বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:১৬:৪৩

পবিত্র আশুরার শিক্ষা, যা না জানলেই নয়

পবিত্র আশুরার শিক্ষা, যা না জানলেই নয়

ইসলাম ডেস্ক:  গতকাল ছিল পবিত্র আশুরা। বিশ্বজগতের শুরু থেকে দিবসটি বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের সাথে পালিত হয়ে আসছে। এমনিতেই জিলক্বদ, জিলহজ, মহররম ও সফর আরবে এ চারটি মাস অধিক মর্যাদাপূর্ণ। এসব মাসে খুন-খারাবিসহ সকল প্রকার গর্হিত কাজ নিষিদ্ধ। ইসলামপূর্ব আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগেও এটা মানা হত। আর মহররমের দশ তারিখের এই একটি দিনই মাসটিকে করেছে আরো মহিমান্বিত। কেননা পবিত্র এই দিনে আল্লাহ তায়ালার হুকুমে দুনিয়ার সৃজন হয়। আবার কিয়ামতও হবে এই দিনে। এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন প্রায় দুই হাজার পয়গম্বর। আদি পিতা হজরত আদমের (আ) দেহে পাক রুহ প্রদান, মা হাওয়াকে (আ) পয়দা, মহাপ্লাবন শেষে নূহ নবীর (আ) ডাঙ্গায় অবতরণ, নমরুদের অগ্নিকুণ্ড হইতে হজরত ইব্রাহিমের (আ) নাজাত, মাছের পেট হতে ইউনূসের (আ) নিষ্কৃতি, আইউবের (আ) রোগমুক্তি ও হজরত মূসার (আ) নীলনদ পাড়িদান প্রভৃতি অসংখ্য আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী এই দিবসটি। তাই দিবসটির অতি মর্যাদার কারণেই সুপ্রাচীনকাল হইতে গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়ে আসতেছে আশুরার রোজা। এমনকি রমজানের রোজার পূর্বে আশুরার রোজাই ছিল অবশ্য পালনীয়।

বর্তমানে এসব কিছুকে ছেপে দশই মহররম পরিণত হয়েছে শোকাবহ একটি দিনের চিরন্তন প্রতীকে। কারণ ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৬১ হিজরির ১০ মহররমের এই দিনে ঘটে বিশ্ব মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও বিয়োগান্ত ঘটনা। এই দিনে বর্তমান ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালার মরুপ্রান্তরে রাসূলুল্লাহর (স) প্রিয় দৌহিত্র এবং ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী ও খাতুনে জান্নাত ফাতেমাতুয যাহরার (রা) আদরের পুত্র ইমাম হুসাইন (রা) শাহাদাত বরণ করেন। এই ঘটনা আশুরাকে দান করেছে নতুন মাত্রা। ঐদিন ইমাম হুসাইন (রা) সহ তাঁহার ৭২ জন সঙ্গী-সাথী শহীদ হন, যাহাদের অধিকাংশই ছিলেন আহলে বায়াত। কারবালা প্রান্তরে এই নৃশংস ঘটনা যখন ঘটে, তখন মুসলিম জাহানে বিরাজ করেছিল চরম অরাজকতা। ইসলামের চার খলিফার স্বর্ণযুগ তখন অতীত। মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ তখন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। প্রিয় নবীর (স) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা) এই অন্যায় মেনে নিতে পারেন নাই।

পবিত্র আশুরার দিনে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি রোজা রাখা উত্তম। হজরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণিত একটি হাদীসে রমজানের পর মহররমের রোজাকে সবচেয়ে উত্তম বলা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (স) এই দিনের আগে বা পরে মিলিয়ে রেখেছেন দুইটি রোজা। এই দিনে তওবা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। কেহ কেহ ইসলামের ইতিহাসের এই কলঙ্কিত অধ্যায় স্মরণে নানাভাবে মাতম করে থাকেন। কিন্তু তার চেয়ে মূল্যবান সদাসর্বদা সত্য ও ন্যায়পথে অবিচল থাকা এবং এজন্য যে কোনো আত্মত্যাগকে হাসিমুখে বরণ করা। কেননা ন্যায়ের প্রতি অবিচল নিষ্ঠাই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে সব অন্যায় ও অশান্তি হতে। পবিত্র আশুরায় তাই প্রার্থনা-সত্যের উজ্জ্বল আলোয় দূর হোক মিথ্যার কালিমা। জয় হোক ন্যায় ও সত্যের। ।
১৩ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে