ওমর শাহ: বিভিন্ন বর্ণনায় সাব্যস্ত হয়েছে যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানাযার নামায একাকী আদায় করেছিলেন; জামাতের সাথে আদায় করেননি। আবু আসিব কিংবা আবু আসিম (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে: “তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানাযার নামাযে হাযির হয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম বলল: আমরা কিভাবে উনার জানাযা নামায আদায় করব? তিনি বললেন: আপনারা দলে দলে প্রবেশ করুন। তিনি বলেন: তারা এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাঁর জানাযার নামায আদায় করে ঐ দরজা দিয়ে বের হতেন।”। [মুসনাদে আহমাদ (৩৪/৩৬৫), রিসালা প্রকাশনী]
ইবনে আব্দুল বার (রহ.) বলেন, “তাঁর উপর অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, একাকী নামায পড়ার বিষয়টি সিরাত লেখকগণ ও একদল রেওয়ায়েত সংকলকদের সর্বসম্মত অভিমত; এ ব্যাপারে তারা মতভেদ করেননি।” [তামহিদ
দুই:
আলেমগণ সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানাযার নামায একাকী আদায় করার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন:
প্রথম কারণ: কোন কোন আলেম বলেছেন: এর কারণ হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরামের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওসিয়ত ছিল আলাদা আলাদাভাবে তার জানাযার নামায আদায় করার। কিন্তু সহিহ সনদে এ বিষয়টি সাব্যস্ত হয়নি। বরং কিছু দুর্বল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
সুহাইলি (রহঃ) বলেন:
এটি নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়। এ আমল কুরআন-সুন্নাহ্র সরাসরি দলিল ছাড়া হতে পারে না। এছাড়া বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মর্মে ওসিয়ত করে গেছেন। তাবারী সনদসহ তা বর্ণনা করেছেন। এর তাত্ত্বিক কারণ হল: আল্লাহ্ তাআলা তাঁর উপর সালাত পড়া এই বাণীর মাধ্যমে ফরয করে দিয়েছেন: ( صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً ) الأحزاب/৫৬، (তোমরাও তাঁর উপর সালাত এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ কর।) [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬] এই আয়াতে যে ‘সালাত’ পড়ার কথা বলা হচ্ছে সে সালাত (দরুদ) পড়ার হুকুম হচ্ছে- ইমাম ব্যতীত। তাঁর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তাঁর উপরে সালাত (জানাযার নামায) পড়াও এই আয়াতের ভাষ্যে অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে কারীমাটি এই সালাত (জানাযা-নামায) ও সার্বক্ষণিক তাঁর উপরে সালাত (দরুদ) উভয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করে। [সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত][আর-রওযুল উনুফ (৭/৫৯৪-৫৯৫)]
দ্বিতীয় কারণ: এই মর্যাদা অর্জন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানাযার নামাযের ইমামতি এর ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের পারস্পারিক তীব্র প্রতিযোগিতা। যার কারণ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাদের তীব্র ভালবাসা। এ ভালবাসার সাথে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাদের সর্বশেষ নিকটবর্তী অবস্থানের ক্ষেত্রে অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া বা সুযোগ দেয়া সাজে না; বরং প্রতিযোগিতা করা এবং ঢেলাঢেলি করাই সাজে। বিশেষতঃ যেহেতু খলিফা বা ইমামের বিষয়টি তখন পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি এবং কোন ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহ্র দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন তাকে তখনও চেনা যায়নি যে, তিনি এগিয়ে গিয়ে ইমামতির দায়িত্ব নিবেন। তাই তারা মুসলমানদের ঐক্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং একজন ব্যক্তির উপর তাদের সকলের সিদ্ধান্ত এক হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন; যাতে করে তিনিই অনুসৃত ইমাম হতে পারেন। কারণ খলিফাই তো নামাযের ইমামতি জন্য এগিয়ে যেতেন।
ইমাম শাফেয়ি (রহঃ) বলেন, “সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানাযার নামায একাকী আদায় করেছিলেন কেউ ইমামতি করেনি সেটা রাসূলের মহান মর্যাদার কারণে এবং একক ব্যক্তি যেন রাসূলের জানাযা নামাযের ইমাম না হয় তাদের পারস্পারিক এই প্রতিযোগিতার কারণে।” [আল-উম্ম (১/৩১৪)]
ইমাম রামলি (রহঃ) ইমাম শাফেয়ি (রহঃ) এর উক্তিটি উদ্ধৃত করার পর বলেন: “কেননা তখনও উম্মাহ্র নেতৃত্ব দেয়ার জন্য কোন ইমাম নির্ধারিত হয়নি। যদি কেউ নামাযের ইমামতির জন্য এগিয়ে যান তাহলে সবক্ষেত্রে তিনিই হবেন অগ্রণী এবং খিলাফতের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।”[সমাপ্ত][নিহায়াতুল মুহতাজ (২/৪৮২)]
তৃতীয় কারণ: সাহাবায়ে কেরামের মাঝে কারো মুক্তাদি না হয়ে একাকী ও বিশেষভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জানাযার নামায আদায় করার মাধ্যমে বরকত লাভের প্রতিযোগিতা। সওয়াব ও বরকত লাভের জন্য তাদের কেউ তার মাঝে ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝে অন্য কেউ মাধ্যম হোক এটা গ্রহণ করেননি।
এই কারণগুলো আলেমগণ উল্লেখ করে থাকেন। কিন্তু, এর মধ্যে কোন একটি কারণকেও নিশ্চিত করা আমাদের কাছে পরিস্ফুট নয়।
হতে পারে উল্লেখিত সবগুলো কারণের পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা কোন একটি কারণের পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ্ িওয়া সাল্লামের জানাযার নামায একাকী আদায় করেছেন। আবার এও হতে পারে আমরা যে কারণগুলো উল্লেখ করেছি সেগুলো ছাড়া ভিন্ন কোন কারণে তারা তা করেছেন। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ। সূত্র: ইসলামকিউএ.কম