রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৪৪:৩০

সুস্থ থেকে হজ পালন

সুস্থ থেকে হজ পালন

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমুঃ প্রতিবছরের মত এবারও আমাদের দেশের ধর্মপ্রান হাজিরা হজ পালন করতে পবিত্র মক্কা নগরীতে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের সাথে সৌদি আরবের আবহাওয়ার বেশ পার্থক্যের কারণে হাজিরা নানান ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েন। সেখানে ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক ও ইনফ্লুয়েঞ্জার সমস্যা দেখা দেয় বেশি। সুস্থ থাকতে মেনে চলুন স্বাস্থ্যবিধি।

    
চিকিৎসকের মাধ্যমে পুরোপুরি চেক আপ করিয়ে নিন।  আপনার কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে বা নতুন করে কোন ওষুধ পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে চিকিৎসক আপনাকে পরিবর্তন করে দিবেন। হজ্বে যাওয়ার আগে সরকার থেকে চেকআপের ব্যবস্থা ও মেনিনজাইটিস ও ফ্লুর টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, টাইফয়েড, টিটেনাসের টিকাও দিতে পারেন।

হজ একটি কঠোর পরিশ্রমের কাজ। কঠোর পরিশ্রম শরীর সহ্য করতে পারে এমন বয়সে হজ্বে যাওয়া ভাল। আগে থেকে হাঁটার অভ্যাস  না থাকলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। হজ্বে যাওয়ার আগে প্রতিদিন একটু একটু করে হাটার অভ্যাস করে তুলুন এবং প্রতিদিন হাঁটার সময় বাড়িয়ে দিন। পায়ে যেন কোনভাবে ক্ষত না হয় সেজন্য সচেতন থাকতে হয়। এজন্য পায়ে লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
অনেকক্ষন ধরে বিমানে বসে থাকার ফলে পায়ে পানি জমে যেতে পারে বা পা ফুলে যেতে পারে। এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য বিমানে ভ্রমনের সময় পায়ে চাপ দেয় রাবারের তৈরী এমন কিছু পড়তে পারেন। ঢিলেঢালা জামা পরিধান করুন ও বিমানে প্রচুর পানি পান করুন। প্রতি ঘন্টায় বিমানে কিছুক্ষনের জন্য দাঁড়ান ও হাত পা নাড়াচড়া করুন। পায়ের উপর পা তুলে বসবেন না।  
রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় অনেক খাবার বিক্রি করতে দেখা যায় এ খাবারগুলো খাবেন না। এগুলো থেকে হতে পােের ডায়রিয়া। মক্কা ও মদিনায় ওজু করার স্থানে ওজু করার পাত্রে করে জমজমের পানি অনেকই পান করেন। এতে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ হতে পারে। পানি পানের জন্য একবার ব্যবহার করা যায় এমন পাত্র ব্যবহার করুন।


গরমের মধ্যে আপনার ত্বকে বিভিন্ন ধরনের র‌্যাশ হতে পারে। পেট্রোলিয়াম জেলী লাগাতে পারেন। রোদে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে সানস্ত্রিন ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন আপনার সানস্ক্রিনে সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর যেন ৩০-এর উপর হয়। রোদে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। পাওয়ার যুক্ত চশমা পড়লে তা অটোসান করে নিন। বাইরে বেরোলে মাথায় স্কার্ফ জাতীয় লম্বা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিন। সুতি ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করুন।


হজ্বের সময় সরচেয়ে যে সমস্যা বেশি দেখা দেয় তাহল শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন। এক্ষেত্রে জ্বর. কাশি, গলায় খুস খুস, গলায় ক্ষত, নাক দিয়ে পানি ঝরা,শরীর ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। এ সমস্যা সমাধানে প্রচুর পানি পান করুন। জ্বর ও ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল, লবণ দিয়ে গরম পানি গড়গড়া ও গরম পানি পান করুন। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। বাইরে থেকে এসেই হাত-মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ক্স    ডায়াবেটিস রোগীরা হজ্বে যাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসের পরামর্শ নিন। আপনার ওষুধ বা ইনসুলিন নিলে তার ডোজ পরিবর্তন করতে হবে কিনা জেনে নিন। হজ্বে থাকার সময়ও নিয়ম করে ওষুধ সেবন করুন বা ইনসুলিন নিন। সব সময় সাথে মধু বা মিষ্টি জাতীয় খাবার সাথে রাখুন। যদি আপনার অতিরিক্ত দূর্বলতা, অতিরিক্ত ঘাম, প্যালপিটিশন বা অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন হয় তাহলে দ্রুত মিষ্টি জাতীয় খাবার খান।


হজ্বের সময় হাজিরা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। হিটস্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই আক্রান্ত ব্যাক্তিকে রোদ থেকে সরিয়ে ঠান্ডা জায়গায় নিতে হবে। শরীরের কাপড় যতটুকু সম্ভব খুলে ফেলে শরীরে ঠান্ড পানি ঢালতে হবে তবে বরফ শীতল পানি ঢালা যাবে না কারন এতে করে রক্তনালীগুলো সংকোচনের ফলে দেহের তাপমাত্রা কমার পরিবর্তে আরোও বাড়বে, রোগীর অবস্থা আরোও খারাপ হবে। রোগীকে বাতাস করতে হবে। কুচকি ও বোগলের নিচে আইস প্যাক রাখলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসবে। হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পাবার জন্য একটানা শারীরিক পরিশ্রম করবেন না বা লম্বা সময়ের জন্য হাঁটবেন না। হজ্বের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাঝে সময় পেলেই ঠান্ডা জায়গায় বসে কিছুক্ষনের জন্য বিশ্রাম করুন। রোদে বেরুলে অবশ্যই ছাতা নিবেন। সবসময় বেশি বেশি করে পানি, শরবত, স্যালাইন ও ফলের জুস পান করতে হবে। ভীড়ের মধ্যে যাবেন না। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। হিটস্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দিলে ভীড় থেকে সরে যান।
সঙ্গে রাখুন কাশির ওষুধ ,খাবার স্যালাইন, দরকারি অ্যান্টিবায়োটিক, এন্টিবায়োটিক ওয়েন্টমেন্ট, কাটাছেড়ার জন্য পভিডন আয়োডিন, স্যাভলন, ব্যান্ডেজ, কটন, প্যারাসিটামল ও কিছু ব্যথানাশক ওষুধ যেমন, ডাইক্লোফেনাক, কিটোরোলাক, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ওমিপ্রাজল। আপনি যে সব ওষুধ নিয়মিত সেবন করেন সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমানে দেশ থেকে নিয়ে যান। আপানার সাথে আপনার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র সাথে রাখুন। কোন সমস্যা হলে হজ এজেন্ট ও সৌদি মেডিকেল সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করুন।
২৬আগস্ট,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/ এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে