রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৫৬:২৩

নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েত করেন না

নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েত করেন না

ইসলাম ডেস্ক : ১০ম হিজরী সনে হজ পালনের উদ্দেশ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবীদের সাথে নিয়ে মদিনা শহর থেকে মক্কায় হেরেম শরীফে আগমন করেন এবং হজের আনুষ্ঠানিকতা পরিপূর্ণভাবে পালন করেন। তিনি সঙ্গী সাহাবীদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণদান করেন, যা বিদায় হজ্জের ভাষণ নামে পরিচিত।

মক্কায় অবস্থিত সবাইকে বিদায় সম্ভাষণ করে নিজে এহরামের পোশাক না  ছেড়ে মদিনার পথে রওনা হলেন। প্রায় সোয়া লাখ সাহাবী তাঁর সহযাত্রী ছিলেন।

পথেমধ্যে গাদীরে খোম নামক স্থানে মহানবী (সা.) সাহাবীদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য আদেশদান করলেন। তারিখটি ছিল ১০ম হিজরীর ১৮ই জিলহজ্ব।
 
রাসুলে পাক (সা.) সঙ্গীসাথী সাহাবীদের নিয়ে সেখানে থেমে গেলেন এবং বাহন হতে নেমে গেলেন। কাফেলা অগ্রবর্তী এবং পশ্চাদবর্তী সেইখানেই (গাদীর -এ খুম এলাকায়)।

হযরত আলী (রা.) এর অভিষেক ক্রিয়া সম্পাদন করার ব্যবস্থা করলেন। উটের উপর বসার কয়েকটি আসন, একের পর এক স্থাপন করে মিম্বার তৈরি করা হলো।

সাহাবী বারায়া ইবনে আজেব (রা.) এবং জায়েদ ইবনে আকরাম (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) উটের উপর উঠিয়া সাহাবীদের নিকট অবর্তীণ বাণী পেশ করিলেন।

তখন এ আয়াত নাজিল হইল, ‘হে রাসুল (সা.) পৌঁছাইয়া দিন। যাহা আপনার রব হইতে নাজিল হয়েছে। আর যদি তা না করা হয়; তাহলে তো আল্লাহর রেসালত পূর্ণভাবে পৌঁছে দেয়া হইল না। শ্রীঘ্রই আপনাকে মানবম-লী হতে নিয়ে আসবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েত করেন না।  [সুরা : মায়েদা ঃ আয়াত ৬৭]   

 অতঃপর হযরত মুহাম্মদ (সা.), হযরত আলী (রা.) এর হাত মোবারক ধরিলেন এবং বলিলেন, তোমরা কি জান না যে, আমি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), মুমিন বান্দাদের নিকট নিজের দিক হইতে অধিক আওলা?  ( অথার্থ মুমিন বান্দাদের জীবনের চেয়েও প্রিয়)।

 সহাাবীরা সাক্ষ্য দিল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনি আমাদের প্রাণাধিক (জীবনের চেয়ে) প্রিয়।

তারপর মহানবী (সা.) হয়রত আলী (রা.) এর দুই বাহু ধরিয়া সাহাবীদের সম্মুখে তাহাকে (হযরত আলী (রা.) শূন্যে তুলিয়া ধরিলেন এবং বলিলেন, ‘মান কুনতুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু, আল্লাহুম্মা ওয়ালে মান ওয়ালিহু। আাদা মান আদহু, আনসুর মান নাসার, অখজুল মান খাঁজালা, ফাল ইয়াস হাদিল্ হাজেরুল খায়েরা।’

অর্থ ঃ আমি মহানবী (সা. ) যার মওলা, আলী (রা.) ও তাহার মাওলা। হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি হযরত আলী (রা.) কে বন্ধু রূপে মনেপ্রাণে গ্রহণ করে; আল্লাহ তুমিও তাহাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করিও এবং যে ব্যক্তি হযরত আলী (রা.) এর সাথে শুত্রুতা করে তুমিও আল্লাহ তাহার সাথে শুত্রুতা পোষণ কর।

এবং সাহায্য কর তাহাকে যে ব্যক্তি হযরত আলী (রা.) কে সাহায্য করে, লাঞ্ছনা দাও তাহাকে যে হযরত আলী (রা.) কে লাঞ্ছনা দেয়।

 অতপর সাহাবী হযরত ওমর ফারুক হযরত আলী (রা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন এবং হযরত আলী (রা.) কে অভিনন্দন করিয়া, বলিলেন, হে আবু তালেবর সন্তান (হযরত আলী (রা.) প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর মাওলা হিসেবে অভিনন্দিত হইয়া, সকাল ও সন্ধা অতিবাহিত করিবেন।

আল হাদীস মেশকাত ৪র্থ খ- পৃষ্ঠা ৫৪৮ অনুবাদ ফজলুল করিম। মসনদে আহম্মদ ইবনে হাম্বল ৪র্থ খ- পৃষ্ঠা-২৮১:
তাফশীরে কাশ্শাফ। তাফসীরে দোরার মনসুর, আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়তী ২য় খ- মিশল]

সহি মুসলিম ২য় খ- পৃষ্ঠা-৩৬২, মোসতাদারাক হাকীম, ২য় খ- পৃষ্ঠা: ১০৯। নোট : ঐতিহাসিক এ হাদিসের বাণী কমপক্ষে ১১০ জন সাহাবা, ৮৪ জন তাবিঈন, ৩৫৫ জন ওলামা, ২৫ জন ঐতিহাসিক,  ২৭জন হাদীস সংগ্রাহক, ১১ জন ফিকাহবিদ, ১৮ জন ধর্মতাত্ত্বিক ও ৫ জন ভাষা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।

এভাবে যখন হযরত আলী (রা.) এর মাওলা হিসেবে প্রতিনিধিত্বের বায়াত  সম্পন্ন হলো তখন পবিত্র কোরআনের শেষ আয়াতটি নাযিল হলো ‘আজ কাফেরগণ তোমাদের দ্বীন হতে নিরাশ হয়ে গেছে’। অতএব তাদের ভয় কর না। আমি আল্লাহ আজ তোমাদের দ্বীন (ইসলাম) ধর্মকে পূর্ণ করে দিলাম। এবং তোমাদের দ্বীনের উপর রাজিখুশি হয়ে গেলাম। (সুরা মায়েদা আয়াত-৩)

উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) এর দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ায় ঘোষণা এবং তাহার উপর আল্লাহর নেয়ামত দান করার বিষয়টি সম্পন্ন হলো। তাই প্রিয় নবীজী (সা.) আল্লাহর নিকট এই বলে শোকরিয়া আদায় করলেন, আল্লাহ আকবর, আল হামদুলিল্লাহ আলা আকমালে দ্বীন। ওয়া এতমামেন নেয়ামতিন, ওয়া রেজা বে রাব্বি  আলা-রেসালাতী ওয়া বেলায়াতি আলী ইবনে, আবু তালেব (রা.)।

অর্থাৎ আল্লাহ মহান, তাঁর দ্বীন ইসলাম কে কামেল করে দেওয়ার উপর এবং নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার উপর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং  আমার (মহানবী হযরতা মুহাম্মদ (সা.) রেসালতের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং আবু তালেব নন্দন হযরত আলী (রা.) এর বেলায়েতের জন্য এবং আবু তালেব নন্দন  হযরত আলী (রা.) বেলায়েতের জন্য সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।

সূত্র : মাওলার অভিষেক সদর উদ্দিন চিশতী পৃ:-৭

রাসুল (সা.) এর এই ভাবের উপর আল্লাহর যে নির্দেশ হয়েছিল তার টিকা করতে গিয়ে তফশীরে কাশশাফ লিখেছেন, হজ্বছে  যাব তুম ফারেগ হো , তব আলী (রা.) কে শেকাররার কর দো।

হে আল্লাহ, আমাদেরকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওসিলায় আমাদের অন্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি, আহালে বায়াতের, ইমাম হাসান (রা.), ইমাম হোসাইন (রা.) মা ফতেমা (রা.) মাওলা আলী শেরে খোদার প্রতি মহব্বতের সরাব পান করান এবং মহানবী (সা.) ও আহালে বায়াতের নিকট আনুগত্য স্বীকার করার তাওফিক দান করুন । (আমিন)

লেখক : খাঁজা মুহাম্মদ রহমান (কনক সাঁই)

২৭ মার্চ২০১৪/এমটিনিউজ২৪/প্রতিবেদক/এসআর/এসএম/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে