ইসলাম ডেস্ক : বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হযরত ফাতেমা জাহরা (রা.)কে সব যুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁকে দেখলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন তিনি।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতেমাকে কষ্ট দেয় তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়। হযরত ফাতিমা (রা.) বেহেশতে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী (সা.) উল্লেখ করেছেন।
হযরত ফাতেমা জাহরা (রা.) ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানবজাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। আর এ জন্যই তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ, আল- মোবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত, আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র, আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আয যাকিয়া বা সতী, আয জাহরা বা দ্যুতিময় প্রভৃতি।
স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবী (সা.)’র সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা (রা.)’র অন্য একটি নাম উম্মে আবিহা বা পিতার জননী।
একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হিসেবে হযরত ফাতিমা (রা.)এটা প্রমাণ করেছেন যে, পরিপূর্ণতার শিখরে ওঠার জন্য নারী হওয়া বা পুরুষ হওয়া জরুরি কোনো শর্ত নয়। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এমন এক যুগে যখন আরবরা নারীকে মনে করতো কেবল ভোগের সামগ্রী এবং জাত্যাভিমানী আরবদের ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা অমর্যাদার ভয়ে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত বা গোপনে মেরে ফেলতো।
কিন্তু মহান আল্লাহ তার সর্বশেষ রাসূল (সা.) ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ঘরে একজন কন্যা সন্তান পাঠিয়ে নারী জাতির জন্য অশেষ সম্মান ও মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।
হযরত ফাতিমা (রা.) ছিলেন একজন আদর্শ জননী, একজন আদর্শ স্ত্রী বা গৃহিণী, একজন আদর্শ সমাজসেবিকা। অর্থাৎ মুসলিম নারী যে শালীনতা বজায় রেখে জীবনের সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাঁর দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন নবী-নন্দিনী।
হযরত ফাতিমা (রা.)’র সান্নিধ্য ও সেবা না পেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)’র জীবনও পুরোপুরি বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করতো না। তাঁরা ছিলেন একে অপরের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত ফাতিমা (রা.)-কে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা বলেও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন, আমি যখনই বেহেশতের সুবাস পেতে চাইতাম তখনই কন্যা ফাতেমার ঘ্রাণ নেই। রাসূল (সা.) একবার প্রাণপ্রিয় কন্যাকে বলেছিলেন, ‘হে ফাতেমা! আল্লাহ তোমাকে নির্বাচিত করেছেন, তোমাকে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সজ্জিত করেছেন এবং তোমাকে বিশ্বের নারীকূলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
হযরত ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘একবার শুক্রবার রাতে দেখলাম মা ফাতিমা (রা.) এবাদতে মগ্ন। একটানা রুকু ও আর সেজদায় থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে উঠলো। আমি শুনতে পেলাম, তিনি মুমিন নারী ও পুরুষের জন্য অনেক দোয়া করছেন, কিন্তু নিজের জন্য কোনো দোয়াই করলেন না।
আমি প্রশ্ন করলাম, মা, আপনি কেন নিজের জন্য দোয়া করলেন না, যেভাবে অন্যরা দোয়া করে থাকে? তিনি জবাবে বললেন, ‘হে আমার পুত্র! আগে প্রতিবেশির কথা ভাবতে হবে, এরপর নিজের ঘরের কথা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরিব-দুখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (রা.)’র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যেকোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সা.)’র আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপস করেননি।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (সা.) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই।
নবী-নন্দিনী (রা.) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সা.)’র চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। পবিত্র কোরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদের মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়।
০৬ ফেব্রুয়ারি২০১৪/এমটিনিউজ২৪/এসএম/এমআর/