুহূর্ত পর্যন্ত তাওয়াক্কুল থেকে পিছ পা হয়নি। সাাতের সময় হজরত ইউসূফ আ: মিসরের খাদ্যভাণ্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। রাজ্যের সব প্রজাকে রশদ বিতরণের দায়িত্ব হজরত ইউসূফ আ:-এর উপর ন্যস্ত ছিল। হজরত ইউসূফ আ: ধৈর্যহারা হননি। মিসরের কারাগারে কারাভোগ করেছেন। তারপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছেন।

হজরত আইয়ূব আ:-কে ১৮ বছর পোকায় খেয়েছিল। হজরত মনছুর হাল্লাজ (রাহ:)-কে শূলে চড়িয়ে ছিল। নবী মুহাম্মদ সা.-এর উপর অমানুষিক অমানবিক নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছিল। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী আপনি তাদের আচরণে মনে কষ্ট নিবেন না’। নবী সা: এরকম নির্যাতনের পরও আল্লাহর উপর নির্ভর করেছেন। হজরত বেলাল রা:-কে দুপুরের রৌদ্রে গরম বালুর ওপর শুইয়ে বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাখা হতো। তারপরও হজরত বেলাল রা: বলতেন, ‘ইয়া আহাদু।’ কিন্তু হজরত বেলাল রা: অধৈর্য হননি। নবী রাসূল সাহাবায়ে কেরাম প্রকৃত মমিনগণ সব বিষয়ে আল্লাহর উপর নির্ভর করেছেন। কঠিন কঠিন সময়গুলোতে মহানবী সা: ধৈর্য ধারণ করেছেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।

আল্লাহর কাছ থেকে ওহি আসার জন্য অপো করতেন। আল্লাহর কাছ থেকে বার্তা আসার পর সামনের দিকে এগিয়েছেন। অথচ আমরা সামান্য কিছু হলেই এদিক সেদিক ছোটাছুটি করি। হজরত জাকারিয়া আ:-এর মাথা যখন কাফেররা করাতের মাধ্যমে দ্বিখণ্ডিত করে, তখন তিনি উহ্ শব্দটি পর্যন্তও উচ্চারণ করেননি। শুধু আল্লাহর উপর ত—য়াক্কুল করেছেন।

আমরা যদি আল্লাহর নিয়ামত চাই। বিশেষ কোনো পুরস্কার চাই। কল্যাণপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। তাহলে সব বিষয়ে আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হবে। আমাদেরকে কুরআনে বর্ণিত তাওয়াক্কুলের আয়াতগুলো বেশি বেশি অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করতে হবে। তাহলে আমাদের ঈমানি শক্তি মজবুত হবে। শিরক ও কুফরি থেকে আমরা বেঁচে থাকতে পারব এবং আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেবেন। লেখক : প্রবন্ধকার  
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে