জহিরুল ইসলাম আব্দুল্লাহ: পথহারা মানুষকে পথের দিশা দিতে, অন্ধকারে আলোর মশাল জ্বালাতে আল্লাহপাক বহু কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যেমন: হযরত মুসা (আ.) এর উপর তাওরাত, হযরত দাউদ (আ.) এর উপর যাবুর এবং হযরত ঈসা (আ.) এর উপর ইঞ্জিল। তারই ধারাবাহিকতায়, বিশ্ব মানবতা যখন পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকারে নিমজ্জিত, আদর্শহীন নেতৃত্বের দরুন সমগ্র জাতি যখন হতাশাগ্রস্থ, অন্যায়-অত্যাচার, কুসংস্কার, মূর্খথা, বর্বরতা, বর্ণবাদ-জাতিভেদ প্রথার ছোঁবলে ডুকরে কেঁদে ফিরছিল মজলুম জনতা,এমনি এক ক্লান্তিলগ্নে আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর অবতীর্ণ করেছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট চূড়ান্ত আসমানী কিতাব আল কুরআন।
পৃথিবীর একমাত্র অপরিবর্তিত ও অবিকৃত গ্রন্থ হলো আল কুরআন। পবিত্র কুরআনুল কারিম নাযিলের দেড় হাজার বছর পরেও এর একটি অক্ষর, হরফ কিম্বা সাকিনেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজ পর্যন্ত কেউ কোরআনকে পরিবর্তন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন : আমি পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি আর আমি নিজেই তার সংরক্ষন করবো (সূরা হিজর:০৯)। যতদিন পর্যন্ত পৃথিবী থাকবে ততদিন পর্যন্ত পবিত্র কুরআন অবিকৃত অবস্থায় টিকে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন ‘আল্লাহর বাণীতে কোনো রকম পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয় না’ (সূরা ইউনুস :৬৪)।
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে’ আর এটা সম্মানিত কিতাব যার সামনের দিক থেকে কিংবা পিছনের দিক থেকে বাতিল প্রবেশ করতে পারে না। প্রশংসিত প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ (সূরা ফুসসিলাত :৪২)। শুধু অপরিবর্তিত ও অবিকৃত নয় বরং একদম নির্ভুল কিতাব হলো আল কোরআন। যার মধ্যে কোন ভুল খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং যারাই কুরআনে ভুল খুঁজতে এসেছে তারাই কোরআনের আলোয় নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে পেরে ফ্রান্সের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড.মরিস বুকাইলি, কানাডার সাবেক খ্রিস্টধর্ম প্রচারক অধ্যাপক ড.গ্যারি মিলার এর মত কালেমা পড়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। (দৈনিক যুগান্তর : ৩০ মার্চ,২০১৮)।
কুরআনের ঐশী গুরুত্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে-যেহেতু কুরআন তার প্রতিপক্ষ কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, আমার প্রিয় বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি সে ব্যাপারে যদি তোমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে নিমজ্জিত থাকো তবে তার (কুরআনের) সাদৃশ একটি মাত্র সূরা তোমরা লিখে নিয়ে আসো। আর (এ কাজের জন্য) তোমরা আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অন্যান্য সহযোগীদের আহবান কর, যদি তোমরা তোমাদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো। আর যদি তোমরা তা করতে না পারো। আর তোমরা তা কস্মিণকালেও করতে পারবে না (সূরা বাকারা:২৩-২৪)।অতএব, কোরআন কালোত্তীর্ণ, চিরন্তন,চির নতুন। কালের আবর্তনে তার নতুনত্ব পুরাতন হয় না।
মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে এনে সত্যের দিশা দিতে এবং সঠিক পথে চালাতে মহান আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। সে কারণে পবিত্র কুরআন আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। যেমনটি হাদিসে এসেছে হযরত মালেক বিন আনাস (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল ( সা) বলেন ‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ‘আল কোরআন’ এবং তাঁর রাসূলের (সা) এর সুন্নাহ ‘হাদীস’ ( মুয়াত্তা মালেক)।
লেখক : শিক্ষার্থী, হাদীস বিভাগ, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা,টঙ্গী, গাজীপুর।