রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:১৪:৩৬

অনাদায়কৃত সালাত আদায়ের সঠিক নিয়ম

অনাদায়কৃত সালাত আদায়ের সঠিক নিয়ম

ইসলাম ডেস্ক: জানেন কি, যে ব্যক্তি কখনোই সালাত আদায় করেনি সেই ব্যক্তি কিভাবে কাযা সালাত আদায় করবে? অনেক সময় বিভিন্ন কারণে অনেকেরই সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ তা’য়ালা যেহেতু সালাতকে ফরয করেছেন, সেহেতু সঠিক সময়ে সালাত আদায় না করতে পারলেও পরে কাযা সালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। সালাত কখন কাযা হয় কিংবা কাযা সালাত কিভাবে আদায় করতে হয় এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে বর্ননা করা হলো-


প্রথম অবস্থা :
ঘুম বা ভুলে যাওয়ার মত শরিয়ত অনুমোদিত ওজরের কারণে যদি সালাত ছুটে যায়। এ অবস্থায় তার উপর ছুটে যাওয়া নামায কাযা করা ওয়াজিব। এর দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী:“যে ব্যক্তি সালাত আদায় করতে ভুলে গেছে অথবা সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে ছিল,এর কাফফারা হচ্ছে- সে যখনই তা মনে করবে তখনই সালাত আদায় করে নিবে।”[হাদিসটি ইমাম বুখারী (৫৭২) ও মুসলিম (৬৮৪) বর্ণনা করেছেন। হাদিসটির ভাষা ইমাম মুসলিমের]

মাযগুলো যে ধারাবাহিকতায় তার উপর ওয়াজিব ছিল সে ধারাবাহিকতায় তিনি কাযা করবেন। প্রথম নামাযটি প্রথমে আদায় করবেন। এর দলীল জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)এর হাদিস-“উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খন্দকের যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর এসে ক্বুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে দিতে বললেন: “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি আসরের সালাত আদায় করতে করতে সূর্য তো ডুবেই যাচ্ছিল!” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:“আল্লাহর শপথ, আমি তো এখনো আসরের সালাত আদায় করতে পারিনি।” তারপর আমরা উঠে বুত্বহান নামক উপত্যকায় গেলাম। সেখানে তিনি সালাতের জন্য ওজু করলেন। আমরাও সালাতের জন্য ওজু করলাম। তিনি যখন আসরের সালাত পড়ালেন তখন সূর্য ডুবে গেছে। আসরের পর তিনি মাগরিবের সালাত পড়ালেন।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (৫৭১) ও মুসলিম (৬৩১)]

দ্বিতীয় অবস্থা:
এমন ওজরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া যে সময় ব্যক্তির কোন হুঁশ থাকে না। যেমন-অজ্ঞান হওয়া। এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তিকে সালাতের বিধান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাই তাকে উক্ত সালাতের কাযা করতে হয় না।

গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে কোন এক ব্যক্তি কর্তৃক প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলাম। এর ফলে তিনমাস হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলাম। এ সময়ে আমার হুঁশ ছিল না। এ পুরো সময়ে আমি কোন সালাত আদায় করিনি। আমি কি এ সালাতগুলো কাযা করা থেকে অব্যাহতি পাব? নাকি আমাকে এ সালাতগুলো কাযা করতে হবে?

তাঁরা উত্তরে বলেন: “উল্লেখিত সময়ের সালাত কাযা করা থেকে আপনি অব্যাহতি পাবেন। কারণ তখন তো আপনার কোন হুঁশ ছিল না।” [উদ্ধৃতি সমাপ্ত]

তাঁদেরকে আরো প্রশ্ন করা হয়েছিল: যদি কেউ এক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে এবং এ পুরো সময়টাতে কোন সালাত আদায় না করে, তবে ইনি ছুটে যাওয়া সালাত কি পদ্ধতিতে আদায় করবেন?

তাঁরা উত্তরে বলেন: “এ সময়ে যে সালাতসমূহ বাদ গিয়েছে তা কাযা করতে হবে না। কারণ উল্লেখিত অবস্থায় তিনি বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির হুকুমের মধ্যে পড়েন। বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির উপর থেকে তো (শরয়ি বিধান আরোপের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।” [উদ্ধৃতি সমাপ্ত]

[গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (৬/২১)]

তৃতীয় অবস্থা :

ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওজর ছাড়া সালাত ত্যাগ করা, আর তা কেবল দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে:

এক:
সে যদি সালাতকে অস্বীকার করে, সালাত ফরজ হওয়াকে মেনে না নেয় তবে সে লোক কাফের- এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কারণ সে ইসলামের ভিতরে নেই। তাকে আগে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে, এরপর ইসলামের আরকান ও ওয়াজিবসমূহ পালন করতে হবে। আর কাফের থাকা অবস্থায় সে যে সালাতগুলো ত্যাগ করেছে সেগুলোর কাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব নয় ।

দুই:
সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে, তবে তার কাযা আদায় শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন সালাত ত্যাগ করেছিল তখন তার কোন গ্রহণযোগ্য ওজর ছিল না। আল্লাহ তো সুনির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করাকে তার উপর ফরজ করেছেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন :

“নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।”[সূরা নিসা, ৪ :১০৩]অর্থাৎ নামাযের সুনির্দিষ্ট সময় আছে। আরেকটি দলীল হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যা আমাদের শরিয়তভুক্ত নয়- তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (২৬৯৭) ও মুসলিম (১৭১৮)]

শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি ২৪ বছর বয়সের আগে সালাত আদায় করিনি। এখন আমি প্রতি ফরজ সালাতের সাথে আরেকবার ফরজ সালাত আদায় করি। আমার জন্য কি তা করা জায়েয? আমি কি এভাবেই চালিয়ে যাব নাকি আমার উপর অন্য কোন করণীয় আছে?

তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, সঠিক মতানুসারে তার উপর কোন কাযা নেই। বরং তাকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। কারণ সালাত ইসলামের একটি রুকন বা স্তম্ভ। সালাত ত্যাগ করা ভয়াবহ অপরাধসমূহের একটি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করা ‘বড় কুফর’- আলেমগণের দুইটি মতের মধ্যে এ মতটি অধিক বিশুদ্ধ। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সাব্যস্ত হয়েছে যে তিনি বলেছেন: “আমাদের ও তাদের (বিধর্মীদের) মাঝে পার্থক্য হলো সালাত। তাই যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করল সে কুফরি করলো।”[ইমাম আহমাদ ও সুনানের সংকলকগণ সহীহ সনদে বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন]

এবং তিনি আরো বলেছেন:“কোন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরে পতিত হওয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।”[হাদিসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদিস রয়েছে যাতে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়]

প্রিয় ভাই, এক্ষেত্রে আপনার উপর ওয়াজিব হলো আল্লাহর নিকট সত্যিকার অর্থে তওবা করা। আর তা হলো-(১)পূর্বে যা গত হয়েছে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া (২)সালাত ত্যাগ একেবারে ছেড়ে দেয়া এবং (৩)এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা যে, এ কাজে আপনি আর কখনও ফিরে যাবেন না। আর আপনাকে প্রতি সালাতের সাথে বা অন্য সালাতের সাথে কাযা আদায় করতে হবে না। বরং আপনাকে শুধু তওবা করতে হবে। সকল প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য। যে ব্যক্তি তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“হে মু’মিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা করো,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”[২৮ আন-নূর :৩১]

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেন :“পাপ থেকে তওবাকারী ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার মূলতঃই কোন পাপ নেই।”

তাই আপনাকে সত্যিকার অর্থে তওবা করতে হবে। নিজের নফসের সাথে হিসাব-নিকাশ করতে হবে।সঠিক সময়ে জামাতের সাথে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সদা-সচেষ্ট থাকতে হবে। আপনার দ্বারা যা যা হয়ে গেছে - সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে এবং বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আর আপনাকে কল্যাণের সুসংবাদ জানাই, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“আর যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং হিদায়েতের পথ অবলম্বন করে, নিশ্চয়ই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল।” [সূরা ত্বহা, ২০:৮২]
সূরা আল-ফুরক্বান এ শিরক, হত্যা, জিনা (ব্যভিচার) উল্লেখ করার পর আল্লাহ তাআলা বলেন:“আর যে তা করল সে পাপ করল। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়া হবে এবং সে সেখানে অপমানিত অবস্থায় চিরকাল অবস্থান করবে। তবে ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে; আল্লাহ তাদের খারাপ কাজসমূহকে ভাল কাজে পরিবর্তন করে দিবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়াময় ।”[সূরা আল-ফুরক্বান, আয়াত ২৫:৬৯-৭০]

আমরা আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে ও আপনাকে তাওফিক দান করেন, বিশুদ্ধ তওবা নসীব করেন ও সৎ পথে অবিচল রাখেন।”[মাজমূ ফাত্‌ওয়া শাইখ বিন বায (১০/৩২৯,৩৩০)]
২৫ আগস্ট,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে