ইসলাম ডেস্ক: ৮. স্মরণ করো, যখন তারা [ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা] বলল, অবশ্যই ইউসুফ ও তার ভাই (বিনইয়ামিন) আমাদের পিতার কাছে আমাদের চেয়ে অধিক প্রিয়। অথচ আমরা একটি সংহত দল (তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী)। আমাদের পিতা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই আছেন। [সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮ (তৃতীয় পর্ব)]
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে তাঁর ভাইদের শত্রুতা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইউসুফ (আ.)-এর বাবা ইয়াকুব (আ.)-এর মোট ১২ পুত্রসন্তান ছিল। বড় ১০ জন ছিল প্রথম স্ত্রীর গর্ভজাত। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ইয়াকুব (আ.) স্ত্রীর অন্য বোনকে বিয়ে করেন। ইউসুফ (আ.) ও তাঁর আপন ভাই বিনইয়ামিন ছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান। তাঁরা ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বিনইয়ামিনের জন্মের সময় তাঁর মাতাও ইন্তেকাল করেন। তাই তাঁদের দুই ভাইয়ের প্রতি ইয়াকুব (আ.)-এর বিশেষ দৃষ্টি ছিল।
তার এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি বড় ভাইয়েরা। তাঁরা ধারণা করেন যে ইউসুফ ও তাঁর ভাই বিনইয়ামিন আমাদের বাবার কাছে আমাদের চেয়ে অধিক প্রিয়। অথচ আমরা ১০ জনের একটি দল। আমরা ইউসুফ ও বিনইয়ামিনের চেয়ে বড়। দৈহিকভাবে আমরা শক্তিশালী। অর্থ উপার্জন ও বাবার সার্বিক দেখাশোনা আমরা বেশি করতে পারব। কাজেই বড় ভাইদের ওপর ছোট ভাইদের প্রাধান্য দিয়ে আমাদের বাবা ‘ভুল’ করেছেন। ১০ জনের একটি বড় দলের ওপর দুজনকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের বাবা অযৌক্তিক কাজ করছেন। প্রকৃতপক্ষে বড় ভাইয়েরাই বিভ্রান্তি ও অন্যায় পথে ছিলেন। কেননা ছোট দুই ভাই সদ্য মাতৃহারা হয়েছেন। সে সময় তাঁরা পর্যাপ্ত আদর-সোহাগের মুখাপেক্ষী ছিলেন। তা ছাড়া ইউসুফ (আ.) ভবিষ্যতে নবী হওয়ার বিষয়টি ইয়াকুব (আ.) জানতেন। তাই তিনি তাঁর ছোট দুই ছেলের প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই এ কথা বলা যাবে না যে ইয়াকুব (আ.) বড় সন্তানদের অবহেলা করেছেন বা তাঁদের অধিকার বঞ্চিত করেছেন। কেননা কোনো নবীর পক্ষে এমন অন্যায় ও জুলুম করা সম্ভব নয়। পৃথিবী থেকে অন্যায়, অবিচার ও জুলুম-নির্যাতন দূর করার জন্যই যুগে যুগে নবীদের আগমন ঘটেছে।
আলোচ্য আয়াত থেকে এ বিষয় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে সন্তানদের সমান চোখে না দেখলে তাদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। তাই পারিবারিক শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে সব সন্তানকে সমান চোখে দেখতে হবে। এ বিষয়ে কোরআনে এসেছে : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন। আর তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লঙ্ঘন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)
হাদিস শরিফে এসেছে : ‘দান করার ক্ষেত্রে তোমরা সন্তানদের মধ্যে সমতা বিধান করো। আমি যদি কোনো সন্তানকে অন্য সন্তানদের ওপর প্রাধান্য দিতাম, তাহলে (ছেলেদের ওপর) মেয়েদের প্রাধান্য দিতাম।’ (কানযুল উম্মাল, হাদিস : ৪৫৩৪৬)
বেশির ভাগ মানুষের কিছু না কিছু সম্পদ থাকে। অনেকে মৃত্যুর সময় কোনো কোনো সন্তানকে সম্পত্তিতে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। এতে অন্যরা বঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো কোনো ব্যক্তি ৭০ বছর যাবৎ (গোটা জীবন) নেক আমল করে। কিন্তু অসিয়ত করার সময় জুলুম করে। তখন একটি খারাপ কাজের মাধ্যমে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ফলে সে জাহান্নামে যায়। আর কোনো কোনো ব্যক্তি ৭০ বছর যাবৎ (গোটা জীবন) খারাপ কাজ করে। কিন্তু অসিয়ত করার সময় সে ইনসাফ করে। তখন একটি ভালো কাজের মাধ্যমে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ফলে সে জান্নাতে যায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৬৭; তিরমিজি, হাদিস : ২১১৭)
লেখক: মাওলানা কাসেম শরীফ।-কালের কন্ঠ
১ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর