পরকালে যে ব্যক্তির জন্য আল কোরআন সুপারিশ করবে
ইসলাম ডেস্ক: আল কোরআন আল্লাহ্র বাণী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ। আল কোরআন হলো সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা বিশ্বমানবতার জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ وَإِنَّهُۥ لَتَنزِيلُ رَبِّ ٱلعَٰلَمِينَ﴾ [الشعراء : ١٩٢]
অর্থ: ‘‘নিশ্চয় এ কোরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে’’ [সূরা আশ-শু‘আরা-১৯২]।
আল্লাহ তা’য়ালা জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে মানব জাতির হেদায়াতের জন্য রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। এটি অবতীর্ণ হয়েছে বিশ্বমানবতার মুক্তি, সৎ আর সত্যের পথ দেখানোর জন্য। অন্ধকারাচ্ছন্ন এক বিভীষিকাময় জাহেলি সমাজে কোরআন এনেছিল আলোকময় সোনালি সকাল। সৃষ্টিকূলের ওপর যেমন স্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম, তেমনি সকল বাণীর ওপর কোরআনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়। মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তার মধ্যে কুরআন পাঠ সর্বাধিক উত্তম। এখানে কিছু ফজিলত বর্ণিত হচ্ছে—
কোরআন পাঠের প্রতিদান : রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের একটি অক্ষর পড়বে, সে একটি নেকী পাবে। আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমপরিমাণ। (তিরমিজি)
কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ, যে আল কোরআন নিজে শেখে ও অন্যকে শেখায়’ (বোখারি)।
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পড়ানো এবং তেলাওয়াতের কারণে আমার কাছে কিছু চাইতে পারল না, আমি তাকে প্রার্থনাকারীর চেয়েও বেশি দান করি।’
রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে হৃদয়ে আল কোরআনের কোনো অংশ নেই, সে হৃদয় বিরান গৃহের ন্যায়।’
কোরআন শিক্ষা করা, মুখস্থ করা ও তাতে দক্ষতা লাভ করার ফজিলত : নবী করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্থ করবে এবং (বিধি-বিধানের) প্রতি যত্নবান হবে, সে উচ্চ-সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কুরআন পাঠ করবে এবং তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হবে। (বুখারী, মুসলিম)
অন্যত্র তিনি আরও বলেন, কিয়ামত দিবসে কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পড় এবং উপরে উঠো। যেভাবে দুনিয়াতে দরদের সাথে কোরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চ স্থানে হবে তোমার বাসস্থান। (তিরমিজি)
ইমাম খাত্তাবী (রহ.) বলেন হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতের সিঁড়ির সংখ্যা হচ্ছে কুআনের আয়াতের সংখ্যা পরিমাণ। কোরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি যতটুকু কোরআন পড়েছ ততটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠ। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কোরআন পড়েছে, সে আখেরাতে জান্নাতের সবশেষ সিঁড়ির ধাপে উঠে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনের কিছু অংশ পড়েছে সে ততটুকু উপরে উঠবে। অর্থাৎ যেখানে তার পড়া শেষ হবে সেখানে তার সওয়ারের শেষ সীমানা হবে।
যার সন্তানে আল-কোরআন শিক্ষা করবে তার প্রতিদান : নবী করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও তদানুযায়ী আমল করবে; তার পিতা-মাতাকে দু’টি পোশাক পরিধান করান হবে, যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মূল্যবান। তারা বলবে, কোন্ আমলের কারণে আমাদেরকে এত মূল্যবান পোশাক পরানো হয়েছে? বলা হবে, তোমাদের সন্তানের কোরআন গ্রহণ করার কারণে। (হাকেম)
পরকালে কোরআন সুপারিশ করবে : রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কোরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে। (মুসলিম)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্র রাসূল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য আল্লাহ্র কাছে সুপারিশ করবে। (আহমাদ, হাকেম)
কোরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং কোরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার জন্য একত্রিত হওয়ার ফজিলত: রাসূল (সা.) বলেন, কোনো সম্পদ্রায় যদি আল্লাহ্র কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে কোরআন পাঠ করে এবং তা পরস্পরে শিক্ষা লাভ করে, তবে তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল হয়, আল্লাহ্র রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে। আল্লাহ্ তাঁর নিকটস্থ ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা আলোচনা করেন। (মুসলিম)
২৪ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ/ রাসেল/মাহমুদ
�