ইসলাম ডেস্ক: আমাদের সমাজে ধনী ও দরিদ্র এই দুই শ্রেণীর মানুষ বাস করে। ধনীরা তাদের অবস্থানকে মজবুত করার জন্য যেমন বেশি বেশি ধন-সম্পদ লাভের চেষ্টা করে; তেমনি দরিদ্ররা তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী হয়। কিন্তু এটা পরীক্ষিত সত্য যে, বেশি ধনসম্পদ থাকলেই মানুষ সুখী হতে পারে না। কারণ অতিরিক্ত ধন-সম্পদ মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে।
যাকে আল্লাহ ধন দিয়ে পরীক্ষা করেছেন সে যদি সম্পদের সঠিক ব্যবহার না করে এবং বিপথগামী হয় তাহলে তার জন্য সেটা কেয়ামতের দিন বিপদের কারণ হবে। আর যাকে মহান প্রভু দরিদ্র বানিয়ে অন্যের মুখাপেক্ষী করেছেন সে যদি সঠিক পথে চলতে পারে তাহলে জান্নাতে আগে প্রবেশ করবে। ধনীদের তুলনায় গরিবরা বেশি জান্নাতে যাবে।
এছাড়া ধন-সম্পদ মানুষকে অহংকারী করে তুলতে পারে। আল্লাহ তাআলা তো কে গরীব, কে ধনী, কে ফর্সা, কে কালো, কে সুন্দর কে কুৎসিত তা দেখবেন না। আল্লাহ তাআলা দেখবেন তার বান্দার অন্তর, আমল, আখলাক-চরিত্র। যারা ঈমানদার গরীব তারা ধনিদের থেকে পাঁচশত বছর আগে বেহেস্তে যাবে।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি বেহেশতের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলাম যে, তার অধিবাসীদের অধিকাংশই গরিব মিসকিন। আর দোজখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসী নারী।
অপর হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, অভাবগ্রস্ত লোকেরা ধনী লোকদের পাঁচশ বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে এবং তা হবে কেয়ামতের অর্ধ দিন (তিরমিজি)। আমরা জানি, কেয়ামতের একদিন দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান। তাই কেয়ামতের অর্ধদিন হলো দুনিয়ার পাঁচশ বছর। আর্থিকভাবে যারা দুর্বল প্রিয়নবী (সা.) তাদের প্রশংসা করেছেন।
হজরত আবু দারদা (রা.) নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, তোমাদের দুর্বলদের মধ্যে আমাকে তালাশ করবে। কেননা দুর্বলদের দরুণই তোমাদের (সবলদের) জীবিকা দান করা হয়। অথবা বলেছেন, সাহায্য দান করা হয় (আবু দাউদ)। গরিব ও অভাবী লোকেরা জান্নাতে বেশি যাবে।
আমাদের সমাজে অনেককে দেখা যায়, গরিবদের প্রতি বিদ্রূপ-উপহাস করে। তাদের হেয়প্রতিপন্ন করে। যা কোনোভাবেই উচিত নয়। হতে পারে সেই গরিব ব্যক্তিটি আল্লাহর দরবারে অনেক প্রিয়। হজরত সহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ দিয়ে গমন করল। তিনি তখন তার কাছে উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, যে লোকটি এই মাত্র চলে গেল তার সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে বলল যে, ইনি তো অন্যতম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। আল্লাহর কসম, ইনি এরূপ যোগ্য ব্যক্তি যে, যে কোনো পাত্রীর কাছে তার বিবাহের পয়গাম গেলে সে তার সঙ্গে বিবাহে রাজি হবে। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) কিছুক্ষণ নীরব রইলেন।
অতঃপর আর এক ব্যক্তি ওই স্থান দিয়ে চলে গেল। রসুলুল্লাহ (সা.) তার সম্পর্কেও কাছে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, এ লোক সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে বলল, এ ব্যক্তি তো এক দরিদ্র মুসলমান। সে তো এরূপ অযোগ্য যে, যে কোনো পাত্রীর প্রতি সে বিবাহের পয়গাম পাঠালে কেউই তা গ্রহণ করবে না। আর সে যদি কারও ব্যাপারে কোনো সুপারিশ করে তাও কবুল করা হবে না। সে কোনো কথা বললে সে কথাও শোনা হবে না। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি যার প্রশংসা করলে সারা জগৎ তার মতো লোকে পরিপূর্ণ থাকলেও তাদের সবার তুলনায় এ (গরিব) লোকটি উত্তম। যাকে তুমি অযোগ্য বলছ। (বোখারি, মুসলিম)।