সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:১০:৪২

‘নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিযুক্ত করবো’

‘নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিযুক্ত করবো’

ইসলাম ডেস্ক: : ধর্মীয় নানা বিশ্বাসগত বিষয় ছাড়াও এই সুরার কয়েকটি মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে: আদম সৃষ্টির ব্যাখ্যা, মানুষের প্রতি হুঁশিয়ারি, মানুষকে সুপথ দেখানোর ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে নেয়া মহান আল্লাহর অঙ্গীকার, তাওহিদ বা একত্ববাদ ও সুপথ থেকে বিচ্যুত নানা জাতির পরিণতি, প্রকৃত মু’মিনদের বিজয়, অতীতের কয়েকটি জাতির ও কয়েকজন নবীর ঘটনা। সূরা আ’রাফের মধ্যে মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিযুক্ত করবো’। সুরা আরাফে সাংস্কৃতিক, চারিত্রিক ও নৈতিক নানা বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়েছে। যেমন, কুরআন ঐশী বা খোদায়ী গ্রন্থ, এর অনুসরণ করার অপরিহার্যতা, মিজান কী, হযরত আদম (আ.)'র ঘটনা ও এর নৈতিক পরিণতি, মানবজাতির জন্য উপদেশ এবং কিয়ামত সংঘটনে ক্ষণকালও দেরি না হওয়া বা নির্ধারিত সময়ের এক মুহূর্ত আগেও তা না ঘটা। সুরা আরাফের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হিসেবে অপচয়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা, কাফিরদের অন্তিম অবস্থা, আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব সাধ্যের বেশি না হওয়া, জান্নাতবাসীদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, আ'রাফের বর্ণনা, জাহান্নামীদের কামনা ও প্রার্থনার আদেশও উল্লেখযোগ্য। হযরত নুহ (আ.)'র ঘটনা ও তার শিক্ষণীয় দিক, হযরত হুদ (আ.)'র ঘটনা ও তার ফলাফল, হযরত সালেহ (আ.)'র ঘটনা ও তার উদ্দেশ্য, হযরত লুত (আ.)'র ঘটনা, পুরুষ সমকামিতার নিন্দা, হযরত শোয়ায়েব (আ.)'র ঘটনা, পরিমাপে কম করার নিন্দা, দস্যুবৃত্তির অবৈধতা, হযরত মুসা (আ.) 'র ঘটনা ও তার চারিত্রিক ফল, হযরত হারুন (আ.)'র খিলাফত, চাক্ষুষভাবে আল্লাহকে দেখা অসম্ভব হওয়া, আল্লাহর কথপোকথন এবং সামেরির গো-বৎস তৈরির ঘটনাও এই সুরার অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু। এ ছাড়াও মহানবী (সা.)'র প্রশংসা, সুচনালগ্নেই আলী (আ.)'র বেলায়াত, বিচ্যুত বনি ইসরাইলি আলেম বলয়াম বাউর-এর ঘটনা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কিয়ামত সংঘটনের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান নেই, মানব সমাজের প্রকৃতি, আরবের মুশরিকদের অবস্থা ও জামাআতে নামাজ আদায়ের নির্দেশও এই সুরার আকর্ষণীয় ও জরুরি কিছু আলোচ্য বিষয়। সুরা আ’রাফের দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: “এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার ওপর নাজিল হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে ভয় দেখান। তাই এটি পৌঁছে দিতে আপনার মনে কোনরূপ দুঃখ থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ বা সতর্কবাণী।” এই আয়াতে বিশ্বনবী (সা.)'র প্রতি সান্ত্বনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলছেন, কুরআনের আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে বলে তা প্রচারের ব্যাপারে আপনার মনে কোনো ভয় বা আশঙ্কা থাকা উচিত নয়। রেসালাতের কঠিন দায়িত্ব পালনের ব্যাপারেও আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না। কুরআনের বাস্তবতা বা সত্যগুলোর ব্যাপারে শত্রুদের দুর্বিনীত আচরণ ও কঠোর প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারেও আপনার কোনো ভয় থাকা উচিত নয়। সুরা আরাফের ১১ থেকে ২৭ নম্বর আয়াতে আদম (আ.) সৃষ্টির ঘটনা এবং প্রতিনিধিত্বের সম্মান দেয়ার কারণে তাঁকে সিজদা করতে ফেরেশতাদের প্রতি নির্দেশ দান ও এ ব্যাপারে শয়তানের বিদ্রোহের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এই সুরার ১২ ও ১৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: "১২. আল্লাহ বললেন: আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সিজদা করতে বারণ করল? সে বলল: আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে। ১৩.আল্লাহ বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।" আসলে শয়তান একটি উপাদানকে অন্য উপাদানের সঙ্গে তুলনা করে ভুল করেছিল। তার ভুলের কারণ হলো এটা যে, সে বস্তুগত দিককে লক্ষ্য করলেও অন্য দিকগুলোকে সামান্যতমও গ্রাহ্য করেনি। অথচ সবকিছুর আগে তার উচিত ছিল মহান আল্লাহর হেকমাত বা প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করা এবং মানুষের সৃষ্টির অবস্তুগত ও ঐশী দিকটিকে গ্রাহ্য করা। কারণ, স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমি নিজ রুহ হতে তার সত্তায় ফুঁকে দিয়েছি’। অর্থাৎ মানুষকে ঐশী গুণাবলী অর্জনের উপযোগিতা দান করেছি যার ফলে সে ঐশী বা খোদায়ী নামগুলোর রহস্য সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এটাও দেখা উচিত ছিল যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিযুক্ত করবো।’ তাই আল্লাহ যাকে ঐশী গুণাবলী অর্জনের বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং নিজ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেছেন তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ অন্য কে হতে পারে? আসলে শয়তান যদি এ বিষয়গুলো সামনে রেখে চিন্তা করতো তবে সে এমন বড় ভুল করতো না এবং উচ্চ অবস্থান হারিয়ে চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হত না। শয়তান তার ভুলের জন্য ক্ষমাও চায়নি, বরং ভুল বা অন্যায় জিদের ওপর অটল রয়েছে এবং মানুষের বিরুদ্ধে তার হিংসার আগুন চির-জাগ্রত করে রেখেছে। সে আল্লাহর কাছে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ চেয়েছে এবং আল্লাহও তাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার শপথ নিয়েছে সে। মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে তাকে। অবশ্য আল্লাহ শয়তানের হাত থেকে রক্ষার ও সৌভাগ্য লাভের সরঞ্জাম হিসেবে মানুষকে দিয়েছেন পবিত্র প্রকৃতি, বিবেক-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা। এ ছাড়াও মহান আল্লাহ মানুষকে সুপথ দেখানোর জন্য পাঠিয়েছেন নবী-রাসূল। ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে