সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৪৯:৫৮

যে কারণে একই আয়াতের বিভিন্ন শানে নুজুল হয়

যে কারণে একই আয়াতের বিভিন্ন শানে নুজুল হয়

ইসলাম ডেস্ক: শানে নুজুলের ক্ষেত্রে বড় একটি সমস্যা হল, একই আয়াতের শানে নুজুলের ব্যাপারে কখনও কখনও একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তাফসীরের অনভিজ্ঞ লোকেরা নানা সংশয়-সন্দেহ ও বিভ্রান্তিতে পতিত হয়। কাজেই রিওয়ায়েতের পার্থক্যের কারণ স্পষ্ট হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে উসূলে তাফসীর ও উসূলে ফিকাহবিদগণের প্রণীত ফলপ্রসূ নীতিমালা নিন্মে পেশ করা হল।

(১) সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈগণের সাধারণ অভ্যাস ছিল, তারা কোন আয়াতের তাফসীর করে বলতেন- (আরবী) (আয়াতটি অমুক মাসয়ালা বা ঘটনা প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ)। এত বাহ্যতঃ বোঝা যায়, তারা শানে নুজুল বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সব সময় এ উদ্দেশ্যে বাক্যটি বলেননি বরং অমুক মাসয়ালা বা বিষয় অমুক আয়াতের হুকুমভূ এ কথা ব্যক্ত করা উদ্দেশ্য ছিল। যেমন, সূরা নিসায় আল্লাহ তাআলা ইবলিসের নিন্মোক্ত উক্তিটি নকল করেছেন।

অবশ্যই আমি তাদেরকে (মানুষকে) আদেশ করব। ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। (সূরা নিসা-১১৮) উপরিউক্ত আয়াতে কারীমাটি বস্তুতঃ পুরুষের খাসী হওয়া প্রসঙ্গে অবতীর্ণ। হযরত আনাস ইবনে মালেক [রা.] এবং হযরত ইকরামা [রা.] থেকে তাই বর্ণিত। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, রাসূলে কারীম [সা.]-এর যুগে কেউ খাসী হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতে কারীমাটি অবতীর্ণ হয়েছে। বরং উদ্দেশ্য হল, খাসী হওয়া শয়তানের ভাষায় আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতির অন্তর্ভূক্ত একটি শয়তানী কাজ। নতুবা বলতে হবে, আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করা মানে কেবল খাসী হওয়া। অথচ বাস্তবে সৃষ্টি বিকৃতির বহু পন্থা রয়েছে। তাফসীর গ্রন্থে এর বিশদ ব্যাখ্যা এসেছে। বস্তুতঃ সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনের এ বাচনভঙ্গির আলোকে শানে নুজুল সম্পর্কিত দুটি তথ্য জানা গেছে।

যেসব আয়াতে কারীমার তাফসীরে পৃথক দুটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার উভয় স্থানেই বলা হয়েছে। তবে উক্ত ঘটনা দুটিতে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। স্ব-স্ব স্থানে উভয় ঘটনাই সঠিক। কারণ, এক্ষত্রে এ ব্যাপারটি আয়াতের অমুক হুকুমভূক্ত দাবী করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। যেমন, আল্লাহ তাআলা নেককার বান্দাদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন- তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে। এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে হযরত আনাস ইবনে মালেক [রা.] বলেন, কতিপয় সাহাবায়ে কিরাম মাগরিব ও ইশার মাঝখানে নফল নামাযে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁদের ব্যাপারে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। তাঁরই আরেক বর্ণনা মতে ইশার নামাযের অপেক্ষায় সদা জাগ্রত সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপারে আয়াতটি নাযিল হয়েছে। আবার কোন কোন সাহাবী তাহাজ্জুদ নামায আদায়কারীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ বলেও দাবী করেছেন। আপাতঃ দৃষ্টিতে এসব পার্থক্য শানে নুজুলের মনে হলেও বাস্তবে এগুলো আয়াতের বিভিন্ন প্রয়োগক্ষেত্র মাত্র। মৌলিক কোন পার্থক্য নয় বরং এসব নেক আমল উক্ত আয়াতের বিভিন্ন প্রয়োগক্ষেত্র মাত্র। মৌলিক কোন পার্থক্য নয় বরং এসব নেক আমল উক্ত আয়াতের মর্মার্থের অন্তর্ভূক্ত।

(২) যেসব আয়াতের তাফসীরে পৃথক দুটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে কিন্তু একটিতে (আরবী) বলা হয়েছে। অপরটিতে স্পষ্ট করে কোন ঘটনাকে শানে নুজুল সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বর্ণনার উপর নির্ভর করতে হবে আর প্রথম বর্ণনাকে রাবী বা বর্ণনাকারীর ব্যক্তিগত ইজতিহাদ ও চিন্তাধারা বলে ধরে নিতে হবে। কারণ, সেটি শানে নুজুলের অর্থে স্পষ্ট নয়। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে- তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র। কাজেই তোমরা তোমাদের ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর। (সূরা বাকারা- ২২৩)

উপরিউক্ত আয়াতে কারীমা প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী [রহ.] হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর [রা.]-এর একটি নকল করেছেন- (আরবী) অর্থাৎ আয়াতটি স্ত্রীদের সাথে পশ্চাদপথে সহবাস করা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। পক্ষান্তরে হযরত জাবের [রা.] ও হযরত ইবনে আব্বাস [রা.] দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন- ইয়াহূদীদের ধারণা ছিল, স্ত্রীর সাথে পিছনের দিক থেকে যোনীপথে সঙ্গম করলে সন্তান টেরা চোখ। তাদের এই অলিক ধারণার প্রতিবাদে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং বুঝা গেল, সংগমের পথ কেবলই একটি। সেটি যোনীপথ। এ পথে সন্তান জন্মে। এজন্য যে কোন আসন-পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।

মোটকথা, উপরিউক্ত পরস্পর বিরোধী দুটি বর্ণনার মধ্যে হযরত জাবের [রা.] ও হযরত ইবনে আব্বাস [রা.]-এর বর্ণনাটি স্ববিস্তর ও সুস্পষ্ট। সুতরাং প্রাধান্য দিতে হবে এটিকেই। আর হযরত ইবনে উমর [রা.]-এর বর্ণনাকে তাঁর ব্যক্তিগত ইজতিহাদ সাব্যস্ত করতে হবে। তবে তিনি মূলতঃ বায়ূপথে সংগম করার বৈধতা বুঝাননি বরং তিনি এ আয়াত দ্বারা স্ত্রীর সাথে সমকামিতা হারাম হওয়া প্রমাণ করেছেন। কারণ, এ আয়াত দ্বারা স্ত্রীর সাথে সমকামিতা হারাম হওয়া প্রমাণ করেছেন। কারণ, এ আয়াতে স্ত্রীগণ ক্ষেত্র বা সন্তান প্রজন্মের মাধ্যমে বলে আখ্যায়িত হয়েছে। সমকামিতার মাধ্যমে তা আদৌ সম্ভব নয়।

(৩) যেসব আয়াতের তাফসীরে সহীহ সনদে একটি এবং দুর্বল সনদে আরেকটি রিওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে সহীহ সনদে বর্ণিত রিওয়ায়েতটি শানে নুজুল হিসেবে গৃহীত হবে এবং দুর্বলটি পরিত্যাক্ত হবে। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে- শপথ দ্বিপ্রহরের এবং রাতের ! যখন তা তমাসাচ্ছন্ন হয়ে যায়। আপনার প্রভু আপনাকে পরিত্যাগ করেননি। আপনার প্রতি অসন্তুষ্টও হননি। (সূরা দুহাঃ ১-৩)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত জুনদুব [রা.]-এর থেকে বর্ণিত আছে, একবার কোন সমস্যার কারণে হযরত রাসূলে কারীম [সা.] দুএক রাত তাহাজ্জুদ পড়তে পারেননি। ফলে জনৈক কাফির মহিলা তাঁকে কটাক্ষ করে বলে, হয়ত (নাউযুবিল্লাহ) তোমার শয়তান তোমাকে ছেড়ে গেছে। তখন উক্ত আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়।

পক্ষান্তরে ইমাম তাবরানী ও ইবনে আবী শাইবা [রহ.] বর্ণনা করেছেন, হাফস ইবনে মাইসারা তার নানী রাসূলে কারীম [সা.]-এর খাদেমা হযরত খাওলা [রা.] থেকে বর্ণিত, একবার একটি কুকুর ছানা অজান্তে নবীজীর চৌকির নিচে ঢুকে বসে থাকে এবং সেখানেই মরে যায়। এরপর চারদিন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ [সা.]-এর কাছে কোনও অহী এলো না। নবীজী আমাকে প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর রাসূলের ঘরে এমন কী ঘটল যে, জিবরাঈল আমার নিকট আসছে না। আমি ভাবলাম, ঘরটি ঝাড়-মোছ করা প্রয়োজন। সুতরাং আমি ঝাড়– দিলাম। একটি মরা কুকুর ছানা পাওয়া গেল চৌকির নিচে। সেটি বের করে ফেলে দেওয়ার পর উক্ত আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হল। কিন্তু এ রিওয়ায়েতটি বিশুদ্ধ নয়।

ইবনে হাজার আসকালানী [রহ.] বলেন, এ হাদীসের সনদে বেশ কজন মাজহূল (অজ্ঞাত পরিচয়) রাবী রয়েছেন। কাজেই প্রথমোক্ত শানে নুজুলই নির্ভরযোগ্য গণ্য হবে।

(৪) যেসব আয়াতের শানে নুজুলের ব্যাপারে বিপরীতমুখী দুটি ঘটনা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে এবং কোন একটিকে প্রাধান্য দানের কারণও পাওয়া যায়। যেমন, একটির সনদ অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী কিংবা তার সনদে প্রত্যক্ষদর্শী কোন রাবী রয়েছেন। তাহলে যার পক্ষে প্রাধান্য দানের কারণ থাকবে, সেটিই গ্রহণযোগ্যতা পাবে। যেমন, ইরশাদ হচ্ছে- তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। আপনি বলে দিন! রূহ হচ্ছে আমার প্রভুর আদেশের অন্তর্ভূক্ত। আর তোমাদেরকে খুব সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাঈল)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত ইবনে মাসউদ [রা.] বলেন, আমি মদীনাতে রাসূলে কারীম [সা.]-এর সঙ্গে পথ চলছিলাম। তিনি একটি খেজুরের ডালে ভর করে হাঁটছিলেন। পথিমধ্যে কজন ইয়াহূদী অতিক্রান্তহল। তাঁরা আপোষে বলাবলি করছিল, তাঁকে (নবীজীকে) কিছু প্রশ্নবানে বিব্রত) করা উচিৎ। অতঃপর তারা কাছে এসে বলল, আমাদেরকে রূহ সম্পর্কে অবহিত করুন। নবীজী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। অতঃপর মাথা উঁচু করলেন। আমি অনুভব করলাম, এইমাত্র তাঁর উপর অহী নাযিল হয়েছে। অতঃপর তিনি (আরবী) আয়াতখানা পাঠ করলেন।

এ প্রসঙ্গে তিরমিযী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস [রা.] থেকে আরেকটি রিওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, একবার কুফফারে কুরাইশ ইয়াহূদী পন্ডিতদেরকে বলল, তোমরা আমাদেরকে এমন কিছু প্রশ্ন শিখিয়ে দাও, যাতে আমরা তাঁকে (নবীজীকে বিব্রত) করতে পারি। ইয়াহূদীরা বলল, তোমরা তাঁকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন কর। তখন উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।

প্রথম বর্ণনার আলোকে আয়াতটি মদীনায় আর দ্বিতীয় বর্ণনা মতে মক্কায় অবতীর্ণ বলে মনে হয়। আবার সনদের দিক দিয়ে উভয় বর্ণনাই বিশুদ্ধ। অবশ্য প্রথমোক্ত বর্ণনার রাবী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। স্বয়ং ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ণনা থেকে বোঝা যায় না যে, ঘটনার রাবী ইবনে আব্বাস [রা.] সে সময় স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন কি না? কাজেই হযরত ইবনে মাসউদ [রা.]-এর রেওয়ায়েত প্রাধান্যযোগ্য।

(৫) কোন কোন আয়াতের শানে নুজুল একাধিক। অর্থাৎ প্রায় একই ধরনের কয়েকটি ঘটনার পর সে আয়াতটি নাযিল হয়েছে। বর্ণনার ক্ষেত্রেও এক এক রাবী এক এক ঘটনা উল্লেখ করেন। বাহ্যতঃ সেসব ঘটনা পরস্পর বিরোধীও বটে। কিন্তু মৌলিকভাবে তাতে কোন বৈপরীত্ব নেই। সবই শানে নুজুল। যেমন, সূরা নূরের লেআন সম্পর্কিত আয়াতসমূহ। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী [রহ.] হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস [রা.]-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেছেন, হযরত হেলাল ইবনে উমাইয়া [রা.] রাসূলুল্লাহ [সা.]-এর দরবারে আপন স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ দায়ের করেন। অতঃপর (আরবী) আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।

আবার বুখারী শরীফেই সাহ্ল ইবনে সাদ [রা.]-এর বরাতে বর্ণিত আছে, হযরত ইয়াইসির [রা.] নবীজীর কাছে প্রশ্ন করলেন, কেউ যদি আপন স্ত্রীকে পরপুরুষের সাথে মেলামেশা করতে দেখে তাকে হত্যা করে ফেলে, তবে কি তার মৃত্যুদ- হবে? এমন লোকের কি করা উচিৎ ? জবাবে নবীজী বলেন, তোমার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। অতঃপর তিনি এসব আয়াত পড়ে শোনান।

তদ্রুপ মুসনাদে বাজ্জারে হযরত হুযাইফা [রা.]- থেকে বর্ণিত আছে, এ ধরনের প্রশ্নোত্তর হযরত আবু বকর [রা.] এবং হযরত উমর [রা.]-এর মাঝে হয়েছিল। তখন এসব আয়াত অবতীর্ণ হয়। (ইতকানঃ১/৩৪)

বস্তুতঃ সবকটি ঘটনাই লেআনের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ঘটেছিল। কাজেই সবগুলোকেই শানে নুজুল বলা শুদ্ধ হবে।

(৬) আবার একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে এক রাবী উক্ত ঘটনা বর্ণনা করার পর এক আয়াত, আরেক রাবী আরেক আয়াত শোনান। এখানেও বাহ্যতঃ বিরোধ মনে হলেও বাস্তবে কোন বিরোধ নেই। যেমন, ইমাম তিরমিযী ও ইমাম হাকেম [রহ.] হযরত উম্মে সালামা [রা.] থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (সাহাবিয়াহ) বলেন, আমি একবার নবীজীর কাছে আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কুরআনে কারীমে হিজরত প্রভৃতির ব্যাপারে আমি তো মহিলাদের কোন আলোচনা দেখতে পাই না? তখন নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়।

তখন তাদের প্রতিপালক তাদের দুআ কবূল করবেন। কারণ, আমি তোমাদের কোন লোকের কর্ম নিষ্ফল করি না; সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। (সূরায়ে আলে ইমরান- ১৯৫)

আবার ইমাম হাকেম [রহ.] হযরত উম্মে সালাম [রা.] থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি আরয করেন, হে আল্লাহর রাসূল! কুরআনে কারীমে তো শুধু পুরুষের কথাই আছে। কোথাও মহিলাদের কথা আলোচিত হয়নি। তখন নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমাটি নাযিল হয়।

(৭) কোন কোন আয়াতে কারীমা বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একাধিকবারও অবতীর্ণ হয়েছে। প্রতিবার অবতরণের পিছনেই কোন না কোন তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। ফলে এক রাবী প্রথমবার অবতরণের ঘটনা বললেন আরেকজন রাবী দ্বিতীয়বার অবতরণের ঘটনা বললেন। কেউই অপর ঘটনা শোনালেন না। এমতাবস্থায়ও আপাতঃ দৃষ্টিতে বৈপরিত্ব দেখা যায়। বাস্তবে কোন বৈপরিত্ব নেই। কারণ, দুটি ঘটনার প্রেক্ষিতেই আয়াতটি দুবার পৃথকভাবে অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন,

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম [রহ.] বর্ণনা করেছেন, আবু তালেবের ইন্তেকালের সময় ঘনিয়ে এলে রাসূলে কারীম [সা.] বলেন চাচাজান আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়–ন। আমি আল্লাহর কাছে আপনার ব্যাপারে সুপারিশ করব। তখন আবু জাহ্ল, আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়া প্রমূখ উপস্থিত ছিল। তারা আবু তালেবকে ঈমান আনতে চাচ্ছে দেখে বলল, তুমি অন্তিম মুহূর্তে আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে সরে যেতে চাচ্ছ? উপস্থিত কাফিররা বারবার একথা বলতে থাকে। অবশেষে আবু তালেব বলে ওঠেন- না, আমি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মেই আছি। রাসূলে কারীম [সা.] বলেন, আমাকে বারণ করা পর্যন্ত আমি আল্লাহর দরবারে আপনার জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করতে থাকব। তখন নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমা নাযিল হয়। নবী এবং মুমিনের এ অধিকার নেই যে, তারা মুশরিকদের জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করতে থাকবে।

এ প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিযী [রহ.] হাসান সনদে হযরত আলী [রা.] থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জনৈক ব্যক্তিকে তার মুশরিক পিতা-মাতার জন্য ইস্তিগফার করতে শুনলাম। তাকে বললাম, তোমার পিতা-মাতা তো মুশরিক ছিল। তাদের পক্ষে কিভাবে ইস্তিগফার করছ? সে জবাব দিল, হযরত ইবরাহীম [আ.]-ও তো তার মুশরিক পিতা-মাতার জন্য ইস্তিগফার করেছেন। (আলী [রা.] বলেন, আমি ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ [সা.]-এর কাছে উপস্থাপন করলাম। তখন উক্ত আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়।

অনুরুপভাবে ইমাম হাকেম প্রমূখ হযরত ইবনে মাসউদ [রা.] থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার নবী করীম [সা.] কবরস্থানে গেলেন এবং এক কবরের পাশে বসলেন। অতঃপর দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত কেঁদে কেঁদে দুআ করতে থাকেন। পরে বললেন, এটি ছিল আমার মায়ের কবর। আমি আল্লাহর দরবারে তার জন্য দুআ করার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবতীর্ণ হয়েছে- (আরবী) আয়াতখানি। প্রিয় নিউজ
১২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে