বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:৪২:৩৬

সন্তানের উপর মায়ের অধিকার

সন্তানের উপর মায়ের অধিকার

ইসলাম ডেস্ক: পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে ‘মা’। জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালবাসা আমাদের সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় সেই মানুষটিই হলো ‘মা’। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেয় তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন ‘মা’। প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে উঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা মায়ের। পৃথিবীর প্রতিটি মা যদি সহিষ্ণু, মমতাময়ী, কল্যাণকামী না হতেন তবে মানব সভ্যতার চাকা শ্লথ হয়ে যেত। জন্মের সূচনাপর্ব থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়। সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠার পেছনে মা-বাবার উভয়ের হাত রয়েছে-একথা অনস্বীকার্য। তবে এটি সর্বজনস্বীকৃত যে, এক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাই প্রধান। মা হচ্ছেন সন্তানের সুখ-দুঃখের অনন্ত সাথী। মা সন্তানের সুখে সুখী হন, আবার সন্তানের দুঃখে দুঃখী হন। নিজের সমস্ত স্বাদ-আহ্লাদ, আনন্দ বেদনা বিলিয়ে দেন সন্তানের সুখ-শান্তির জন্য। তার হৃদয়ের প্রবহমান প্রতিটি রক্ত কণিকায় রয়েছে সন্তানের জন্য ভালবাসা। মা তার সন্তানকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন। সন্তানকে ঘিরেই মায়ের স্বপ্নের ডাল-পালা বিস্তার করতে থাকে। পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের ভালবাসা ও দানই নিস্বার্থ ও বিনিময়হীন। মায়ের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় আমরা দেখতে পাই বসুন্ধরার এই বিচিত্র সৌন্দর্যের সমারোহ। মায়ের কাছেই আমরা গ্রহণ করি জীবনের প্রথম পাঠ। ইসলামের ঘোষণা হচ্ছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ মায়ের সেবা শুশ্রƒষার দ্বারা বেহেশতের অধিকারী হওয়া যায়। বাবার তুলনায় ইসলাম মায়ের অধিকার অধিক ঘোষণা করেছে। এক সাহাবি হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, আমার সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? আল্লাহর রাসুল (সা.) স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন, তোমার মা। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমার মায়ের পরে আমি কার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করব? আল্লাহর নবী তাগিদ দেয়ার জন্য বললেন, তোমার মায়ের পরেও তোমার মায়ের অধিকার পালন করতে হবে। তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ তোমাকে করতে হবে। এভাবে তিনবার আল্লাহর রাসুল (সা.) মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার কথা বলেছেন। চতুর্থবার বলেছেন, অতঃপর তুমি তোমার বাবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করবে।’ মায়ের সেবা করা জিহাদের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত যদি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ হতো, তবে সন্তানকে নির্দেশ দেয়া হতো তার মাকে সেজদা করার জন্য।’ আপনি যত বড় শিক্ষিতই হোন, যত প্রতিভাধরই হোন, আপনার মা অশিক্ষিতা হলেও মায়ের পায়ের নিচেই আপনার জান্নাত। যে সন্তান মায়ের সান্নিধ্য গ্রহণ করার পাশাপাশি মাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে তারাই সাফল্যের সন্ধান পেয়েছে। সন্তানের কামিয়াবি নিহিত আছে মায়ের দোয়ায়। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা, করুণা মমত্ববোধ আল্লাহর অশেষ কুদরতেরই নিদর্শন। এটি শুধু মানুষ নয় প্রাণিজগতের সব প্রাণীর জন্যও এক সাধারণ সত্যি। এ জন্য আল্লাহ এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর মায়ের হক বেশি। একাধিক হাদিসে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি সর্বাগ্রে কার সঙ্গে সদাচরণ করব? রসুল (সা.) বলেন, তোমার মায়ের সঙ্গে। লোকটি প্রশ্ন করল, তারপর? উত্তর এলো তোমার মা। লোকটি আবার জানতে চাইল অতঃপর কে? রসুল (সা.) এবারও জবাব দিলেন তোমার মা। ওই লোক চতুর্থবার একই প্রশ্ন করলে রসুল (সা.) বলেন, তোমার পিতা।’ (বোখারি ও মুসলিম) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৈশবে তার জননীকে হারান। জননীর প্রতি দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য তার সেভাবে হয়নি। আবু দাউদ শরিফের হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন তার দুধমা বিবি হালিমা আসতেন তখন তিনি তাকে দেখামাত্রই সম্মান জানিয়ে ওঠে দাঁড়াতেন। নিজের পাগড়ি অথবা গায়ের চাদর বিবি হালিমাকে বসার জন্য পেতে দিতেন। মায়ের প্রতি সদাচরণ সন্তানের জন্য অবশ্য পালনীয়। আল্লাহর কাছে মায়ের মর্যাদা কেমন তা প্রকাশ পেয়েছে বায়হাকি শরিফের হাদিসে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মায়ের দোয়া অতি দ্রুত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। আল্লাহ বান্দার সব গোনাহ ইচ্ছমতো ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু মাতা-পিতার অবাধ্যতার গোনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। বরং ওই অবাধ্য সন্তানকে এই পার্থিব জীবনের মৃত্যুর আগে শাস্তি দিয়ে থাকেন। (বায়হাকি)। ১৯ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে