সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:২৫:৫৯

যে কারণে শিয়াদের মাজহাব সুন্নিদের চেয়ে ভিন্ন

যে কারণে শিয়াদের মাজহাব সুন্নিদের চেয়ে ভিন্ন

ইসলাম ডেস্ক: কেন শিয়া মুসলমানরা অধিকাংশ মুসলমানের মতাদর্শের অনুসরণ করেন না? অথচ মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি (যা বর্তমান যুগেও) সবচেয়ে বেশি জরুরি এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা দূর করার একমাত্র পথ হল অধিকাংশের মতাদর্শকে গ্রহণ। অধিকাংশ মুসলমানের মতাদর্শ বলতে আকীদার ক্ষেত্রে আশা’আরী মতবাদ ও ফিকাহর ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত আল জামাআত তথা সুন্নি মুসলমানদের মাজহাবকেই বোঝানো হয় সাধারণত। উপরের প্রশ্নের উত্তর রেডিও তেহরানের প্রকাশিত নিবন্ধের আলোকে নিম্নরূপে বর্ণনা করা হলো। প্রথমত: শিয়া মুসলমানরা মনে করেন শরীয়ত-সম্মত দলিল-প্রমাণই নবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতের অনুসরণকে অপরিহার্যতা দান করেছে। যেহেতু তাঁরা নবুওয়াতের ছায়ায় প্রশিক্ষিত হয়েছেন, তাঁদের ঘরে ফেরেশতাদের আসা-যাওয়া ছিল, সেখানে আল্লাহ্ ওহী ও কোরআন অবতীর্ণ করেছেন তাই শিয়ারা আকীদা-বিশ্বাস, ফিকাহ্ ও শরীয়তের আহ্কাম কোরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান, চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্য এবং সামাজিক আচরণের ক্ষেত্রে তাঁদের অনুসারী হয়েছেন। শিয়ারা এটি করেন কেবল যুক্তি-প্রমাণের প্রতি আত্মসমর্পণের কারণে। আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহর প্রতি বিশ্বাসের কারণেই শিয়া মুসলমানরা এ পথকে বেছে নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত: শিয়া মাজহাবের দৃষ্টিতে সুন্নি মাজহাব অন্য মাজহাবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য কোন যুক্তি উপস্থাপনে সক্ষম নয় বলে কিরূপে এর অনুসরণ অপরিহার্য বা ফরজ হতে পারে? শিয়া মুসলমানরা মুসলমানদের প্রদর্শিত যুক্তিগুলোর ওপর পরিপূর্ণ ও যথার্থ দৃষ্টি দিয়ে পর্যালোচনা ও গবেষণা চালিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা আহলে সুন্নাহর অনুসরণের পক্ষে উপযুক্ত কোন দলিল পাননি। আহলে সুন্নাতের অনুসরণের সপক্ষে যুক্তি হিসেবে অনেকেই তাদের ইমামদের নানা গুণ আর যোগ্যতা যেমন- আমানতদারী, ন্যায়পরায়ণতা, ইজতিহাদের ক্ষমতা, মর্যাদা প্রভৃতির কথা বলেন। কিন্তু এসব বিষয় শুধু তাঁদের মধ্যেই ছিল না, অন্যরাও এর অধিকারী ছিলেন। তাই শুধু তাঁদের মাজহাবের অনুসরণ কিভাবে ওয়াজিব বলে গণ্য হবে? শিয়া মুসলমানরা এটাও মনে করেন না যে জ্ঞান ও কাজের দিক থেকে সুন্নি মাজহাবের শ্রদ্ধেয় ইমামগণ শিয়া মাজহাবের ইমামদের চেয়েও উত্তম। বরং নবী (সাঃ)-এর পবিত্র বংশধর যাঁরা হলেন উম্মতের মুক্তির তরণী, ক্ষমার দ্বার(*৩), ধর্মীয় বিভক্তির ফেতনা হতে রক্ষার কেন্দ্র, হেদায়েতের পতাকাবাহী, রাসূলের রেখে যাওয়া সম্পদ এবং ইসলামী উম্মতের মাঝে রাসূলের স্মৃতিচিহ্ন- তাঁরা অবশ্যই সর্বোত্তম। কারণ তাঁদের সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তাদের থেকে তোমরা অগ্রগামী হয়ো না তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে, তাঁদের সঙ্গে সংযুক্ত হবার ক্ষেত্রে অবজ্ঞার পথ বেছে নিও না তাহলেও তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে, তাঁদেরকে কোন কিছু শিক্ষা দিতে যেও না কারণ তাঁরা তোমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী।” কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কারণে অন্যরা তাঁদের অগ্রগামী হয়েছেন। সুন্নি ভাইদের অনেকেই এ বিষয়ে অবহিত নন যে, পূর্ববর্তী সৎ কর্মশীলগণ ও পরবর্তীতে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে রাসূলের বংশধরদের অনুসারীগণ তথা শিয়া মুসলমানরা প্রকৃতপক্ষে মুসলিম উম্মাহর অর্ধেক ছিলেন এবং তারা আহলে বাইতের ইমামগণ ও রাসূলুল্লাহর রেখে যাওয়া দ্বিতীয় ثقل বা ভারী বস্তুর প্রতি ঈমান রাখতেন (প্রথমটি কুরআন ও দ্বিতীয়টি মহানবী-সা.’র পবিত্র বংশধর বা আহলে বাইত)। এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি দেখা যায় নি এবং তাঁরা হযরত আলী (আঃ) ও ফাতিমা (আঃ)-এর সময়কাল হতে এখন পর্যন্ত এ প্রথানুযায়ী আমল করেছেন। সে সময়ে আশা’আরী, চার মাজহাবের ইমামগণ বা তাঁদের পিতৃকুলেরও কেউই ছিলেন না। তৃতীয়ত: হিজরি প্রথম তিন শতাব্দীতে মুসলমানরা সুন্নি মাজহাবগুলোর কোনটিরই অনুসারী ছিলেন না। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর মুসলমানদের অবস্থান কোথায় আর এ মাজহাবগুলোরই বা অবস্থান কোথায়? অথচ সে সময়কাল ইসলামের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় ছিল বলে সুন্নি আলেমগণই স্বীকার করে থাকেন। আশা’আরী ২৭০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন ও ৩৩৫ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। আহমদ ইবনে হাম্বল ১৩৪ হিজরিতে জন্ম ও ২৪১ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। শাফেয়ী ১৫০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ ও ২০৪ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। মালিক ৯৫ হিজরিতে জন্ম ও ১৭৯ হিজরিতে ওফাত প্রাপ্ত হন। আবু হানীফা ৮০ হিজরিতে জন্ম ও ১৫০ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু শিয়ারা ইসলামের প্রাথমিক যুগ হতে নবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতের প্রতি অনুগত ছিলেন কারণ আহলে বাইত নবুওয়াতের ঘরের বিষয়ে বেশি জানতেন অথচ অন্যরা তখন সাহাবী ও তাবেয়ীদের অনুসরণ করতেন।(*৪) তাই কোন্ যুক্তিতে সব মুসলমানকে তিন শতাব্দী পর(৫) যেসব মাজহাবের উৎপত্তি হয়েছে সেগুলোর প্রতি আনুগত্যের শপথ দেয়া হয় অথচ প্রথম তিন শতাব্দীর অনুসৃত পথের কথা বলা হয় না? কি কারণে তাঁরা মহান আল্লাহর গ্রন্থ কোরআনের সমকক্ষ অপর ’ভারী বস্তু’ তথা মহানবীর (সা) রক্তজ বংশধর, তাঁর জ্ঞানের দ্বার, মুক্তি-তরণী, পথ-প্রদর্শক, উম্মতের রক্ষা পাবার পথ হতে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন? চতুর্থত: কেন ইজতিহাদের যে পথটি তিন শতাব্দী ধরে মুসলমানদের জন্য উন্মুক্ত ছিল হঠাৎ করে তা চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হল? এটি অক্ষমতার আশ্রয় গ্রহণ, আস্থা হতে অনাস্থা ও অলসতার দিকে প্রত্যাবর্তন বৈ কিছু নয়। এটি কি অজ্ঞতায় সন্তুষ্টি ও বঞ্চনায় তুষ্টতার নামান্তর নয়? কোন্ ব্যক্তি জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে নিজেকে এ বাস্তবতার প্রতি সন্তুষ্ট মনে করতে পারে এবং বলতে পারে? মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রেরিত নবী ও রাসূলদের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে সর্বোত্তম গ্রন্থ যা চূড়ান্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও আইনের সমষ্টি তা দিয়ে প্রেরণ করেছেন যাতে করে তাঁর দীন পূর্ণাঙ্গ ও নিয়ামত সম্পূর্ণ হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত সব কিছুর সমাধান তা থেকে পাওয়া যায়। অথচ তা চার মাজহাবের ইমামের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং তাঁরা সকল জ্ঞানকে সমবেত করবেন এমনরূপে যে অন্যদের অর্জন করার মত কিছু অবশিষ্ট থাকবে না যেন কোরআন, সুন্নাহ্ ও ইসলামের বিধি-বিধান এবং অন্যান্য দলিল-প্রমাণ কেবল তাঁদেরই মালিকানা ও সত্তায় দেয়া হয়েছে অন্যরা এ সকল বিষয়ে মত প্রকাশের কোন অধিকার রাখেন না। তবে কি তাঁরাই নবীগণের উত্তরাধিকারী ছিলেন? কিংবা এমন যে মহান আল্লাহ্ তাঁর নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের সিলসিলা তাঁদের মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন, এমন কি অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞানও তাঁদের দেয়া হয়েছে এবং তাঁদের এমন কিছু দেয়া হয়েছে যা বিশ্বজগতের কাউকে দেয়া হয় নি? না, কখনোই নয়, বরং তাঁরাও অন্য জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের মত ইসলামের খেদমতকারী ও ইসলামের প্রতি আহ্বানকারী ছিলেন এবং দীনের আহ্বানকারীগণ জ্ঞান ভাণ্ডারের দ্বারকে কখনো বন্ধ করেন না, তার পথকেও কখনো রুদ্ধ করেন না। তাঁদেরকে কখনো এজন্য সৃষ্টি করা হয় নি যে, বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে অবরুদ্ধ করবেন বা মানব জাতির চক্ষুকে বেঁধে রাখবেন। তাঁরা মানুষের হৃদয়কে তালাবদ্ধ, কানকে বধীর, চোখকে পর্দাবৃত ও মুখকে তালাবদ্ধ করতে আসেন নি। তাঁরা হাত, পা বা গর্দানেও কখনো শেকল পরাতে চান না। মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউই তাঁদের প্রতি এরূপ অপবাদ আরোপ করতে পারে না। তাঁদের নিজেদের কথাই এর সর্বোত্তম প্রমাণ।(*৬) পঞ্চমত: মুসলমানদের মুক্তি ও ঐক্যের প্রসঙ্গে শিয়া আলেমগণ মনে করেন মুসলমানদের ঐক্যের বিষয়টি সুন্নি হয়ে যাওয়া বা সুন্নি সম্প্রদায়ের শিয়া হবার ওপর নির্ভরশীল নয়, এজন্যই শিয়াদের ওপরও এমন কোনো দায়িত্ব বর্তায় না যে, নিজের মাজহাব থেকে সরে আসবে। যেহেতু এটি যুক্তিহীন তেমনি বাস্তবে এটি সম্ভবও নয় যা পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে মোটামুটি বোঝা যায়। তাই মুসলমানদের ঐক্য যেখানে সম্ভব তা হল সুন্নি ভাইয়েরা আহলে বাইতের পথকে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন মাজহাব বলে স্বীকৃতি দান করুন এবং মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত মাজহাবগুলো একে অপরকে যে দৃষ্টিতে দেখে তদ্রুপ আহলে বাইতের অনুসারী মাজহাবকেও তথা শিয়াদেরকেও দেখুন। যে কোন মুসলমানই যেরূপ স্বাধীনভাবে হানাফি, শাফেয়ী, মালিকী ও হাম্বলী মাজহাবের অনুসরণ করতে পারেন সেরূপ যেন আহলে বাইতের মতানুসারেও আমল করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে মুসলমানদের বিচ্ছিন্নতা ও বিভেদ একাত্মতায় পরিণত হবে এবং এ ঐক্য সুশৃঙ্খল ও সংহতও হবে। (উল্লেখ্য, মিশরের প্রখ্যাত সুন্নি আলেম আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান মরহুম শেইখ মাহমুদ শালতুত এক ঐতিহাসিক ফতোয়ায় শিয়া মাজহাবকে মুসলমানদের পঞ্চম মাজহাব বলে স্বীকৃতি দিয়ে আধুনিক যুগেও ইসলামী-ঐক্যের দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৫৯ সালের সেই ঐতিহাসিক ফতোয়ার পরও মিশরের আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত সুন্নি আলেমদের অনেকেই এই একই মত প্রকাশ করে আসছেন। এখানে শেইখ শালতুতের সেই ঐতিহাসিক ফতোয়ার ছবি দেয়া হল।) (শেইখ শালতুতকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ধর্মীয় দায়িত্ব ও বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে যে কোনো একটি মাজহাবের বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু শিয়া ইসনা আশারিয়া বা বারো ইমামী শিয়া মাজহাব সুন্নি মাজহাবগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। তদ্রুপ জাইদি শিয়া মাজহাবও নয়। এ অবস্থায় শিয়া ইসনা আশারিয়া মাজহাবের বিধি-বিধানের অনুসরণ কী ইসলামের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বা ইসলাম-বিরোধী নয়? জবাবে শেইখ শালতুত তাঁর এই লিখিত ফতোয়ায় বলেছেন: ইসলাম তো মুসলমানদের জন্য কোনো একটি বিশেষ মাজহাবের অনুসরণকে বাধ্যতামূলক করেনি। বরং যে কোনো মুসলমান ইসলামের যে কোনো মাজহাব বা যে কোনো ধারা থেকে সঠিকভাবে বর্ণিত বিধানের- যা ওই মাজহাব বা ধারার নির্দিষ্ট বইয়ে সংকলিত হয়েছে-অনুসরণ করতে পারেন। যারা (সুন্নিদের) চার মাজহাবের অনুসারী তারা (এর বাইরেও) অন্য যে কোনো মাজহাবের বা ধারার অনুসারী হতে পারেন তথা আগের মাজহাবের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন মাজহাবেরও অনুসারী হতে পারেন। জাফরি মাজহাব যা ইমামী ইসনা আশারী (বারো ইমামী) মাজহাব নামেও খ্যাত তা এমন এক মাজহাব যার অনুসরণ আহলে সুন্নাতের মাজহাবগুলোর অনুসরণের মতই বৈধ। তাই মুসলমানদের উচিত এ বাস্তবতাটিকে উপলব্ধি করা এবং কোনো একটি মাজহাব সম্পর্কে অন্যায্য সংকীর্ণতা বা বিদ্বেষ হতে দূরে থাকা। কারণ, আল্লাহর দীন ও শরিয়ত কোনো মাজহাবের অনুসারী ছিল না এবং তা কোনো বিশেষ মাজহাবের একচেটিয়া আধিপত্য বা একক কর্তৃত্বের আওতায়ও থাকবে না। বরং সব মাজহাবের নেতা বা ইমামরাই ছিলেন মুজতাহিদ বা ধর্মীয় আইন-বিশেষজ্ঞ। তাঁদের গবেষণা-লব্ধ বিধান বা মতগুলো আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। আর যারা বিশেষজ্ঞ বা মুজতাহিদ নন তারা তাদের পছন্দের যে কোনো মাজহাবের অনুসরণ করতে পারেন। ইবাদত ও লেন-দেন বা নানা কাজকারবারের ক্ষেত্রেও এই নীতি বা সত্যটি প্রযোজ্য। মাহমুদ শালতুতের স্বাক্ষর।) আর এটাও সবাই জানেন যে, চার মাজহাবের মধ্যে বিদ্যমান অনৈক্য শিয়া ও সুন্নির মধ্যকার বিদ্যমান অনৈক্য হতে কম নয়। এই মাজহাবগুলোর (ধর্মীয় মৌল ও শাখাগত বিষয়ে) প্রকাশিত হাজারো গ্রন্থ এর সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে রয়েছে। তাই কেন সুন্নিদের অনেকেই এ গুজব ছড়ান যে শিয়ারা আহলে সুন্নাহর বিরোধী? বরং তারা কেনো এ কথা বলেন না আহলে সুন্নাহ্ তথা সুন্নিরা শিয়া বিরোধী? কেন তাঁরা এটাও বলেন না যে আহলে সুন্নাতেরই তথা সুন্নিদেরই এক দল তাদের অন্যদলের বিরোধী? যদি চারটি মাজহাব থাকা জায়েজ হয় তবে কেন পঞ্চম মাজহাব জায়েজ হবে না? যদি চার মাজহাব ঐক্য ও সমঝোতার কারণ হয় কেন পাঁচ মাজহাবে পৌঁছলে তা বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার কারণ হবে? প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের প্রত্যেকের এক এক পথে গমন করা পরস্পর থেকে দূরে সরে যাবার কারণ নয় কি? উত্তম হত কোনো কোনো সুন্নি ভাই যেমনভাবে আমাদের ঐক্যের দিকে ডাক দিচ্ছেন তেমনিভাবে চার মাজহাবের অনুসারীদেরও সেই দিকে ডাক দিতেন। সুন্নি মুসলমানদের জন্য চার মাজহাবের মধ্যে ঐক্য স্থাপন বেশি সহজ নয় কি? কেন ঐক্যের বিষয়টিতে কেবল শিয়াদের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান রাখা হবে? কেনো সুন্নি ভাইদের কেউ কেউ একজন লোকের আহলে বাইতের অনুসারী হওয়াকে ইসলামী সমাজের ঐক্য ও সংহতির পরিপন্থী মনে করছেন, অথচ সুন্নি মাজহাবগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি, পথ ও চাওয়া-পাওয়ার হাজারো পার্থক্য সত্ত্বেও তাকে চার মাজহাবের ঐক্যের জন্য অন্তরায় মনে করছেন না?!! ১। আহলে সুন্নাহ’র ভাইয়েরা উসুলে দীনের ক্ষেত্রে দু’টি প্রধান ধারার অনুসারী : মু’তাযিলা ও আশা’ইরা। তবে এ দু’টি ছাড়াও অন্যান্য মতবাদ রয়েছে, তবুও তাদের বেশিরভাগই এ দু’য়েরই বেশি অনুসারী। আশা’ইরা মতবাদের প্রবক্তা আবুল হাসান আলী ইবনে ইসমাঈল আশা’আরী ছিলেন সাহাবী আবু মুসা আশা’আরীর বংশের লোক। তাই কখনো কখনো এ মাজহাবকে আশা’আরী মাজহাবও বলা হয়। ২।আহলে সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ্ ফুরুয়ে দীন অর্থাৎ ফেকাহগত বিধিবিধানের ক্ষেত্রে চার মাজহাবের অনুসারী অর্থাৎ হানাফি, মালিকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী পর্যায়ক্রমে আবু হানিফা, মালিক ইবনে আনাস, মুহাম্মদ ইবনে ইদরিস শাফেয়ী এবং আহমাদ ইবনে হাম্বলের নামে পরিচিত। আহলে সুন্নাহর এ চার মাজহাবকে একত্রে ‘মাজাহিব-ই আরবাআহ্’ বলা হয়।) # প্রাসঙ্গিক আলোচনা: আহলে বাইতের অনুসরণ ফরজ হবার সপক্ষে কিছু প্রমাণ: আহলে বাইতের ইমামগণ অন্যদের থেকে উচ্চ পর্যায়ের এবং একক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছিলেন। কারণ পূর্ববর্তী নবীগণের জ্ঞান তাঁরা রাসূল (সাঃ)-এর মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন এবং দীন ও দুনিয়ার বিধি-বিধান ও আহকাম তাঁর থেকেই শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। ১। এ কারণেই রাসূল (সাঃ) আল্লাহর মহান গ্রন্থের পাশাপাশি তাঁদের স্থান দিয়েছেন এবং জ্ঞানবানদের পথপ্রদর্শক বলে তাঁদের পরিচিত করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিফাক ও দ্বিমুখিতার সময় তাঁদেরকে মুক্তির তরণী হিসেবে এবং বিভেদ-বিচ্ছিন্নতার প্রতিকূল বায়ুপ্রবাহে নিরাপদ আশ্রয় বলেছেন। আরো বলেছেন তাঁরা ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা প্রাপ্তির পথ এবং এমন এক শক্তিশালী রজ্জু যা ছিন্ন হবার নয়। ২। আমীরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বলেছেন, “তোমরা কোথায় চলেছো, কোন্ দিকে যাত্রা করছো অথচ সত্যের ধ্বজা উত্তোলিত হয়েছে, তার চি‎হ্নগুলো প্রকাশিত হয়েছে, হেদায়েতের আলো প্রজ্জ্বলিত হয়েছে, এমতাবস্থায় অজ্ঞতার সাথে কোন্ দিকে যাত্রা করছ? কিরূপে ভ্রান্তিতে ঘুরপাক খাচ্ছ? অথচ নবীর আহলে বাইত তোমাদের সাথে রয়েছে, যারা সত্যের লাগাম, ধর্মের ধ্বজাধারী এবং সত্যের মুখপাত্র, তাই তাদের সেখানে স্থান দাও যেখানে কোরআনকে সংরক্ষণ কর (অর্থাৎ তোমাদের হৃদয় ও অন্তঃকরণ) ও তৃষ্ণার্তরা যেরূপ পিপাসা নিবারণের জন্য উদগ্রীব তেমনি তাদের জ্ঞানের সুপেয় ঝরনার পানি পানে তৃষ্ণা নিবারণের উদ্দেশ্যে তাদের দিকে ধেয়ে যাও। হে লোকসকল! রাসূল (সাঃ) থেকে এ সত্যকে শিক্ষালাভ কর। তিনি বলেছেন : আমাদের মধ্য হতে কেউ মৃত্যুবরণ করলে প্রকৃতই সে মৃত্যুবরণ করে না এবং আমাদের কেউই পুরাতন ও পশ্চাৎপদ হতে পারে না, সুতরাং যা জানো না তা বলো না। অসংখ্য সত্য সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে যাকে তোমরা অস্বীকার কর। ঐ ব্যক্তি যার বিপক্ষে তোমাদের কাছে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি তাদেরই (আহলে বাইতের) অন্তর্ভুক্ত। আমি কি তোমাদের মাঝে কোরআন (প্রথম ভারী বস্তু) অনুযায়ী আমল করি নি এবং আমার আহলে বাইতকে (দ্বিতীয় ভারী বস্তু) তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি না? আমি কি ঈমানের পতাকাকে তোমাদের মাঝে উড্ডীন করিনি?”১(*৭) অন্যত্র তিনি বলেছেন, “তোমাদের দৃষ্টি তোমাদের নবীর আহলে বাইতের প্রতি নিবদ্ধ করো। তারা যেদিকে যায় সেদিকে যাও, তাদের পদানুসরণ করো। তারা তোমাদের সত্য ও হেদায়েতের পথ হতে কখনো পথভ্রষ্ট করবে না এবং অধঃপতনের দিকে পরিচালিত করবে না। যদি তারা নীরবতা পালন করে তোমরাও নীরবতা পালন করবে, যখন সংগ্রামে লিপ্ত হয় সংগ্রামে লিপ্ত হবে, তাদের থেকে অগ্রগামী হয়ো না, তাহলে পথভ্রষ্ট হবে। তাদের থেকে পিছিয়ে পড়ো না, তাহলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।”২ অন্য এক স্থানে মানুষকে আহলে বাইতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, “তারা জ্ঞানের প্রাণ ও অজ্ঞতার মৃত্যুদাতা, তাদের সহনশীলতা তোমাকে তাদের জ্ঞান সম্পর্কে, তাদের বাহ্যিক ব্যবহার ও আচরণ তোমাকে তাদের অন্তরের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে এবং নীরবতা তোমাকে তাদের যুক্তির গভীরতা সম্পর্কে অবহিত করবে। তারা কখনোই সত্যের বিরোধিতা করে না এবং এ বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পতিত হয় না, তারা ইসলামের ভিত্তি এবং নিরাপত্তাদাতা, তাদের মাধ্যমেই সত্য তার প্রকৃত স্থানে সমাসীন হয় এবং বাতিল স্থানচ্যুত ও তার জিহ্বা কর্তিত হয়। তারা আল্লাহর আইন ও বিধি-বিধান সঠিকভাবে অনুসরণ করেছে ও তার ওপর আমল করেছে। ধর্মের বর্ণনা ও প্রচারকারী কত বেশি কিন্তু ধর্মকে সঠিকভাবে বুঝেছে এমন মানুষের সংখ্যা কত কম!”৩ অন্য একটি খুতবায় বলেছেন, “নবীর বংশধর সর্বোত্তম বংশধর, তাঁর পরিবারও সর্বোত্তম পরিবার, তাঁর আগমন সর্বোত্তম বংশ হতে, তাঁর জন্ম সেই বৃক্ষ হতে যা আল্লাহর ঘরে জন্মেছে এবং সম্মান ও মর্যাদার মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বৃক্ষের শাখা সমুচ্চ ও প্রসারিত এবং এর ফলও অগণিত।”৪ অন্যত্র বলেছেন, “আমরা নবী করিম (সাঃ)-এর জ্ঞানের ধারায় ইসলামী জ্ঞানের মানদণ্ড, গুপ্তভাণ্ডার ও দরজা। দরজা ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে ঘরে প্রবেশ অবৈধ। যে দরজা ছাড়া অন্য মাধ্যম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করবে তাকে চোর বলা হয়।’ এ খুতবারই অন্য অংশে বলেছেন, “তাঁদের বিষয়ে কোরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে। তাঁরা আল্লাহ্ পাকের প্রেরিত জ্ঞানভাণ্ডার। তাই যখন তাঁরা কথা বলেন সত্য বলেন। যখন নীরবতা পালন করেন কেউ তাঁদের অগ্রগামী হতে পারে না। দীনের অগ্রদূত ও পতাকাধারীরা কখনোই তাঁদের অনুসারীদের মিথ্যা বলতে পারে না, বরং অন্যদের বিবেক ও মন-মানসিকতাকে দীনের জন্য উপযোগী করে তোলাই তাঁদের দায়িত্ব।”১ আবার বলেছেন, “তোমরা কখনোই সত্য ও হেদায়েতের পথকে চিনতে পারবে না যতক্ষণ না এ পথ পরিত্যাগকারীদের চিনবে এবং কোরআনের যুক্তি ও মানদণ্ডকে কখনোই বুঝতে সক্ষম হবে না যতক্ষণ না এর বিরোধী ও লঙ্ঘনকারীদের চিনবে, কোরআনের সঙ্গে ততক্ষণ পর্যন্ত সংযুক্ত হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ঐ ব্যক্তিবর্গকে চিনবে যারা কোরআনকে পেছনে নিক্ষেপ করেছে। তাই কোরআনকে এর প্রকৃত ব্যাখ্যাকারীদের কাছ থেকে গ্রহণ কর (কারণ এ সকল বিচ্যুত ব্যক্তিবর্গকে তাঁরাই সঠিকভাবে চিনেন) যাঁরা জ্ঞানের প্রাণ ও অজ্ঞতার মৃত্যুদানকারী। তাঁরা এমন ব্যক্তিবর্গ (আহলে বাইত) যাঁদের বিচার ও ফয়সালা তোমাদেরকে তাঁদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে অবহিত করবে, তাঁদের নীরবতা তোমাদেরকে তাঁদের যুক্তির ক্ষুরধারতা সম্পর্কে এবং তাঁদের বাহ্যিক আচরণ তোমাদের তাঁদের অন্তরের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানাবে। তাঁরা দীনের বিরোধিতা করতে পারেন না এবং এ বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বেও পতিত হন না। কোরআন তাঁদের কাছে প্রত্যক্ষ সাক্ষীরূপে নীরব বর্ণনাকারী।”২ এ খুতবাগুলো ছাড়াও এ মহান ব্যক্তির অন্য অনেক বক্তব্য আমাদের কথার সত্যতা প্রমাণ করে। এরকম একটি বক্তব্য হল, “আমাদের মাধ্যমেই তোমরা অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার অন্ধকার হতে মুক্তি পেয়েছ, আমাদের সাহায্যেই তোমরা উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছ, তোমাদের সৌভাগ্যের সকাল আমাদের আলোকরশ্মিতে উদ্ভাসিত হয়েছে।”৩ অন্যত্র বলেছেন, “হে লোকসকল! সত্যপথের আহ্বানকারী ও সদুপদেশদাতা যিনি সৎ কর্মশীল অর্থাৎ কর্মের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তাঁর অস্তিত্বের প্রদীপরূপ আলোর মাধ্যমে নিজেদের আলোকিত করো, সেই পরিচ্ছন্ন ও সুপেয় ঝরণা যার মধ্যে কোন দূষণ ও আবর্জনার অস্তিত্ব নেই তা থেকে পানি গ্রহণ কর।”৪ অন্য একস্থানে নিজেদের পরিচয় এভাবে দিয়েছেন, “আমরা নবুওয়াতের বৃক্ষ, রেসালতের ভিত্তি, ফেরেশতাদের গমনাগমনের স্থান, জ্ঞানের খনি ও প্রজ্ঞার উৎসস্থল। আমাদের বন্ধু ও সাহায্যকারীরা রহমতের প্রতীক্ষায় রয়েছে, আর আমাদের শত্রু ও বিদ্বেষীরা আল্লাহর শাস্তি ও গজবের অপেক্ষায়।”৫ আবার বলেছেন, “আমরা ভিন্ন তারা কোথায় যারা নিজেদেরকে মিথ্যা ও অন্যায়ভাবে জ্ঞানের প্রতিভূ ভেবেছিল? তারা লক্ষ্য করুক, মহান আল্লাহ্ আমাদের কিরূপ উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন ও তাদের বঞ্চিত করেছেন। আমাদের দিয়েছেন ও তাদের বঞ্চিত করেছেন। আমাদের তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিয়েছেন ও তাদের বহিষ্কার করেছেন। আমাদের মাধ্যমেই মানুষ হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে ও অন্ধকার হৃদয়ের অধিকারীরা আলোকিত হবে। ইমাম ও নেতা কুরাইশ হতে এবং তাদের অস্তিত্বের এ পবিত্র বৃক্ষের উৎপত্তি বনু হাশিম থেকে। তাই অন্যরা ইমামতের যোগ্য নয় এবং তারা ছাড়া অন্যরা নেতৃত্ব লাভ করতে পারে না।” যারা ইমামগণের বিরোধী তাদের সম্পর্কে একই খুতবায় বলেছেন, “তারা এ পৃথিবীর জীবনকে গ্রহণ করেছে ও পরকালীন অনন্ত জীবনকে অগ্রাহ্য করেছে। তারা সুপেয় পানি ত্যাগ করে নিকৃষ্ট ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি পান করেছে।”১ অন্য খুতবাতে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যেমন বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, আল্লাহ্, তাঁর রাসূল ও তাঁর আহলে বাইতকে সত্য ও সঠিকভাবে চিনেছে সে শহীদ হয়েছে এবং তার বিনিময় আল্লাহর কাছে এবং ঐ কর্মেরও তারা পুরস্কার পাবে যে কর্মের সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করেছিল। সৎ কর্ম করার আগ্রহ ও ইচ্ছা, মহানবীর (সা) আহলে বাইতের পক্ষে অস্ত্রধারণ সংগ্রাম ও জিহাদের সমান ও সমকক্ষ বলে গণ্য হবে।”২ উপরোক্ত খুতবার মত অন্যত্র বলেছেন, “আমরা পবিত্র, সম্মানিত ও আদর্শ মানব। আমাদের প্রতীক ও চি‎হ্ন নবী-রাসূলগণেরই প্রতীক‎চি‎হ্ন, আমাদের দল আল্লাহরই দল, আমাদের বিরুদ্ধাচারণকারীরা শয়তানের অনুসারী ও অনুচর। যারা আমাদের ও আমাদের শত্রু দেরকে সমান বলে জানে তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”৩ ইমাম হাসান (আ.) যিনি রাসূলের দৌহিত্র ও বেহেশতের যুবকদের নেতা তিনি এক খুতবায় বলেছেন, “আমাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর, আমরা তোমাদের ইমাম ও নেতা।”৪ ৩। ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন আসসাজ্জাদ (আঃ) যখনই يا أيّها الّذين آمنوا اتّقوا الله و كونوا مع الصّادقين ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যপন্থীদের সঙ্গে থাক’ এ আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন তখন তিনি বেশি দোয়া করতেন। তিনি এ দোয়ায় সত্যপন্থীদের স্তরে পৌঁছার ও তাঁদের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য প্রার্থনা করতেন। সে সাথে আহলে বাইতের শত্রুরা দীনের নেতৃবর্গ ও নবুওয়াতের বৃক্ষসমূহের ওপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছিল এবং যে সকল বিদআতের প্রচলন ঘটিয়েছিল সে বিষয়গুলো এ দোয়ায় উল্লেখ করে তা থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি চাইতেন। অতঃপর এর সঙ্গে নিম্নোক্ত কথাগুলো যোগ করেছেন, “অন্যরা আমাদের বিষয়ে কর্তব্যে অবহেলা করেছে আর এ অপকর্মের ব্যাখ্যা প্রমাণের জন্য কোরআনের রূপক (মুতাশাবিহ) আয়াতসমূহের ভিত্তিতে যুক্তি প্রদর্শন করেছে। তাদের নিজেদের মনগড়া মতে এ আয়াতগুলোকে ব্যাখ্যা ও তাফসীর করেছে এবং আমাদের বিষয়ে নবী করীম (সাঃ)-এর প্রতিষ্ঠিত কথা ও হাদীসকে অস্বীকার করেছে। সুতরাং ভবিষ্যতের মুসলমানরা আমাদের ছাড়া কার আশ্রয় গ্রহণ করবে?! এ জাতি অতীতের দিকে ফিরে গেছে এবং এ উম্মত বিভক্তিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, একে অপরকে মিথ্যুক ও কাফের বলছে অথচ মহান আল্লাহ্ বলেছেন: তাদের মত হয়ো না যারা স্পষ্ট সাক্ষ্য ও প্রমাণ জানার পরও পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত হয়ে পড়েছে।১ অতএব, কার ওপর মানুষ বিশ্বাস করে আল্লাহর বাণীর সত্যতার প্রমাণ পেশ করবে, আল্লাহর বিধানের ব্যাখ্যা প্রদান করবে! এক্ষেত্রে কোরআনের সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হেদায়াতপ্রাপ্ত ইমামগণের সন্তানগণ যাঁরা উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ তাঁরা ছাড়া কাউকে তোমরা পাবে কি? কেননা মহান আল্লাহ্ তাঁদের মাধ্যমেই তাঁর বান্দাদের ওপর প্রমাণ উপস্থাপন করেন। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে অবশ্যই স্পষ্ট নিদর্শন পাঠিয়েছেন। তোমরা কি তাঁদের পরিচয় জানো? এ স্পষ্ট নিদর্শন রেসালতের পবিত্র বৃক্ষ হতে উৎসারিত নবীর বংশধর যাঁদের মহান আল্লাহ্ সব অপবিত্রতা ও কলুষতা হতে মুক্ত করেছেন ও পবিত্ররূপে ঘোষণা করেছেন, তাঁরা ছাড়া অন্য কেউ হতে পারে কি? যাঁদের মহান আল্লাহ্ অপবিত্রতা হতে সংরক্ষণ করেছেন এবং যাদের ভালবাসা ও বন্ধুত্বকে কুরআনে ফরয ও অপরিহার্য বলে ঘোষণা করেছেন। তাঁরা ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর নিদর্শন হতে পারে না।”২ ইমাম সাজ্জাদের এ বক্তব্যটি এবং আমীরুল মুমিনীন আলী (আঃ)-এর খুতবাগুলোর বিভিন্ন অংশ যথার্থভাবে লক্ষ্য করলে যে কেউ ভালভাবেই বুঝতে পারবেন যে শিয়া মাজহাবকে এ বাণীগুলো কিরূপ স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত করে। এ বক্তব্যগুলোকে অন্যান্য ইমামদের বক্তব্যসমূহের নমুনা হিসেবেও গ্রহণ করা যায়। কারণ এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে এবং এসব বিষয়ে বর্ণিত হাদীসগুলো বহুল বর্ণিত ও মুতাওয়াতির। সূত্র- ১। নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ৮৭ ২। নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ৯৭। ৩। নাহজুল বালাগাহ্, বাণী ২৩৯ (সুবহি সালিহ্) ৪। নাহজুল বালাগাহ্, বাণী ৯৪ (সুবহি সালিহ্) এবং ১- নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ১৫৪; ২। নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ১৪৭; ৩। নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ৪; ৪। নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ১০৫; ৫। নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ১০৯;১। নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ১৪৪; ২। নাহজুল বালাগাহ্, ১৯০ নং খুতবার অংশ; ৩। আস্সাওয়ায়েক- ইবনে হাজার, পৃষ্ঠা ১৪২; ৪। আস্সাওয়ায়েক- ইবনে হাজার, পৃষ্ঠা ১৩৭।) ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে