ইসলাম ডেস্ক: যে ১০ সাহাবি দুনিয়ায় থাকতে বেহেশতে- ইসলামের ইতিহাসে নবী-রাসূলদের পর সাহাবাদের স্বীকৃতি। তারা অনুসরণীয়। আল্লাহতায়ালা তাদের চরিত্র সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সঙ্গে যারা আছে তারা কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদের রুকুকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে।
তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো- একটি চারাগাছের মতো, যে তার কচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের ওপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে- যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফেরদের ক্রোধান্বিত করতে পারেন।
তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।’ -সূরা আল ফাতহ: ২৯
আল্লাহতায়ালা সাহাবিদের সম্পর্কে আরও বলেন, ‘এই সম্পদ নিঃস্ব মুহাজিরদের জন্য ও যাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করেন। এরাই তো সত্যবাদী। আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিযরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে।
আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ -সূরা হাশর: ০৮-০৯
সাহাবিদের প্রশংসায় হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে তারাই সবচেয়ে নেক লোক, যাদের মাঝে আমি প্রেরিত হয়েছি। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে সেরা মানব আমার সাহাবারা। আরেক বর্ণনায় সাহাবাদের প্রতি ভালোবাসাকে ঈমানের চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবিদের গালাগাল করো না। কেননা তাদের এক মুহূর্তের (ইবাদতের) মর্যাদা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে বেশি।’- ইবনে মাজা: ১৬২
সামগ্রিক বিচারে সাহাবারা অন্যসব উম্মত অপেক্ষা উত্তম। তবে সাহাবাদের সবাই কিন্তু এক স্তরের নন। বরং কেউ কেউ মর্যাদায় অন্যদের চেয়ে উত্তম। তাদের নিজেদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে শ্রেণি ও স্তর রয়েছে।
নিম্নে তাদের ক্রমধারা উল্লেখ করা হলো-
সাহাবাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন চার খলিফা। অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আলী (রা.)।
এরপরের স্তরে আছেন দুনিয়ায় থেকে যারা বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।
বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হলো-
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা.), হযরত উসমান বিন আফফান (রা.), হযরত আলী বিন আবি তালিব (রা.), হযরত আবু উবাইদা বিন জাররাহ (রা.), হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.), হযরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.), হযরত যুবাইর বিন আওম (রা.), হযরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা.) ও হযরত সাঈদ বিন যায়েদ (রা.)।
জান্নাতের সুসংবাদ এই দশ সাহাবি সম্পর্কে হাদিসে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে। তাদের মর্যাদা সম্পর্কে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, যুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান জান্নাতি, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে যায়েদ জান্নাতি এবং আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)। -তিরমিজি
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (রা.) বলেন, আবু বকর, উমর, আলী, তালহা, যুবাইর, সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস, আবদুর রহমান বিন আওফ এবং সাঈদ বিন যায়েদ লড়াইয়ের ময়দানে রাসূল (সা.)-এর সামনে প্রথম সারিতে থাকতেন এবং নামাজের মধ্যে রাসূলের পিছনেই থাকতেন।