ইসলাম ডেস্ক: প্রতিটি মানুষ মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কোনো না কোনো বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত। প্রত্যেকেরই একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ দায়বদ্ধতার বিষয়ে কিয়ামতের দিন প্রত্যেককেই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভোট একটি আমানত। আমানতের খেয়ানত করা বা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ।
রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি— যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তার খেয়ানত করে। (বুখারি, মুসলিম)।
নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে জনগণের খেদমতের সুযোগ দেয়া প্রত্যেকেরই ঈমানী দায়িত্ব। তবে কেউ যদি উপযুক্ত ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়া তাহলে সে আমানতের খেয়ানত করবে অর্থ্যাৎ কবিরা গুনাহ করবে।
এ প্রসঙ্গে অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই (কিয়ামতের দিন) তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম।
ভোট একটি মতামত, একটি রায় ও সাক্ষ্য বিশেষ। এটা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার নিকট গচ্ছিত আমানত। পবিত্র কুরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদার বান্দারা! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের আমানতেরও খিয়ানত করো না।’ -সূরা আল আনফাল : ২৭
ভোট প্রদানের অর্থ হল- দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে নিজের সমর্থন ও সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা দলকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনোনীত করা। তবে এক্ষেত্রে ইসলামে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষ্য প্রতিষ্ঠা করো।’ -সুরা আত তলাক : ২
অন্যত্র আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও।’ -সুরা আন নিসা : ১৩৫
অনেক সময় দেখা যায়, নির্বাচনের পূর্বে প্রার্থীরা জনগণকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে, প্রতিশ্রুতি শুনিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্ট করে থাকে। নির্বাচনের পরে কৃত প্রতিশ্রুতি পূরণে কোনো চেষ্টাই করতে দেখা যায় না। ফলে নাগরিকদের নানাবিধ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। কোনো দায়িত্বশীল নেতার আচরণ এমন হতে পারে না। এমন নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক করে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে দায়িত্বশীল মুসলিম জনপ্রতিনিধি, সে যদি তাদের সঙ্গে প্রতারণা এবং খিয়ানতকারী অবস্থায় মারা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা তার জান্নাতে প্রবেশ করা হরাম করে দেবেন।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
মনে রাখতে হবে, ভোটের বিষয়টি শুধু পার্থিব নয়, পরকালেও এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে ভোটারদের তাদের পবিত্র আমানত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।