শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০৪:১৫:৪৮

ধৈর্যধারণ ইসলামের একটি বড় শিক্ষা

ধৈর্যধারণ ইসলামের একটি বড় শিক্ষা

ইসলাম ডেস্ক: ধৈর্য মহত্ লোকদের এক অন্যতম চরিত্র। এটা আল্লাহ তায়ালারও এক প্রধান স্বভাব। আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য বান্দাগণ দিবানিশি যে রূপ তার অবাধ্যতা ও বিরোধিতা প্রদর্শন করে থাকে, তার আদেশ ও নিষেধের কোনো তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাপৃত হয়, তাতে মহাশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মুহূর্তে তাদের ধ্বংস করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তা না করে পরম ধৈর্যের সাথে অকৃতজ্ঞ-অবাধ্য বান্দার সকল অন্যায় সহ্য করে যাচ্ছেন। আল্লাহ পাকের এই স্বভাবের প্রতি লক্ষ্য করে প্রত্যেকেরও এ বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করা কর্তব্য।

বিপদে অধীর না হওয়া, দু:খ দুর্দশা ও কষ্ট করে ভেঙে না পড়াও ধৈর্যের একটি দিক। মানুষের ঈমানের দৃঢ়তা পরীক্ষা এবং অন্যান্য নানাকারণেও জীবনে আপদ-বিপদ আসে। তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর করে ধৈর্য ধারণ করা ঈমানের অর্ধেক। আর এইরূপ যারা ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তাদের সাহায্য করে থাকেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে :‘ইন্নাল্লাহা মাআছ্ ছোয়াবেরীন’। অর্থাত্ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। আর হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, সবর বা ধৈর্য অবলম্বন করা ঈমানের অঙ্গ বিশেষ।

অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলে করীম (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনয়ে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তার ধৈর্য গুণ আরও বৃদ্ধি করে দেন। ধৈর্যাপেক্ষা উত্তম নেয়ামত আর কিছু নেই। আরেক হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলে করীম (স) বলেন, মু’মিন নর-নারীদের দৈহিক, আর্থিক এবং পারিবারিক বিপদাআপদ মৃত্যু পর্যন্ত আসতেই থাকে।

যারা এতে ধৈর্য ধারণ করে থাকে, তাদ্বারা তাদের গুনাহসমূহ মার্জিত হয়ে থাকে। অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, রাসূলে করীম (স) বলেন, যে মুসলমান মানুষের সহিত মিলেমিশে বসবাস করে এবং তাদের অত্যাচার-উত্পীড়ন ধৈর্যের সাথে বরণ করে নেয়, নির্জন বাসী সুফী সাধক ব্যক্তি হতে তারা বহুগুণে উত্তম।

অন্য আরেকটি হাদিসে এরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলে করীম (স) এরশাদ করেন, আল্লাহ পাক কোনো লোককে যে বিশেষ মরতবা দান করেছেন, তার কোনো ইবাদত বন্দেগি দ্বারা অর্জিত হয়। বরং শুধু ধৈর্য জনিত কারণেই আল্লাহ তা দান করেছেন।

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হজরত রাসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেন, যার জান ও মালের প্রতি বিপদ এসেছে কিন্তু সে তা গোপন রেখেছে, (হায় হুতাস ও হৈচৈ করে) লোকের নিকট তা প্রকাশ করেনি, তাকে ক্ষমা মার্জনা করা আল্লাহর ওয়াজিব হয়ে পড়ে।

আরেক হাদিসে এইরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, মানুষের ছওয়াবের প্রাচুর্য বিপদের প্রাচুর্যের প্রতি নির্ভরশীল। আল্লাহ পাক যে সম্প্রদায়কে অধিক ভালবাসেন, তাদের প্রতি অধিক বিপদ প্রদান করে থাকেন। যে ব্যক্তি বিপদে ধৈর্য ধারণ করে কিয়ামতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ তার জন্য অবধারিত। আর যে ব্যক্তি বিপদে অধৈর্য হয়ে পড়ে রোজ কিয়ামতে পেরেশানি তার জন্য সুনিশ্চিত।

আর এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হজরত রাসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন দাতা  ও শহীদ প্রভৃতি সবারই হিসাব গ্রহণ করা হবে কিন্তু বিপদাপদের হিসাব গ্রহণ করা হবে না। তাদের আমল ওজনের জন্য দাড়ি-পাল্লা স্থাপন করা হবে না। তাদের প্রতি শুধু ছওয়াবের (পুণ্যের) ধারা বর্ষিত হতে থাকবে। তখন দুনইয়ায় যারা কোনোরূপ বিপদগ্রস্ত হয় নাই কেবল নিরবচ্ছিন্ন সুখ-শান্তি ভোগ করেছে তারা আফসুস করে বলতে থাকবে, হায় দুনিয়াতে যদি আমরাও দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতাম এমনকি, যদি কাঁচি দিয়ে আমাদের গায়ের চামড়া খসে ফেলা হতো।

পার্থিব কাজ-কর্মসমূহের ধৈর্য, সহ্য এবং স্থিরতার প্রয়োজন। তাহলেই যে কোনো কার্য সুষ্ঠু এবং নির্ভুলভাবে সম্পাদিত হয়। আর অধৈর্য নিয়ে কাজ শুরু করলে তাতে বহু রকমের ত্রুটি- বিচ্যুতির আশঙ্কা থাকে। ফলে ধৈর্যহীন লোকেরা প্রায় ক্ষেত্রেই মারত্মক পরিণতির সম্মুখীন হয়। ধৈর্যহীন লোকেরা কাজে-কর্মে ভুল করে পরে তার জন্য অনুশোচনা করে। কিন্তু তখন আর তা সংশোধন করার সুযোগ থাকে না। এই জন্যই সর্বক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা বজায় রাখা এবং ধৈর্য ধারণ করা সকলেরই অবশ্য কর্তব্য।-ইত্তেফাক

মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার

বাংলাদেশ সীরাত মিশন, ঢাকা’র সভাপতি

০৪ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে