সোমবার, ০৩ এপ্রিল, ২০১৭, ০৯:০২:০৮

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল

৭. অবিশ্বাসীরা বলে, তার প্রতি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন? তুমি তো শুধু সতর্ককারী ও প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই সতর্ককারী আছে। (সুরা : রাদ, আয়াত : ৭)

তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, মক্কার কাফিররা মহানবী (সা.)-এর কাছে দ্রুত আজাব প্রত্যাশা করে। এ আয়াতে ঈমান না আনার পেছনে তাদের বাহানা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে হাজারো মুজেজা বা অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা নতুন মুজেজা দাবি করত। কাফিরদের মধ্যে গোয়ার্তুমি ছিল প্রবল। সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা তাদের ছিল না। কাজেই বিশ্বনবী (সা.) যদি তাদের আবদার অনুযায়ী কোনো মুজেজা প্রদর্শন করতেন, তাহলে তারা তা দেখেও হেদায়েতের পথে চলত না। তারা বিভিন্ন বাহানা করত। আসলে পাপের কালিমায় যাদের অন্তর আচ্ছাদিত হয়ে যায়, তাদের পক্ষে সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না।

কাফিররা বলত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) কেন অন্যান্য নবী-রাসুলের মতো অলৌকিক কাজ প্রদর্শন করেন না? তারা মহানবী (সা.)-এর কাছে মুসা (আ.)-এর লাঠির মতো, সালেহ (আ.)-এর উটনীর মতো এবং ঈসা (আ.)-এর মৃতকে জীবিত করার মতো মুজেজা দাবি করে।

আলোচ্য আয়াতে কাফির-মুশরিকদের এ ধরনের বক্তব্যের জবাব দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, প্রথমত, প্রত্যেক নবীর মুজেজা তাঁর সময়ের সামাজিক প্রথা ও রীতির ভিত্তিতে হয়ে থাকে। যেমন—হজরত মুসা (আ.)-এর সময় মিসরে জাদুর ব্যাপক প্রচলন ছিল। কাজেই হজরত মুসা (আ.)-এর মুজেজাও ছিল অনুরূপ। ফলে হজরত মুসা (আ.) যখন তাঁর মুজেজা প্রদর্শন করেন, তখন ফেরাউন তাঁকে ‘বড় জাদুকর’ আখ্যায়িত করেছিল। তেমনিভাবে হজরত ঈসা (আ.)-এর যুগে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি সাধিত হয়েছিল। তাই হজরত ঈসা (আ.)-এর মুজেজাও ছিল এর সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি মৃতপ্রায় ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেন। কিন্তু হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে যুগে নবুয়ত লাভ করেছেন সে যুগে আরবে কাব্য ও সাহিত্য বেশ উত্কর্ষতা লাভ করেছিল। কাজেই বিশ্বনবীর ওপর যে মহাগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়, তা সাহিত্যমানের দিক থেকে অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়।

দ্বিতীয়ত, নবী-রাসুলদের আগমনের উদ্দেশ্য অলৌকিক কাজ প্রদর্শন করা নয়। পৃথিবীতে তাদের আগমন ঘটেছে মানুষকে সতর্ক করার জন্য এবং তাদের সত্য পথ প্রদর্শন করার জন্য।

মুজেজা প্রকাশ করা নবীদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ চাইলে যেকোনো সময় অলৌকিক বিষয় প্রকাশ করতে পারেন। মহানবী (সা.)-কেও নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী মুজেজা প্রকাশের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘বলে দাও, যদি আমার কাছে তা থাকত, যা তোমরা শিগগির সংঘটিত হওয়ার জন্য দাবি করছ, তাহলে আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিবাদের মীমাংসা কবেই হয়ে যেত। আল্লাহ জালিমদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৮)

ওপরে উল্লিখিত আয়াতে আরো একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি হলো, প্রত্যেক জাতির জন্যই সতর্ককারী আছে। আল্লাহর রীতি হলো, তিনি সব জাতির জন্য এমন কাউকে না কাউকে প্রেরণ করেন, যে মানুষকে সত্য ও কল্যাণের পথে আহ্বান করবে। এমন ব্যক্তি নবীও হতে পারেন, কিংবা নবীদের পদাঙ্ক অনুসরণকারীও হতে পারেন। নবী না পাঠিয়ে, সতর্ককারী না পাঠিয়ে কোনো জাতির ওপর আজাব অবতীর্ণ করা হয় না।

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পরে কোনো নবী বা রাসুলের আগমন না ঘটলেও মহান আল্লাহ প্রত্যেক সমাজেই আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন আলেম পাঠাবেন, যারা সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ
৩ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে