মঙ্গলবার, ০৬ জুন, ২০১৭, ১০:৩৬:৩৫

যেসব কারণে আরবি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে

যেসব কারণে আরবি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে

ইসলাম ডেস্ক:  আমি সব রাসুলকেই তার জাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি (আল্লাহর বাণী) তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন আর যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪ (দ্বিতীয় পর্ব)]

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে কোরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা স্বভাষী করে সব নবী পাঠিয়েছেন, যাতে কেউ এটা বলতে না পারে যে আমরা নবীর ভাষা বুঝতে পারিনি।

সব নবী মাতৃভাষায় মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেছেন। মহানবী (সা.) ছিলেন আরবি ভাষাভাষী। কোরআনও নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়। কোরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার তাৎপর্য হলো, মক্কা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত। সেখানকার ভাষা আরবি।

তাই কেন্দ্রস্থলের ভাষা আরবিতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে আরবি ভাষাভাষীরা সবার আগে তা বুঝতে পারে। আর অন্য ভাষাভাষীরা তাদের মাধ্যমে কোরআন বুঝতে পারে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা বরকতময় কিতাব, যা আমি নাজিল করেছি।

এটি আগের আসমানি কিতাবগুলোর সমর্থক, যাতে তুমি এর মাধ্যমে জনপদগুলোর কেন্দ্র (মক্কা) ও এর আশপাশের লোকদের সতর্ক করতে পারো। যারা পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তারা এর প্রতিও বিশ্বাস রাখে এবং তারা তাদের নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। ’ (সুরা : আন’আম, আয়াত : ৯২)

বিশ্বে হাজার হাজার ভাষা প্রচলিত আছে। আছে অগণিত জাতি। দেশ, কাল ও জাতির কথা বিবেচনা করে প্রত্যেকের নিজ নিজ ভাষায় কোরআন নাজিল করা আল্লাহর পক্ষে কঠিন ছিল না। এর পরও কোরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার অনেক কারণ আছে—

এক. আদিপিতা হজরত আদম (আ.) জান্নাতে অবস্থানকালে তাঁর ভাষা ছিল আরবি, দুনিয়ায়ও তিনি আরবিতেই কথা বলতেন। দুই. আদম (আ.) থেকে শুরু করে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত পৃথিবীর সব নবী-রাসুলের জন্য যেসব সহিফা বা কিতাব নাজিল হয়েছে, সবই ছিল আরবি। দেশ, কাল ও জাতির কথা বিবেচনা করে জিবরাইল (আ.) প্রত্যেক নবীর কাছে তাঁদের ভাষায় অনুবাদ করে ওহি নাজিল করেছেন।

অর্থাৎ সব আসমানি গ্রন্থের মূল ভাষা ছিল আরবি। (আল-ইতকান ফি উলুমিল কোরআন) তিন. দুর্বল সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, জান্নাতের ভাষা হবে আরবি। চার. আরবি ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ ভাষায় ভাব প্রকাশ করার অসংখ্য উপায় আছে।  প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে আরবি ভাষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। ফলে প্রত্যেকেই নিজেদের প্রয়োজনমাফিক ভাষাটি সহজেই শিখে নিতে পারে।

তাই ইসলামের দাওয়াত নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম যখনই কোনো নতুন অঞ্চলে গেছেন, সেখানকার মানুষ ইসলাম কবুলের সঙ্গে সঙ্গে ওই ভাষাও আয়ত্ত করে নিয়েছে।

ফলে মক্কা-মদিনার সীমানা ছাড়িয়ে আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো, সুদান, মৌরিতানিয়া, মিসর, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় ভাষা হয়ে ওঠে আরবি। অথচ এসবের কোনোটিতেই আরবি তাদের জাতীয় ভাষা ছিল না। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই কোরআনের ভাষা হিসেবে আরবিকে বেছে নেওয়া হয়।

কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য পবিত্র কোরআন ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি ভাষা বেছে নেওয়া হয়েছে। একাধিক ভাষায় কোরআন নাজিল হলে কোরআনের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি বেড়ে যেতে পারত। যে যার খেয়ালখুশিমতো কোরআনকে ব্যবহার করত।

শুধু একটি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ হওয়ায় ওই পথ বন্ধ করা গেছে। তাই একটি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ হওয়ায় বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। (তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন)
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ

এমটিনিউজ২৪/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে