শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৭, ০৮:৪৭:২৭

কিউবায় দ্রুত বাড়ছে মুসলিম জনসংখ্যা

কিউবায় দ্রুত বাড়ছে মুসলিম জনসংখ্যা

মোহাম্মদ হাসান শরীফ: প্রথমবারের মতো কোনো পোপ কিউবায় গিয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। পোপ দ্বিতীয় জন পল কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি সফর করেছিলেন। সফরটির মাধ্যমে ভ্যাটিকান আর ১৯৫৯ সালে ক্ষমতায় গিয়ে ধর্ম নিষিদ্ধকারী কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মধ্যকার বিরোধের অবসান ঘটে। ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ নেতাকে কিউবার সংখ্যাগুরু ক্যাথলিক জনতা অত্যন্ত উদ্দীপনার সাথে স্বাগত জানিয়েছিল। হাভানায় ক্যাস্ট্রোসহ লাখ লাখ লোক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এই ডামাডোলে কিউবানদের অন্য একটি ছোট্ট গ্রুপ ধর্মের প্রতি সরকারের ক্রমবর্ধমান সহিষ্ণুতার বিষয়টি লক্ষ করে। তারা মনে করতে থাকে, খ্রিষ্টান ধর্মের ব্যাপারে সরকার যেহেতু নমনীয় হয়েছে, ইসলামও সমস্যায় পড়বে না। কিউবা শিগগিরই ক্রমবর্ধমান হারে ইসলামকেও গ্রহণ করবে। তাদের বিশ্লেষণ ঠিক ছিল বলেই মনে হচ্ছে।
ইসলাম এখন কিউবায় দ্রুত বেড়ে চলেছে। তবে তা নীরবে। এখন সেখানে প্রায় ৯ হাজার মুসলিম বাস করে। কিউবার এক কোটি ১৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে তারা একেবারেই ক্ষুদ্র অংশ। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে অল্প কিছু মুসলিমের বিষয়টি মাথায় রাখলে তাদের বৃদ্ধি ব্যাপক বলে মানতেই হবে। ‘কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মীয় বহুত্বের দরজা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইসলাম বিকশিত হতে থাকে।’ এটা ছিল আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল লিও ওয়েন্সের বিশ্লেষণ।

কিউবায় ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটছে মূলত ছাত্র আর কূটনীতিবিদদের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমেÑ এমনটিই মনে করেন স্পেনের বার্সেলোনাভিত্তিক সাংবাদিক জুয়ান আলভারো। ২০১৪ সাল থেকে আলভারো কিউবার মুসলিমদের জীবনযাপন নিয়ে ছবি তুলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে কিউবার রাজধানী হাভানার মুসলিমদের প্রতি তার আগ্রহ ব্যাপক। অতি সম্প্রতি আলভারো কিউবায় ফিরেছেন। তিনি এখন আরো গভীরভাবে তার কাজে মনোনিবেশ করেছেন।
আলভারোর পরিচিত ওসমান রেয়েস ইসলাম গ্রহণ করেছেন ২০১৫ সালের জুনে। আলভারো জানান, ওসমান তাকে জানিয়েছেন, ইসলাম তাকে ‘আরো স্বাধীনতার’ অনুভূতি দিয়েছে। ওসমান বাস করেন কিউবার মধ্যাঞ্চলীয় নগরী ক্যামাগুয়েতে। ২০০০ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় মুসলিমরা সেখানে একটি বাড়িতে চলনসই ধরনের মসজিদ নির্মাণ করেছেন।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ইসলাম হলো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা ধর্ম। ২০৫০ সাল নাগাদ মুসলিমদের সংখ্যা বাড়বে প্রায় ৭৩ শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকা একটি ধর্মের অংশ হলেও কিউবার মুসলিমরা দৃশ্যত অদৃশ্যমান। অন্যদের কাছে তো নয়ই, এমনকি অন্য কিউবানদের কাছেও নয়। আলভারো বলেন, তার কিউবার বন্ধুরা পর্যন্ত জানিয়েছে, হাভানায় তারা কোনো মুসলমানকে চেনে না।
১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে কিউবায় যে কয়েকজন মুসলমান ছিলেন, তারা তাদের ধর্মচর্চার জন্য নির্যাতনের মুখে পড়বেন বলে শঙ্কায় ছিলেন। অবশ্য এখন দিন বদল হয়েছে। তাদের এখন নেতা আছে, শিক্ষক আছে, ইবাদত করার জন্য বড় বড় বাড়ি আছে। মসজিদ থেকেই নামাজ পড়ার পোশাক দেয়া হয়, রমজান মাসে মুসল্লিদের গোশতও সরবরাহ করা হয়।

ইসলাম গ্রহণ মানে কিউবানদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা। তাদেরকে তখন শূকর খাওয়া বন্ধ করতে হয়, অ্যালকোহল পান করা যায় না। বেশির ভাগ কিউবান মুসলিম সেটা মেনেও নেন। অবশ্য, যেখানে ইমাম নেই, সেখানে ইসলাম গ্রহণের পরও অনেকে আগের রীতিনীতি অনুসরণ করতে থাকেন।
কিউবা এখন সামগ্রিকভাবে সন্ধিক্ষণে রয়েছে। গত নভেম্বরে ফিদেল ক্যাস্ট্রো মারা গেছেন। এখন কিউবার আবার ধর্মীয় পুনর্জাগরণ ঘটে কি না তা দেখার অপেক্ষায় আছে অনেকে। জীবিত থাকার সময়ই ক্যাস্ট্রো তার ভাই রাহুলের হাতে দেশের দায়িত্বভার দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এখনো বেশ শক্তিশালী ও দৃঢ়চেতা। তবে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে কিছুটা সমস্যাও হবে। কিউবান সরকারে থাকা কট্টরপন্থীরা তাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হারিয়েছে। এখন কোন পথে কিউবা যাবে, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে কিউবানরা। ধর্ম আরো বেশি সুযোগ পাবে, না তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসবে; তা তারা নিশ্চিত হতে পারছে না। এটাই এখন কিউবার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।-নয়া দিগন্ত
২০ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে